ফ্রিডম বাংলা নিউজ

শনিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৪ |

EN

যমুনার বুকে তলিয়ে গেছে স্বরবানু-দুলু খাতুনের ভিটেমাটি

জেলা প্রতিনিধি | আপডেট: বুধবার, আগস্ট ১০, ২০২২

যমুনার বুকে তলিয়ে গেছে স্বরবানু-দুলু খাতুনের ভিটেমাটি
কলকল করে বয়ে চলা যমুনার ঘূর্ণিস্রোতে ধসে গেছে নদীর তীর রক্ষা বাঁধ। দুঃস্বপ্নের মত ভসভস করে তলিয়ে গেছে স্বামীহারা স্বরবানু আর বিধবা দুলু খাতুনদের বসতভিটা। স্বরবানু গালা ইউনিয়নের মাজ্জান গ্রামের বাসিন্দা। স্বামী মারা গেছেন একযুগ আগে। ছেলে ও মেয়েদের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে অন্যত্র বিয়ে করেননি আর। স্বামীর ভিটা আঁকড়ে ধরে অন্যের বাড়িতে এবং খেতে-খামারে কাজ করেই জীবিকা নির্বাহ করেন। কঠোর পরিশ্রম আর নিজের আত্মবিশ্বাস দিয়ে জীবন যুদ্ধে অপরাজেয় এই মা দুই মেয়ে ও ছেলেকে বিয়েও দিয়েছেন। কয়েক বছর আগে ছেলের স্ত্রীও মারা যায়। পরে ছেলেটা দ্বিতীয় বিয়ে করে জীবিকার তাগিদে চলে গেছেন শহরে। স্বরবানুর যেন দুঃখের দিন শেষ হওয়ার নয়। ছেলেটা অন্যত্র বিয়ে করে শহরে যাওয়ার সময় রেখে গেছেন ৪ বছর বয়সী সন্তান। এই ছোট্ট শিশুকে নিয়ে কোনরকমে খেয়ে পড়ে বেঁচে আছেন স্বরবানু। কিন্তু এইটুকু সুখও কপালে সইলো না। হঠাৎ করে বাড়িটাও যমুনা গর্ভে বিলীন হয়ে গেল। এরফলে খোলা আকাশের নীচে ভাঙা টিন মাথার উপর দিয়েই কোনরকম আশ্রয় নিয়েছেন সরকারি বাধের উপর। 

এদিকে দুলু খাতুনেরও দুনিয়ায় কেউ নেই। একমাত্র সম্বল বসতভিটাও চলে গেছে নদী গর্ভে। এখন তার দুচোখে কেবল যমুনার ¯্রােতের মত টলটলে অশ্রæ আর একরাশ কুয়াশা। 

অপরদিকে ৫৪ বছর বয়সী ইসমাইল হোসেন। সোনাতুনি ইউনিয়নের হাতকোড়া গ্রাম নদী গর্ভে চলে যাওয়ার পর ভিটেমাটি হাড়িয়ে একদশক আগে বাড়ি করেছিলেন যমুনার কোল ঘেষে। ভেবেছিলেন সরকার যেহেতু কোটি কোটি টাকা খরচ করে নদী তীর রক্ষা বাঁধ করেছেন এখন আর অন্তত বসতভিটা হারাতে হবে না। তাই তিনি শেষ বয়সে একটু নিশ্চিত জীবন যাপনের জন্য প্রায় পনেরো লাখ টাকা খরচ করে নির্মাণ করেছিলেন পাকা ঘর। কিন্তু তারও আর দুঃখের দিন শেষ হলোনা। একরাশ হতাশার মধ্যে সমস্ত স্বপ্ন ডুবিয়ে দিয়ে যখন যমুনা তীর রক্ষা বাঁধে ধস নামে তখন কেবল ঘরের কয়েকটি জানালা, দরজা আর আসবাবপত্র কোনক্রমে সরিয়ে নিতে পেরেছেন। আর নিরুপায় দেখেছেন কি করে সাধের বসতভিটা আস্তে আস্তে তলিয়ে যায় নদী গর্ভে।

এভাবেই রূপচাঁদ মোল্লা, এরশাদ মোল্লা, মজনু মোল্লা, আলী মোল্লা, আমদ আলী মোল্লা, বাতেন মোল্লাসহ অর্ধশতাধিক মানুষ কোনক্রমে ঘরের চাল খুলে নিয়ে খুজে ফিরছেন আশ্রয়। 

সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, ২০১২ সালে ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে কৈজুরী থেকে বিনোটিয়া পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার লম্বা বাঁধ নির্মাণ করা হয়। সেই শতকোটি টাকার বাঁধে একদশক যেতে না যেতেই বিভিন্ন জায়গায় নেমেছে ধস। হুমকির মুখে পড়েছে হাজার হাজার বাড়িঘর ও প্রতিষ্ঠান।

স্থানীয় গালা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বাতেন জানিয়েছেন, গত শুস্ক মৌসুমে নদীতীর রক্ষা বাঁধের খুব কাছ থেকে ‘অবৈধভাবে’ ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করা হয়েছিল। “সেই সময় বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডকে লিখিতভাবে জানালেও তারা কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি; যে কারণে বর্ষা মৌসুমে ওই স্থানগুলোতে সিসি বøকের নিচ থেকে বালু ও জিওব্যাগ সরে গিয়ে ধসের সৃষ্টি হয়েছে।” অথচ এই বাঁধের পাশেই তিন বছর আগে ১৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মান করা হয়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ।
আর মাত্র ৪০/৫০ মিটার ভাঙলেই বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধেও ধস দেখা দিতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন এই চেয়ারম্যান।

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বরত ইঞ্জিনিয়ার শাহীন কামালের সাথে। তিনি জানান, ভাঙন শুরু হওয়ার সাথে সাথেই আমরা জিও ব্যাগ ফেলা শুরু করেছি। আশাকরি আমরা পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারবো।

ভাঙন কবলিত এলাকায় থাকা পানি উন্নয়ন বোর্ড, সিরাজগঞ্জের কার্যসহকারি মোঃ নুরুল ইসলাম জানান, নদীতে তীব্র ¯্রােত থাকায় হঠাৎ করেই ধস শুরু হয়। তবে আমরা ভাঙন ঠেকাতে সাথে সাথেই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। 

এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ তরিকুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আমাকে জানানোর পর সাথে সাথে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেছি। ইতোমধ্যেই তারা জিও ব্যাগ ফেলতে শুরু করেছে।