Can't found in the image content. নেই কোনও মামলা, তবু ৩ বছর ধরে কারাগারে | ফ্রিডম বাংলা নিউজ
ফ্রিডম বাংলা নিউজ

বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ২৬, ২০২৪ |

EN

নেই কোনও মামলা, তবু ৩ বছর ধরে কারাগারে

নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: শুক্রবার, আগস্ট ৫, ২০২২

নেই কোনও মামলা, তবু ৩ বছর ধরে কারাগারে
তার বিরুদ্ধে থানায় কোনও মামলা নেই। এমনকি কোনও মামলায় আদালত থেকে সাজাপ্রাপ্তও নন। শুধু একটি সাধারণ ডায়েরির (জিডি) ওপর ভর করে প্রায় তিন বছর ঝিনাইদহ জেলখানায় বন্দি রয়েছেন এক প্রতিবন্ধী। এই তিন বছরেও অজানা থেকে গেলো তার নাম-পরিচয়। এদিকে, গত রবিবার (৩১ জুলাই) জেলখানায় বন্দি ওই প্রতিবন্ধীর পরিচয় শনাক্তের উদ্যোগ নেন ঝিনাইদহের অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বৈজয়ন্ত বিশ্বাস।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঝিনাইদহ সদর থানার তৎকালীন এস আই মো. ইউনুস আলী গাজী ২০১৯ সালের ১৪ নভেম্বর ঝিনাইদহ সদর উপজেলার নগরবাথান এলাকা থেকে অজ্ঞাত ওই প্রতিবন্ধীকে স্থানীয় লোকজনের হেফাজত থেকে উদ্ধার করে সেফ কাস্টডির জন্য আদালতে পাঠান। ২০২০ সালের ৩১ আগস্ট আদালতের নির্দেশে ওই ব্যক্তির পরিচয় নিশ্চিত হতে আঙুলের ছাপ নিতে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগে চিঠি পাঠানো হয়। একই বছরের ১৯ নভেম্বর জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগ আদালতকে জানায়, সাধারণ কাগজে সংগৃহীত আঙুলের ছাপ দিয়ে সঠিক পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব নয়। তবে ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে ডব্লিউএসকিউ ফরম্যাটে আঙুলের ছাপ গ্রহণ করলে তা সঠিকভাবে পরীক্ষা করা সম্ভব।

এই ঘটনায় প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা এস আই মো. ইয়াছিন আলী নাম-ঠিকানা যাচাই সংক্রান্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, অজ্ঞাত ব্যক্তির চেহারা, অঙ্গভঙ্গি অনেকটা রোহিঙ্গাদের মতো। ঝিনাইদহের জেল সুপার এ বিষয়ে আদালতকে জানান, অজ্ঞাত ব্যক্তি কারাগারে আসার পর থেকে তার নাম-ঠিকানা বলতে পারছেন না। তার বিরুদ্ধে মামলা নেই। শুধু সাধারণ ডায়েরি মূলে তিনি দুই বছর আট মাস কারাগারে বন্দি আছেন।

জেলার অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বৈজয়ন্ত বিশ্বাস আদেশে উল্লেখ করেছেন, নাম ঠিকানাবিহীন অজ্ঞাত পুরুষটি একজন বুদ্ধি ও বাকপ্রতিবন্ধী। বিনা বিচারে কাউকে কারাগারে রাখা ন্যায়বিচার ও মানবাধিকার সংক্রান্ত নীতিমালার পরিপন্থি। তাকে অবিলম্বে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে দিতে তার নাম-ঠিকানা উদঘাটন করা প্রয়োজন। এ কারণে অজ্ঞাত ব্যক্তিকে ঝিনাইদহ নির্বাচন অফিসে নিয়ে যথাযথ ফরম্যাটে আঙুলের ছাপ নিয়ে তা মিলিয়ে আদেশের কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেন।

এ ছাড়া টেকনাফ, উখিয়া ও ভাসানচর থানার ওসিদের আদেশ পাওয়ার তারিখ থেকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে স্ব-স্ব এখতিয়ারাধীন অঞ্চলে অবস্থিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ওই ব্যক্তির ছবি যাচাই-বাছাইপূর্বক প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এ সময় টেকনাফ, উখিয়া ও ভাসানচরের ওসিদের সহযোগিতা করতে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ঝিনাইদহের জেল সুপার আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে অজ্ঞাত ব্যক্তি কারাগারে সুস্থ আছেন।’

এ বিষয়ে ঝিনাইদহ আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি আজিজুর রহমান বলেন, ‘একজন ব্যক্তি বিনা অপরাধে কোনোভাবেই জেলখানায় বন্দি থাকতে পারে না। এটা সভ্য সমাজে অমানবিক। আদালত যে নির্দেশনা দিয়েছেন তা সঠিক।’

ঝিনাইদহ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবদুস ছালেক বলেন, ‘আদালতের কোনও নির্দেশনা এখনও পাইনি। লিখিত নির্দেশনা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ঝিনাইদহের মানবাধিকার কর্মী ও সিনিয়র সাংবাদিক আমিনুর রহমান টুকু বলেন, ‘বিনা বিচারে কাউকে কারাগারে আটক রাখা ন্যায়বিচার ও আইনের পরিপন্থি। আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক কারাগারে থাকা ব্যক্তিকে দ্রুত মুক্তির ব্যবস্থা রাষ্ট্রকে করতে হবে।’