৫০ বছর ধরে চলমান দুর্নীতি-দুঃশাসনের বিরুদ্ধে “বদলে যাও, বদলে দাও” স্লোগানে দেশের ৬৪ জেলা ও ৪৯৫টি উপজেলা প্রদক্ষিণ করে জেলা প্রশাসক এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেবেন হানিফ বাংলাদেশী।
প্রতিদিন তিন-চারটি উপজেলা প্রদক্ষিণ করে আগামী ২০২৩ সালের মে মাসে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় গিয়ে কর্মসূচি সমাপ্ত করবেন তিনি।
এ কর্মসূচি পালনের জন্য প্রায় এক বছর তিনি পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন থাকবেন। চলতি বছরের ৫ জুন রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় কক্সবাজারের টেকনাফের জিরো পয়েন্ট (শাপলা চত্বর) এলাকা থেকে যাত্রা শুরু করেন হানিফ বাংলাদেশী। ওই সময় টেকনাফের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কায়সার খসরুর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেন তিনি।
বর্তমানে হানিফ বাংলাদেশী প্রাচ্যের ভেনিসখ্যাত বরিশালে অবস্থান করছেন। রোববার দিনভর তিনি বরিশালের আগৈলঝাড়া, গৌরনদী, উজিরপুর ও বানারীপাড়া উপজেলা পরিষদের সামনে হাতে প্লেকার্ড ও বুকে ব্যানার নিয়ে কিছু সময় অবস্থান নেন। পরে তিনি উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন। এ নিয়ে তার দেশের মোট ১৩ জেলা ও ১০৭টি উপজেলা প্রদক্ষিন করা শেষ হল।
এখন তার টার্গেট দেশের বাকী সব জেলা ও উপজেলা প্রদক্ষিণ করা। এর আগে তিনি ঢাকা থেকে পায়ে হেঁটে বিএসএফ’র গুলিতে নিহত ফেলানীর প্রতিকী লাশ নিয়ে কুড়িগ্রাম সীমান্তে ও ফেলানীদের বাড়িতে গিয়েছিলেন।
এছাড়াও তিনি ভোাটাধিকারের দাবিতে ভোটের বাক্স মাথায় নিয়ে পায়ে হেটে টেকনাফ থেকে তেতুলিয়ায় গিয়েছিলেন। এ দাবিতে তিনি ৬৪ জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারক লিপি দিয়েছিলেন।
বর্তমান ইসি গঠনে আইন প্রণয়নের দাবিতে বঙ্গভবনের সামনে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করে অবস্থানও নিয়েছিলেন তিনি।
উল্লেখ্য: নোয়াখালীর জাহানাবাদ গ্রামের বাসিন্দা আবদুল মান্নানের ছেলে মো. হানিফ বর্তমানে হানিফ বাংলাদেশী নামে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছেন। ১৯৯৯ সালে নোয়াখালীর বুলুয়া ডিগ্রি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন তিনি। পরে লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে চট্টগ্রামের একটি প্রতিষ্ঠানে কমিশন এজেন্টের কাজ নেন। প্রতিষ্ঠান থেকে ছুটি নিয়ে দুর্নীতি বিরোধী এ প্রচারণা চালাচ্ছেন তিনি। কয়েক বছর ধরেই বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে কাজ করছেন হানিফ বাংলাদেশী।
এ বিষয়ে হানিফ বাংলাদেশী বলেন, দেশে নৈতিক, সামাজিক,পারিবারিক ও মানবিক মূল্যবোধের চরম অবক্ষয় চলছে। ভোট, গণতন্ত্র, আইনের শাসনের ওপর আগের সরকারের সময় থেকে নগ্ন হস্তক্ষেপ শুরু হয়েছে। ঘুষ, দুর্নীতি ও অর্থ পাচার হয়েছে। দেশের কৃষকেরা উৎপাদনশীল, শ্রমিকেরা পরিশ্রমী ও ছাত্র-যুবকেরা মেধাবী। কিন্তু দুর্বৃত্তায়ন সব অর্জনকে ব্যাহত করছে। দেশে অবকাঠামোগত অভূতপূর্ব উন্নয়ন হলেও মানবিক মূল্যবোধের পতন হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন হানিফ বাংলাদেশি।
তিনি বলেন, সম্ভাবনাময় এই উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা এগিয়ে নিতে, চলমান উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে এবং ঘুষ, দুর্নীতি ও অর্থ পাচার বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। পাচার করা অর্থ ফেরত এনে যুবকদের মধ্যে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে তাঁদের সহজ শর্তে ঋণ দিতে হবে। ভোট, গণতন্ত্র, আইনের শাসনের মানোন্নয়নে আরও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তাহলে বাংলাদেশ বিশ্বে একটি আত্মমর্যাদাশীল দেশ হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিনির্মাণ হবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনারবাংলা।