ঝালকাঠির রাজাপুরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে একাধিক গ্রুপের কিশোর গ্যাং সদস্যরা। এসব গ্রুপের গ্যাং লিডার কারা? কাদের জোরে ওরা দাপিয়ে বেড়ায়? এই তথ্য খুজতে মাঠে নামে ফ্রিডম বাংলা। বেড়িয়ে আসে ওদের খুটির জোরের তথ্য।
রাজাপুর মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেনীর ছাত্র জায়েদ জোহা নামের এক কিশোর একটি গ্যাংয়ের নেতৃত্ব দেয়। দলের নাম "জোহা গ্রুপ"। রাজাপুরে মাদক সেবনের বেশ কিছু ছবি এবং ভিডিও। ভাইরাল হয় এই কিশোরের। জোহা রাজাপুর উপজেলা পরিষদের সংরক্ষিত নারী আসনের ভাইস চেয়ারম্যান আফরোজা আক্তার লাইজুর পুত্র। মায়ের ক্ষমতার দাপটই তার পুজি।
একই স্কুলের নবম শ্রেনীর ছাত্র মো. সানি নামের আরেক কিশোর পৃথক একটি গ্রুপের নেতৃত্ব দেয়। এই সানির মা লিপি বেগম উপজেলা মহিলা আওয়ামীলীগ নেত্রী এবং মামা মনিরুজ্জামান মনির (কেন্দ্র মনির)। মামা রাজাপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী নেতা হওয়ায় সেই ক্ষমতা পুজি করে ভাগ্নে নেতৃত্ব দিচ্ছে "সাকিল-সানি" নামের অপর একটি কিশোর গ্যং গ্রুপের।
রাজাপুরের বিভিন্ন শ্রেনী ও পেশার অনেকের সাথে কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্বের বিষয়ে কথা হয়। তবে দলীয় নেতা মনিরুজ্জামান সানির মামা হওয়ায় নাম প্রকাশ না করার শর্ত দিয়েছে সবাই।
বয়স্করা বলছে নাম প্রকাশ করলে উচ্চ এবং নিম্মচাপে পড়তে হবে তাদের। অর্থাৎ সিনিয়র নেতা নেত্রীরা তাদেরকে দুষবে এবং কিশোরদের কাছে অপমানিত হতে হবে। তবে এখনই কিশোর গ্যাং সদস্যদের দমিয়ে দিতে অভিবাভক ও প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছে সাধারন মানুষ। অন্যথায় রাজাপুরবাসীকে আগামীতে ভয়ংকর পরিস্থিতি দেখতে হবে।
সপ্রতী দুই গ্রুপের হামলায় জোহা ও সানি দুজনেই আহত হয়েছে। সাথে গ্রুপের অন্যরাও আহত হয়েছে। এর মধ্যে ফাহিম নামের এক কিশোরের অবস্থা গুরুতর। ফাহিম বর্তমানে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভার্তি আছে।
গ্যাংয়ের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গত ১৪ জুলাই বৃহস্পতিবার রাজাপুরে তিন দফায় দু'গ্রুপে সংঘর্ষ হয়। ঐদিনের সংঘর্ষে সানি ও ফাহিম রক্তাক্ত জখম এবং আরো কয়েকজনে আহত হয়েছে।
স্থানীয় প্রতক্ষ্যদর্শীরা জানিয়েছেন কিশোর গ্যাং গ্রুপিং নিয়ে দ্বন্দ্ব, প্রভাববিস্তার, কয়েক কিশোরকে দলে ভেড়াতে না পারায় সানির সাথে জোহার দ্বন্দ্ব শুরু হয়।
সানির মা জেলা পরিষদ নির্বাচনে সংরক্ষিত নারী সদস্য হিসেবে আগামীতে প্রার্থী হবেন বলে প্রস্তুতি নিয়েছেন। এমনই সময় লিপি বেগমের ইমেজ অনেকটাই নষ্ট হয়েছে পুত্র সানির কারনে।
অন্যদিকে সানির মামা মনিরুজ্জামান আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঠালিয়া) আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন বলে মাঠে কাজ শুরু করেছেন অনেক আগেই। সাধারণ মানুষ বলছে, 'তার এই জনপ্রিয়তাও অনেকটা ভাটা পরবে ভাগ্নের কারনে। সম্প্রতী স্ত্রীর নামে হিন্দুর জমি দখল ঘটনায় মনিরুজ্জামানের রাজনীতিতে অনেকটা কালো দাগ লেগেছে বলেও জানান স্থানীয়রা।
প্রত্যাক্ষদর্শী লাবু ফকির বলেন, সম্প্রতী রাজাপুর মহিলা কলেজের সামনের প্রধান ফটকে জোহা, জুবায়ের, আরাফাত, আব্দুল্লাহ, ফাহিম, বিলাশসহ কয়েকজনে হামলা চালিয়ে সানিকে কুপিয়ে জখম ও তার জমজ সহোদর শাকিলকে বেধরক মারধর করেছে। এরপুর্বে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে জোহাকে এলোপাথারি পিটিয়ে জখম করেছিলো সানি গ্রুপের সদস্যরা।
গনমাধামকর্মীদের জোহার মা রাজাপুর উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আফরোজা আক্তার লাইজু বলেন, 'তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে জোহাকে এলোপাথারি পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে শাকিল, সানি, আজিম, রাব্বিসহ কয়েকজনে। সানি তার মামা মনিরের দাপটে এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্ত্ব দিচ্ছে।'
আহত কিশোর সানির মামা আওয়ামী লীগ নেতা মনিরুজ্জামান মনির গনমাধ্যম কর্মীদের বলেন, 'আমার ভাগ্নেকে পিটিয়ে এবং কুপিয়ে আহত করেছে স্কুল পড়ুয়া কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্তদানকারী জোহা। যার মাদক সংক্রান্ত অনেক ভিডিও ফেসবুকে দেখেছি।
রাজাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) পুলক চন্দ্র রায়ের সাথে কথা বলেছে ফ্রিডমবাংলা। কিশোর গ্যাংয়ের বিষয়ে তিনি বলেন। 'এই দুই গ্রুপের বিরুদ্ধে পুর্বে থানায় কোনো অভিযোগ নেই। তাই পুলিশের নজরে পরেনি ওরা। তবে বর্তমান ঘটনায় কিশোর মাস্তানির বন্ধে পুলিশ কড়া নজর রাখছে।'