কক্সবাজারের উখিয়ার রাজাপালং এমদাদুল উলুম ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসা পরিচালনায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে জামায়াতের দুই গ্রুপ মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। এতে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে পুরো উখিয়ায়। ঘটনার সূত্রে গত কয়েকদিন ধরে তালাবন্ধ রয়েছে মাদ্রাসা। পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করেছেন দু'গ্রুপ। এঘটনায় যেকোন সময় দু'গ্রুপের মাঝে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে পারে বলে আংশকা করেছে সচেতন মহল।
স্থানীয় সূত্র জানায়, শত বছরের এ মাদ্রাসাটি কয়েক যুগ ধরে জামায়াত নিয়ন্ত্রিত হয়ে চলে আসছে। উখিয়া উপজেলা জামায়াতের সাবেক আমির, মাদ্রাসার গভর্ণিং বডির সভাপতি ও জামায়াতের বর্তমান রুকন এ কে এম আবুল হাসান আলী ১৯৯০ সাল হতে অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্বপালন করে ২০২১ সালের শেষ দিকে অবসরে যান। তার সময়কালে জামায়াতের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা, ছেলে, মেয়ে জামাই, সহোদরসহ স্বজনদের শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। তিনি অবসরে যাবার অল্প সময়ের মাঝে গর্ভণিং বডির সভাপতি হিসেবে নিয়োগ নিয়ে আসার পর মাদ্রাসার চলমান দায়িত্বে থাকা অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) ও অন্য শিক্ষক মিলে সাবেক অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দাঁড়ান। তার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন উখিয়া উপজেলার জামায়াতের বর্তমান আমির ও ওই মাদ্রাসার প্রভাষক আবুল ফজল।
আবুল ফজল ও বর্তমান অধ্যক্ষ আবদুল হকের নেতৃত্বে ২৬ জুন সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সেখানে সাবেক অধ্যক্ষ এ কে এম আবুল হাসান আলীর সময়কালের অনিয়ম দূর্নীতির তথ্য তুলে ধরেন।
মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও জালিয়াপালং ইউনিয়ন জামায়াতের সাবেক আমির মো. আবদুল হক বলেন, নিয়মের বাইরে গিয়ে পরিচালনা কমিটির সভাপতি হয়েছেন উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির ও বর্তমান রুকন আবুল হাসান আলী। আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শাহীন আকতারের (সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির স্ত্রী) সুপারিশে সম্প্রতি তাকে এ পদে নিয়োগ দিয়েছেন ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য।
গত ফেব্রুয়ারিতে অধ্যক্ষের দায়িত্ব থেকে অবসর নেয়া আবুল হাসান আলীর বিরুদ্ধে মাদ্রাসার তহবিল থেকে ২ কোটি ৫ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আছে। ফলে মাদ্রাসা পরিচালনা পর্ষদের সর্বোচ্চ পদে তার নিয়োগে ক্ষুব্ধ প্রতিষ্ঠানটির অধিকাংশ শিক্ষক ও কর্মচারী। সভাপতির নতুন দায়িত্ব নিয়েই আবুল হাসান আলী মাদ্রাসার শিক্ষক-কর্মচারীদের মে মাসের বেতন-ভাতা (প্রায় ৬ লাখ টাকা) বন্ধ রেখেছেন। চাকরি থেকে বাদ দেয়ার ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন।
আবুল হাসান আলীকে অপসারণের দাবিতে রোববার কক্সবাজার শহরে সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন মাদ্রাসাটির ২৭ জন শিক্ষক ও কর্মচারী। ওই মাদ্রাসায় মোট শিক্ষক-কর্মচারী আছেন ৩১ জন। ওই সংবাদ সম্মেলনে আসেননি শুধু আবুল হাসান আলীর ছেলে মেয়ে জামাই ও ভাই।
অপরদিকে, নিজের বিরুদ্ধে করা সংবাদ সম্মেলনের অভিযোগের জবাব দিতে ২৭ জুন বিকেলে কক্সবাজারে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেন উখিয়ার রাজাপালং এমদাদুল উলুম ফাজিল মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ ও জামায়াত নেতা এ.কে.এম আবুল হাসান আলী।
তিনি বলেন, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় বিধিমতে আমাকে মাদরাসার গভর্নিং বডির সভাপতি মনোনীত করা হয়েছে। এই প্রক্রিয়াকে অবৈধ বলার কোন সুযোগ নাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেয়া মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়নে যুগোপযোগী সিদ্ধান্তের বিপক্ষের শক্তিরাই আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। তাদের অভিযোগের আইনি কোন ভিত্তি নাই।
তিনি বলেন, বিভিন্নজনের কুমন্ত্রণায় সরকারের যুগোপযোগী শিক্ষায় ব্যাঘাতের অপচেষ্টা করছে চক্রটি। তাতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষসহ কিছু শিক্ষক জড়ো হয়ে ইসলামি আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির ওই মনোনয়ন নিয়ে অহেতুক মিথ্যাচার করছে। এতে ইন্দন দিচ্ছেন সরকার বিরোধী একটি দুষ্টচক্র। আমি অতীতে জামায়াতের দায়িত্বশীল থাকলেও বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর হতে রাজনীতি থেকে দূরে আছি। তাদের দাবি আমি জাময়াত নেতা, তো- আমার প্রশ্ন, ওরা কারা? বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা কেন, কোন উদ্দেশ্যে? মাদরাসার সুন্দর শিক্ষার পরিবেশ কারা নস্যাৎ করছে? তাদের পরিচয় আপনাদের নিকট স্পষ্ট।
তার সংবাদ সম্মমেলনে মাদ্রাসার শিক্ষক ও আবুল হাসান আলীর দুই জামাতা, ছেলে, লাইব্রেরিয়ান ভাইসহ কয়েকজন নিকটাত্মীয় উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে স্থানীয়রা বলছেন, জামায়াতের দু'গ্রুপের আধিপত্যের প্রকাশ্য দ্বন্দ্বে মাদ্রাসার তিন হাজারের অধিক শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। ক্ষমতার দ্বন্দ্বের কারণে গত এক সপ্তাহ ধরে মাদ্রাসাটি তালাবদ্ধ রয়েছে। এনিয়ে জামায়তের দুই গ্রুপ মুখোমুখি অবস্থান নেয়ায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে পুরো উখিয়ায়। এঘটনায় যেকোন সময় দু'গ্রুপের মাঝে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে পারে। তাই প্রশাসনের উচিত এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া।
উখিয়া থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, গণমাধ্যমের বরাতে বিষয়টি জেনেছি। তবে, কেউ আনুষ্ঠানিক ভাবে জানায়নি। এরপরও নজর রাখা হচ্ছে।
বিষয়টি সম্পর্কে জেলা প্রশাসন অবগত কি না বা এ বিষয়ে করণীয় ও সিদ্ধান্ত কি তা জানতে কল করা হয় জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদকে। তিনি ফোন রিসিভ করেননি। বিষয়টি উল্লেখ করে খুদে বার্তা পাঠানো হয়, তারও উত্তর করেননি ডিসি।