ফ্রিডম বাংলা নিউজ

বৃহস্পতিবার, মার্চ ২৮, ২০২৪ |

EN

অধ্যক্ষের গলায় জুতার মালা: ৯ দিন পর মামলা, গ্রেফতার ৩

জেলা প্রতিনিধি | আপডেট: মঙ্গলবার, জুন ২৮, ২০২২

অধ্যক্ষের গলায় জুতার মালা: ৯ দিন পর মামলা, গ্রেফতার ৩
নড়াইলে পুলিশের সামনে শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাসকে গলায় জুতার মালা দিয়ে অপদস্ত করার ঘটনায় ৯ দিনের মাথায় এ ঘটনায় মামলা করেছে পুলিশ। এছাড়া এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। সোমবার রাতে পৃথক পৃথক অভিযান চালিয়ে পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে। 

তারা হলেন, নড়াইল সদর উপজেলার বিচালি ইউনিয়নের আড়া পাড়া গ্রামের মালেক মুন্সির ছেলে শাওন মুন্সি, মির্জাপুর গ্রামের সৈয়দ মিলনের ছেলে সৈয়দ রিমন এবং একই গ্রামের মনিরুল শেখ। 

মহানবী (সা.)-কে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যকারী ভারতের বিজেপি নেত্রী নূপুর শর্মার ছবি দিয়ে ফেসবুকে ওই কলেজের একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রের পোস্ট দেওয়াকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট ঘটনায় ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলেন ওই কলেজের ছাত্র ও স্থানীয় বিক্ষুব্ধ জনতা। একই ধর্মের হওয়ায় তাকে সাপোর্ট দিচ্ছে- এমন অভিযোগ তুলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেন। এ সময় তাদের পাশে পুলিশের অবস্থান দেখা গেছে।

নড়াইলে এ ঘটনার সূত্রপাত ১৭ জুন। ওই দিন মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির এক ছাত্র নিজের ফেসবুক আইডিতে বিজেপি নেত্রী নূপুর শর্মার ছবি দিয়ে পোস্ট করেন- ‘প্রণাম নিও বস ‘নূপুর শর্মা’ জয় শ্রীরাম’।

বিষয়টি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে কলেজের কিছু ছাত্র তাকে সেটি মুছে (ডিলিট) ফেলতে বলেন। এরপর ১৮ জুন সকালে অভিযুক্ত ছাত্র কলেজে আসলে তার সহপাঠীসহ সব মুসলিম ছাত্র তার গ্রেফতার, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও তাৎক্ষণিক বহিষ্কারের দাবি তুলে অধ্যক্ষের কাছে বিচার দেয়। কিন্তু ওই সময় ‘অধ্যক্ষ হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক হওয়ায় তাকে রক্ষা করার চেষ্টায় ওই ছাত্রের পক্ষ নিয়েছেন’ এমন কথা রটানো হলে উত্তেজনা তৈরি হয়।

এ সময় বিষয়টি কলেজের গণ্ডি ছাড়িয়ে আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা কলেজের অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের বিরুদ্ধেও কঠোর প্রশাসনিক ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি অভিযুক্ত ছাত্র ও অধ্যক্ষের ফাঁসির দাবিতে উত্তাল হয়ে ওঠে কলেজ ক্যাম্পাস। খবর পেয়ে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কয়েকটি দল ঘটনাস্থলে এসে বিক্ষুব্ধ জনতাকে লাঠিচার্জ করলে পরিস্থিতি আরও অশান্ত হয়ে ওঠে।

এরপর পুলিশের সঙ্গে উত্তেজিত জনতার মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ বাধে। দিনভর পুলিশ ও ছাত্র-জনতা দফায় দফায় সংঘর্ষে  দুই পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ২০ জন আহত হন। এ সময় মারাত্মক আহত হন কলেজের বাংলা বিষয়ের সহকারী অধ্যাপক শ্যামল কুমার ঘোষ। ওই সময় বিক্ষুব্ধ জনতা কলেজের শিক্ষকদের ৩টি মোটরসাইকেল আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

এরপর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান ও পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায় ঘটনাস্থলে পৌঁছলে তাদের উপস্থিতিতে উত্তেজিত জনতা ধর্ম অবমাননার অভিযোগে অভিযুক্ত ছাত্রের পাশাপাশি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের গলায় জুতার মালা পরিয়ে দিয়েছিল। এ সময় গ্রেফতারের দাবি জানালে অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস, অভিযুক্ত রাহুল দেব রায় ও তার বাবা বাবুল রায়কে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।

এসব ঘটনার কিছু ছবি ও ভিডিও ফেসবুকে আসে। এরপর থেকে পুলিশের উপস্থিতিতে অধ্যক্ষের গলায় জুতার মালা পরানোর ঘটনায় ক্ষোভ চলছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তার উপস্থিতিতে এ ধরনের পাশবিক উপায়ে সম্মানিত অধ্যক্ষকে অপমানিত করা হয়েছে, তাতে সারা দেশের শিক্ষক সমাজের সঙ্গে শান্তিপ্রিয় জনগণের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার করেছে।