পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ থাকায় শিমুলিয়া-মাঝিকান্দি ফেরিঘাট আবার সচল হয়েছে। এর আগে রবিবার রাতে পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় দুই বন্ধু প্রাণ হারান। এছাড়া এই সেতু দর্শনার্থীদের প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে থাকে। যার ফলে আজ সোমবার (২৭ জুন) ভোর থেকেই পদ্মা সেতুতেই মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়।
এদিকে, নিষিদ্ধ ঘোষণার পরে সোমবার সকালে পদ্মা সেতুর মাওয়া টোলপ্লাজার কাছে জড়ো হয়ে বিপুলসংখ্যক মোটরসাইকেল নিয়ে বিক্ষোভ করেন চালকরা। কিন্তু নিরাপত্তাকর্মীরা তাদেরকে সরিয়ে দেয়। এ সময় টোলপ্লাজায় বিশৃঙ্খলার চেষ্টা হয়। কিন্তু তাদের ফিরে যেতে বলেন। অল্প সময়ের মধ্যেই তারা একে একে ফিরে যায়। এরপর থেকে পদ্মা সেতুর মাওয়া ও জাজিরা উভয় টোলপ্লাজায় স্বাভাবিকভাবেই এবং নির্বিঘ্নে যানবাহন চলাচল করছে।
সকাল থেকে তাঁরা বিভিন্নভাবে পদ্মা নদী পার হওয়ার চেষ্টা করছেন। কেউ কেউ ভাড়া করা পিকআপে মোটরসাইকেল তুলে পদ্মা পার হয়েছেন। বিকল্প হিসেবে অনেকে ফেরি দিয়ে যাওয়ার জন্য শিমুলিয়া-জাজিরা নৌপথের সাত্তার মাদবর, মঙ্গলমাঝির ঘাটে যান। কিন্তু ঘাটে ফেরি না থাকায় ভোগান্তিতে পড়েন তাঁরা।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, টোল প্লাজার আগেই আটকে দেওয়া হচ্ছে মোটরসাইকেলগুলো। টোল প্লাজার আশপাশে তেমন গাড়ির জটলা নেই। বাইকগুলো পিকআপে তুলে সেতু পার করা হচ্ছে। প্রতিটি পিকআপে ৫ থেকে ৬টি করে মোটরসাইকেল উঠানো হচ্ছে। এর জন্য ১৩০০ থেকে ১৫০০ টাকা করে নিচ্ছেন পিকআপ চালকরা।
তবে রবিবারের চেয়ে আজ সোমবার যানবাহন চলাচল অনেকটাই কম দেখা গেছে।
পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে কথা হয় আবুবকর নামে এক বাইকারের সঙ্গে। তিনি বলেন, স্বপ্নের পদ্মা সেতু দেখার জন্য এসেছিলাম ময়মনসিংহ থেকে। গতরাতে ফরিদপুরে ছিলাম। এখন যাওয়ার পথে যাওয়ার জন্য এসেছি। কিন্তু আসার পর এত বড় দুর্ভোগ পোহাতে হবে সেটা বুঝতে পারেনি। এখন গাড়ি পিকআপে করে স্বপ্নের সেই পদ্মা সেতু পার হতে হবে।
ভুরগাটা থেকে পদ্মা সেতু দেখতে আসা বাদল মিয়া বলেন, দাদা পদ্মা সেতু দেখবে। তাই তাকে পেছনে নিয়ে ফরিদপুর থেকে এসেছি, কিন্তু এখন দেখি পদ্মা সেতুতে উঠতে দেয় না। তাই এখন চলে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই।
যানবাহন চলাচল কম থাকায় গত দুদিন ধরে শিমুলিয়া-মাঝিকান্দি নৌরুটে ফেরিগুলো চলাচল করেনি। কিন্তু সোমবার সকাল থেকেই মোটরসাইকেলগুলো টোলপ্লাজায় বাধা দিতে পারেনি। তখন তারা মাঝিকান্দি থেকে ফেরিতে ওঠে পদ্মা পার হয়। সকাল থেকে যে কয়টি ফেরি পারাপারের নিয়োজিত ছিল সবগুলোতেই মোটরসাইকেলের উপচে পড়া ভিড় হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাবাজার ঘাটের বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তারা।
উল্লেখ্য, বহুল প্রতীক্ষিত স্বপ্নের পদ্মা সেতু যানবাহনের জন্য খুলে দেয়ার প্রথমদিনেই ঘটে অপ্রীতিকর ঘটনা। সেতুতে বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালানোর কারণে দুর্ঘটনায় কবলে পড়ে দুই আরোহী নিহত হন।
এছাড়া সেতুতে মোটরসাইকেল থামিয়ে সেলফি তোলা, টিকটক করা ও সেতুর রেলিংয়ের নাট-বল্টু খোলার ঘটনাও ঘটে। এতে সোমবার সকাল ৬টা থেকে পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকার।