ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার ঘোষপুর ইউনিয়নের গোয়াইলবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ে জাল কম্পিউটার সনদ দিয়ে স্কুলের নিম্নমান সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকুরি নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনায় বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. নজরুল ইসলামকে প্রধান করে গত ১৮ জুন ২০২২ তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই তদন্ত কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন, অভিভাবক সদস্য মো. জাহাঙ্গীর শেখ ও শিক্ষক প্রতিনিধি সদস্য লিপি রানী নন্দী। ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময় বেধে দেন ম্যানেজিং কমিটি।
জানা যায়, গোয়াইল বাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের নিম্নমান সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেট শূন্য পদের জন্য ২০১২ সালের ১৬ অক্টোবর গোয়াইল বাড়ির বাসিন্দা মো. আবু আল হেলালকে নিয়োগ দেওয়া হয়। ওই নিয়োগে আবু আল হেলাল সকল কাগজপত্রর সাথে খুলনার নিও টিস কম্পিউটার সেন্টারের একটি সনদ জমা দেন। এ ছাড়া ওই সনদে আবু আল হেলাল এর বাবার নাম লেখা রয়েছে এমডি এ ওহাব এবং কলেজের প্রশাংসা পত্রে লেখা রয়েছে আ. ওহাব খালাসী।
বিদ্যালয়ের বর্তমান সভাপতি উপজেলা আ’লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক মোস্তফা জামান সিদ্দিকী বিষয়টি জানতে পেরে যাচাইবাছাই করার জন্য তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করেন। ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেন তাদেরকে জমা দিতে বলেন।
মো. আবু আল হেলাল বলেন, আমার সকল কাগজপত্র সঠিক আছে। এ ছাড়া আমি আবেদন করেছিলাম অফিস সহায়ক পদের জন্য। আমার কম্পিউটার জানা ছিল তাই কম্পিউটার সার্টিফিকেট দিয়েছিলাম। কম্পিউটার সার্টিফিকেট ও প্রশাংসাপত্রে বাবার নাম দুই রকম হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রশাংসা পত্র ভুল আছে। নিয়োগে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে নিম্নমান সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদ তা হলে আপনি অফিস সহায়ক পদে আবেদন কি ভাবে করলেন আর কি ভাবে নিম্নমান সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকুরী পেলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি জানি না যা জানার তৎকালিন উপজেলা শিক্ষা অফিসার, ডিজির প্রতিনিধি ও প্রধান শিক্ষক জানেন।
খুলনা নিও টিস কম্পিউটার প্রশিক্ষক সেন্টারের মালিক মো. কবির ইসলাম মোবাইল ফোনে বলেন, মো. আবু আল হেলাল কম্পিউটারের যে সার্টিফিকেট ব্যবহার করেছেন তা আমরা দেয়নি। ওই সার্টিফিকেটটি জাল। আমাদের স্টোর থেকে যারা প্রশিক্ষন শেষে সার্টিফিকেট পায়। তাদের সার্টিফিকেটে গোল সিল থাকে। এ ছাড়া সার্টিফিকেটে যে সাক্ষর রয়েছে তা জাল। সার্টিফিকেটে যে ঠিকানা রয়েছে তা সঠিক না। ওই ঠিকানায় আমাদের অফিস কখনও ছিল না আজও নেই।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আইয়ুব আলী বলেন, মো. আবু আল হেলালকে নিম্নমান সহকারী কম কম্পিউটার অপাটের পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কাগজপত্রে ছোট খাট ভুল ধরা হয় না। প্রশাংসা পত্র দেখি না। সার্টিফিকেট দেখি নিয়োগে কম্পিউটার উল্লেখ থাকলেও সার্টিফিকেটকে অতো গুরুত্ব দেওয়া হয় না বা কেউ দেয় না।
তদন্ত কমিটির আহবায়ক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, বিদ্যালয়ের নিম্নমান সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর মো. আবু আল হেলালের নিয়োগের সকল কাগজপত্র যাচাই বাছাই করার জন্য আমাকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। বলা হয়েছে ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য। স্কুলের পরীক্ষার জন্য আমরা ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেন জমা দিতে পারিনি। আরো সময় চেয়ে আবেদন করেছি।
তদন্তে কি পেয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, তদন্ত করে এখন পর্যন্ত জানতে পারি নাই তার কম্পিউটার সার্টিফিকেট আসল না নকল।
বিদ্যালয়ের বর্তমান সভাপতি মোস্তফা জামান সিদ্দিকী বলেন, মো. আবু আল হেলালের কম্পিউটারের সার্টিফিকেট জাল সন্দেহ হয়েছে এবং তার কাগজপত্রে তার বাবার নাম ভূল এই জন্য তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তৎকালিন নিয়োগ বোর্ডের সদস্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জালাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ওই সময় সার্টিফিকেট যাচাই বাছাই করা যেত না। সে যদি জাল সার্টিফিকেট দিয়ে নিয়োগ পেয়ে থাকে তা হলে দায়ভার তার। জাল সার্টিফিকেট হলে চাকুরী থাকবে না।