মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার সাড়ে ১২ শত গরুর খামারী কোরবানি পশু নিয়ে চরম দুঃচিন্তায় পড়েছেন। একদিকে বন্যা ধেয়ে আসছে অন্যদিকে লাম্পি স্কিন ডিজিজ ভাইরাস চারিদিকে ছড়িয়ে পরেছে । হাজার হাজার কোরবানির পশু এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে।
লাম্পি স্কিনে আক্রান্ত পশু গুলোর মাংস বাজারে বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ইতিমধ্যে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ৭ কোরবানির পশু।
দিঘলিয়া ইউনিয়নের আগ সাভার গ্রামের মোঃ তাহের হোসেনের খামারে ছোট বড় মিলে ৩৭ টি কোরবানির পশু রয়েছে। ৩৭ পশুর মধ্যে ১৬ টি পশুর লাম্পি স্কিন ভাইরাসে আক্রান্ত হয়। এরমধ্যে দুটি পশুর অবস্থা খারাপ হলে বাজারে বিক্রি করে দেন।
একই ইউনিয়নের আমিনুর রহমান। তার খামারে ২০টি কোরবানির পশুর লালনপালন করেছেন। ২০ টি কোরবানির পশুর মধ্যে ৬ টি লাম্পি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়। এ রোগের কোন ভ্যাকসিন না থাকায় কোরবানির পশু নিয়ে দুঃচিন্তায় পরেছেন তিনি।
উপজেলার ধানকোড়া ও হরগজ ইউনিয়নে লাম্পি স্কিন ভাইরাসে প্রতিটি বাড়িতেই কোরবানির পশু আক্রান্ত হয়েছে। এই দুই ইউনিয়নেই মারা গেছে ৭ টি কোরবানির পশু। এতে ওইসব পশুর মালিকের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ২০ লক্ষাধিক টাকা।
ফুকুরহাটি গরুর খামারী ফিরোজা বেগম তার খামারে এবার ৯ টি পশু হৃষ্টপূষ্ট করেছেন। চারিদিকে লাম্পি ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার খবর পেয়ে তিনি মানিকগঞ্জ থেকে একটি কোম্পানির ভ্যাকসিন কিনে পশুকে পুশ করেন। এতে তার ব্যয় হয় ১ হাজার ৮ শত টাকা। চিকিৎসককে দিতে হয় ১ হাজার টাকা।
উপজেলার খামারীদের অভিযোগ, লাম্পি স্কিন চিকিৎসকের পরামর্শে কোন কাজে আসছে না। তবে একটি পশুর জন্য ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা খরচ করার পরও ভালো হওয়ার লক্ষন দেখছেন না খামারীরা।
সারা উপজেলায় একজন মাত্র ডাক্তার একজন ডাক্তার দিয়ে সারা উপজেলায় চিকিৎসাসেবা ব্যহৃত হচ্ছে। সামনে কোনবানির ঈদ পানির দরে কোরবানির পশু বিক্রি করতে হবে। তবে অসুস্থ্য পশু ক্রেতারা নিবে কিনা এ নিয়েও দুচিন্তায় পরেছেন খামারীয়া।
সাটুরিয়া উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার সাড়ে ১২ শত খামারিতে ২০ হাজার কোরবানির পশুকে প্রাকৃতিক খাবার দিয়ে হৃষ্টপূষ্ট করা হয়েছে। এসব পশু উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে অন্যত্র বিক্রি করা হবে। এরমধ্যে লাম্পি স্কিন ভাইরাসে বেশির ভাগ কোরবানির পশুই আক্রান্ত হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট দপ্তর জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট দপ্তর আরো জানান, আফ্রিকা মহাদেশের জাম্ভিয়া এলাকায় ১৯২৯ সালে এ লাম্পি ভাইরাস দেখা দেয়। ২০২০ সালে বাংলাদেশে এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। ২০২০ ও ২০২১ সালে কোন পশু মারা না গেলেও চলতি বছর মারা যাচ্ছে। সরকারিভাবে কোন ভ্যাকসিন না থাকায় চিকিৎসা সেবা ব্যহৃত হচ্ছে। ছাগলের ভ্যাকসিন গরুকে দেওয়া হলে কোন উপকারেই আসছে না সূত্র জানায়।
প্রাণি বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এ ভাইরাসে কোন গবাদি প্রাণি আক্রান্ত হলে দুধ উৎপাদন কমে যাবে। গবাদি পশু দুর্বল হয়ে পরে,ওজন কমে যায় ও চামড়ার গুনাগুন নষ্ট হয়ে যায়। তারা পরামর্শ দেন, মশামাছি মুক্ত রাখার জন্য খামার ও বসতবাড়ি আশেপাশে পরিছন্নতা রাখা, খামার পরিস্কার খানা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, আক্রান্ত গবাদি পশুকে সুস্থ্য পশু হতে দুরে রাখা, আক্রান্ত পশুকে মশারির ভেতর রাখা ও ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া।
সাটুরিয়া উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মেহেদি হাসান জানান, এটি একটি ভাইরাস জনিত চর্মরোগ। লাম্পি ভ্যাকসিন একটি অসুস্থ্য পশুর শরীর থেকে মশা মাছির মাধ্যমে ছড়িয়ে থাকে। এ কারনে রোগটি দ্রুত ছড়িয়ে পরে। একটি খামারে একটি পশুর এ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে পর্যায়ক্রমে ওই খামারের সব পশুই আক্রান্ত হবে।
উপজেলার প্রায় ২০ হাজার কোরবানির পশুর মধ্যে প্রায় ৫ হাজার পশুই লাম্পিয়ে আক্রান্ত হয়েছে। এ রোগের কোন ভ্যাকসিন নেই। আমরা গোট পক্স নামে ছাগলের ভ্যাকসিন দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। তবে কোন কাজে আসছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে খামারীদের ব্যাপক ক্ষতি ও লোকসানে মুখে পড়বে বলে তিনি জানান।