আগামিকাল শনিবার (২৫ জুন) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন স্বপ্নের পদ্মা সেতু। এতে রাজধানীর সংঙ্গে গোপালগঞ্জের যোগাযোগের দুর্ভোগ কমবে। দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে। এর মধ্যে গোপালগঞ্জ জেলা অন্যতম। সেতু খুলে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এ জেলার মানুষ আরও অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হবে। মানুষের ভাগ্যবদলে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে পদ্মা সেতু। সেতু ঘিরেই সোনালি ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছেন এই জেলার প্রায় ১৫ লাখ মানুষ। পদ্মা সেতু চালু হলে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের সঙ্গে এ জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হবে। পিছিয়ে পড়া এই জেলা ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আরও মনোযোগ কাড়বে। গড়ে উঠবে এ জেলায় নতুন নতুন শিল্পকলকারখানা। ফলে এ জেলার অর্থনীতির চাকা ঘোরার পাশাপাশি বাড়বে বেকারদের কর্মসংস্থান।
পদ্মা সেতু শুধু যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করবে না, এতে শিক্ষা কৃষি, মৎস্য, জরুরি স্বাস্থ্যসেবা, শিল্প, পর্যটনসহ বেশ কিছু খাতে অর্থনৈতিক উপযোগ ও সৃষ্টি হবে। পাশাপাশি গড়ে উঠবে বিভিন্ন শিল্পকলকারখানা, ইপিজেড, বিমানবন্দর, গার্মেন্টস শিল্প ও কৃষি-শিল্প। কৃষি গোপালগঞ্জ জেলাকে অর্থনৈতিকভাবে সবচেয়ে সমৃদ্ধ করেছে কৃষি খাত। জেলার প্রায় দেড় লাখ হেক্টর জমিতে নানান ফসল উৎপাদন হয়। এর মধ্যে অন্যতম ফসল সবজি। পদ্মা সেতুর কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় কৃষকদের নিজস্ব ক্ষেতে ফলানো কৃষিপণ্য এ জেলার চাহিদা মিটিয়ে পৌঁছে যাবে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।
এতে কৃষকেরা তাদের ফসলের ন্যায্য মূল্য পাবেন। এ বিষয়ে সদর উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের কৃষক আবদুল মতিনের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, "আমি প্রায় পঞ্চাশ বিঘা জমিতে ১২ মাস বিভিন্ন শাকসবজি চাষ করি। এ জেলা ছাড়া বাইরে বিক্রি করতে পারতাম না। তাই ন্যায্য মূল্যও পেতাম না। পদ্মা সেতু চালু হলে রাজধানী সঙ্গে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হবে। ভোগান্তি ছাড়াই সরাসরি সবজি নিয়ে সময়মতো ঢাকায় পৌঁছাতে পারব। সবজির ন্যায্য মূল্য পাব।" স্বাস্থ্য পদ্মা সেতু চালু হলে গোপালগঞ্জের স্বাস্থ্য খাতে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। এ জেলায় রাজধানী ঢাকা থেকে কোনো চিকিৎসক আসতেন না। রোগীদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়ার সময় ফেরিঘাটে সময় ব্যয় হওয়ার জন্য দুর্ভোগ পোহাতে হতো।
পদ্মা সেতু চালু হলে এ জেলার মানুষ ভোগান্তি ছাড়াই অল্প সময়ে ঢাকা পৌঁছাতে পারবেন। নিতে পারবেন জরুরি স্বাস্থ্যসেবা। গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের সহকারি পরিচালক ডা. অসিত কুমার মল্লিক বলেন, "পদ্মা সেতু চালু হওয়ার ফলে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে গোপালগঞ্জের যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন আসবে। ঢাকার অনেক বড় বড় চিকিৎসক আমাদের জেলায় আসতে চাইতেন না। পদ্মা সেতু খুলে দেওয়ার পর চিকিৎসার ক্ষেত্রে অনেক পরিবর্তন হবে। ভালো চিকিৎসক এ জেলায় এসে মানুষকে চিকিৎসা দিতে পারবেন। অনেক সময় নদী পার হতে গিয়ে রোগী মারা যেতেন। জরুরি ওষুধ আনতে অনেক সময় লাগত।" পর্যটন পদ্মা সেতু চালু হলে গোপালগঞ্জে পর্যটন খাতেও বিরাট পরিবর্তন আসবে।
এ জেলায় রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিস্থল। ইতিমধ্যে জাতির পিতার সমাধিস্থল ঘিরে তৈরি করা হয়েছে স্থাপত্যশৈলীর নানান নিদর্শন। আর চোখ জুড়ানো সবুজের মাঠ। এ সমাধিস্থলকে ঘিরে সারা বছর পর্যটকদের ভিড় এমনিতে লেগে থাকে। পদ্মা সেতু চালু হলে গোপালগঞ্জের সঙ্গে সারা দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হবে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পর্যটক আসবে। এতে জেলার পর্যটনশিল্প আর ও বিকশিত হবে। শিক্ষা গোপালগঞ্জ জেলায় দুটি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। পদ্মা সেতুর কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মেধাবী শিক্ষার্থীরা এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার জন্য আগ্রহী হবেন।
এ বিষয়ে বশেমুরবিপ্রবির বিজিএমই বিভাগের প্রভাষক ইমদাদুল হক সোহাগ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে একই সঙ্গে জ্ঞান বিতরণ এবং জ্ঞান সৃষ্টির জায়গা। জ্ঞান সৃষ্টির জন্য প্রথমত যে জিনিসটা প্রয়োজন, সেটা হচ্ছে বিশ্বমানের গবেষক দরকার। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জাতির জনকের পুণ্যভুমি গোপালগঞ্জ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি বিশ্বমানের গবেষকরা আরও আকৃষ্ট হবেন। সেই সঙ্গে মেধাবী শিক্ষার্থীরাও এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি আকৃষ্ট হবেন। শিল্পায়ন পদ্মা সেতু চালু হওয়ার দেশি বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এ জেলায় বিনিয়োগে আকৃষ্ট হবেন।
এ জেলায় গড়ে উঠবে বিভিন্ন শিল্পকলকারখানা। এ জেলার বেকারত্বের কর্মসংস্থান হবে। ভাগ্যের পরিবর্তন আনবে এ জেলার বেকারদের। কর্মসংস্থান পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর ২১ জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থান হবে এ জেলায়। পদ্মা সেতু ঘিরে এ জেলায় তৈরি করা বিশাল বিশাল সরকারি বেসরকারি স্থাপনার কাজ প্রায় শেষ। পাশাপাশি বিনিয়োগ হচ্ছে বেসরকারি খাতে। সবগুলোই খুলে দেওয়া হবে পদ্মা সেতু চালু হলে। নির্মাণ করা হচ্ছে বেসরকারি শিল্পকলকারখানাও। যা এ জেলার অর্থনীতিতে বড় পরিবর্তন আনবে। এ বিষয়ে গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব আলী খান বলেন, পদ্মা সেতু ঘিরে এ জেলায় বেশ কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করা হয়েছে।
পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী সব উদ্বোধন করবেন। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি শিল্পকলকারখানা নির্মাণ করা হচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও শিল্পকলকারখানা চালু হওয়ার পর এ জেলার বেকারদের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। কমবে এ জেলার বেকারত্বের হার। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা বলেন, "পদ্মা সেতু চালু হলে গোপালগঞ্জ শুধু শিল্পাঞ্চলই নয়, আধুনিক পর্যটন নগরীতে রূপ নেবে। এ জেলার মাটিতেই চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
এ সমাধিস্থলকে ঘিরে সারা বছর বিভিন্ন জেলা থেকে পর্যটক আসতে থাকেন। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর এ জেলার অর্থনীতির চাকা সচল হবে। পদ্মা সেতুকে ঘিরে যেসব নবনির্মিত সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও শিল্পকলকারখানা গড়ে উঠেছে, সব কটিতে এ জেলার বেকারদের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। এতে বেকারত্বের হার কমার পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে এ জেলা স্বাবলম্বী হবে।"