পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধির কারনে ফরিদপুরের চরাঞ্চলের মানুষের পড়েছে হুমকির মুখে। পানি বৃদ্ধির কারনে নদীতে রক্ষা বাধসহ জেলাটির বিভিন্ন স্থানে ভাঙন লক্ষ করা যাচ্ছে।
এরই ধারাবাহিকতায় চরভদ্রাসনে চর হরিরামপুর ইউনিয়নের সবুল্লা শিকদারের ডাঙ্গী এলাকায় নদী রক্ষা বাধে ভাঙন দেখা দিয়েছে।
চরভদ্রাসনের পদ্মা নদীর লোহারটেক কোলের সংযোগ বাঁধে গত দুইদিন যাবত ভাঙন দেখা দিয়েছে।
এলাকাবাসীর দাবি যদি এভাবে ভাঙন চলে থাকে তাহলে আমাদের এলাকায় বাড়িঘর, রাস্তাঘাট সহ আরোও বিভিন্ন ফসলি জমি, স্কুল অস্তিত্ব সংকটে পরার সম্ভাবনা রয়েছে। সবার প্রথমেই এই পানি বৃদ্ধি ও ভাঙন এর কারনে আমাদের এলাকার সবুল্লা শিকদারের ডাঙ্গী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যলয়টি নদীর সাথেই হওয়ার বিদ্যালয়টি তলিয়ে যাবে ও হুমকির মুখে পড়বে। পদ্মা নদী ও লোহারটেক কোলের সংযোগ স্থলে তীব্র স্রোত দেখা দিয়েছে। এর পরই পানিতে বালুভর্তি ডাম্পিংকৃত জিওব্যাগ নদীতে তলিয়ে যেতে থাকে।
চরভদ্রাসনে চর হরিরামপুর ইউনিয়নের সবুল্লা শিকদারের ডাঙ্গী গ্রামে নদীর বাঁধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বালুভর্তি জিও ব্যাগের প্রায় ১০ মিটার জায়গা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। গত সোমবার (২০ জুন) দুপুর ২টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টার মধ্যে সবুল্লা শিকদারের ডাঙ্গী গ্রামে এ ভাঙনের ঘটনা ঘটে।
লোহারটেক গ্রামের বাসিন্দা রমিজ উদ্দিন(৫৩) বলেন, আমরা খুব আশা নিয়ে এখানে বসবাস করতাম, যে প্রতিবার আমাদের যে নদী ভাঙনে ক্ষতি হয়, এইবার বাধের কাজ হওয়াতে সেই ভাঙন আর হবেনা, কিন্ত হটাৎ দুইদিন আগে থেকে ভাঙন দেখা দেয়, আমরা এখন চিন্তায় আছি যে কি করবো বউ-ছেলে-মেয়ে নিয়ে কোথায় যাবো।
একই গ্রামের শেখ হালিমের স্ত্রী রেবেকা খাতুন (৫০) বলেন, রাস্তার পাশে আমরা ২০ বছর ধরে একটি টিনের ঘর বানিয়ে থাকি, আমরা গরিব মানুষ দিন আনি দিন খাই, দিনশেষে আমারা এই ঘরে এসে রাতটা কাটাই, অভাব-অনটন ও অল্প আয় হওয়াতে নিজেরা একটু জায়গাও কিনতে পারিনাই, আমাদের থাকার শেষ জায়গাটুকুও যদি পদ্মায় নিয়ে যায় আমাদের আর কোন জায়গা হবেনা থাকার জন্য।
সবুল্লা শিকদারের ডাঙ্গী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শহিদুল্লাহ বলেন, হঠাৎ পদ্মায় পানি বেড়ে ভাঙন বৃদ্ধি পেয়েছে। ভাঙন বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। সংশ্লিষ্টদের প্রতি এই ব্যাপারে আমার উদ্বর্ত আহব্বান বিদ্যালয়ের ১৩৫ জন শিক্ষার্থীর পড়ালেখা চলমান রাখতে ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তারা যেনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।
এ ব্যপারে চর হরিরামপুর ইউনিয়নের ইউপি(চেয়ারম্যান) মোঃ জাহাঙ্গীর কবির এর সত্যতা নিশ্চিত করে মঙ্গলবার দুপুরে জানান, আমাদের চর হরিরামপুর ইউনিয়নটি পদ্মা নদীর পাশে হওয়ায় নদীতে পানি বৃদ্ধির ফলে তীব্র স্রোতের সৃষ্টি হয়েছে এই কারনেই মূলত ভাঙনের সৃষ্টি হয়।
এ এলাকায় একটি প্রাইমারী স্কুল ও প্রায় সাড়ে তিনশো পরিবার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ভাঙনরোধে কাজ চলছে। বালু ভর্তি জিও ব্যাগের ডাম্পিং করা হচ্ছে। এক একটি বালু ভর্তি জিও ব্যাগের ওজন প্রায় তিনশো মন। তাও ফেলার সঙ্গে সঙ্গে নিচের দিকে ডেবে যাচ্ছে। কাজের পরিমাণ ও গতি বাড়াতে হবে।
চরভদ্রাসন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানজিলা কবির ত্রপা বলেন, আমি বিষটি জানতে পেরেছি যে যে এলাকায় ভাঙন হয়েছে সেখানের নদীর ভাঙন রোধে যে বস্তা ব্যাবহার করা হয়েছিলো, কিছু বস্তা পানির স্রোতে ভেসে গেছে। তবে সেখানে পুনরায় বালুর বস্তা ফেলাসহ যেভাবে এই ভাঙন রোধ করা সম্ভব, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতিম সাহা বলেন, ভাঙনরোধে আমরা কাজ করে যাচ্ছি । আমাদের কাজ অব্যাহত আছে, কিন্ত এখনো সবুল্লা শিকদারের ডাঙ্গী গ্রামে দুইশত মিটার স্থায়ী বাঁধের কাজটি পুরোপুরি সম্পন্ন করা যায়নি। এই স্থানের ভাঙনের খবর আমি শুনেছি। যতদ্রুত সম্ভব আমরা কাজটি সম্পন্ন করা চেষ্টা করছি।