ফ্রিডম বাংলা নিউজ

বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১, ২০২৪ |

EN

এবার ভয়ঙ্কর রূপে কুশিয়ারা, সিলেটের ৬ উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

জেলা প্রতিনিধি | আপডেট: মঙ্গলবার, জুন ২১, ২০২২

এবার ভয়ঙ্কর রূপে কুশিয়ারা, সিলেটের ৬ উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

ছবি: সংগৃহীত

গত দুদিনে বৃষ্টি কিছুটা কমাতে সিলেটের সুরমা, ধলাই, পিয়াইন, সারি ও লোভা তীরবর্তী উপজেলাগুলোতে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও এবার ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে কুশিয়ারা নদী। ভারতের আসাম, শিলচর, মনিপুরে পাহাড়ি এলাকায় ভারী বর্ষণে বেড়েই চলছে কুশিয়ারা ও সোনাই নদীর পানি। ফলে কুশিয়ারা নদীর বিভিন্ন ডাইকের বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। কোথাও ডাইক উপচে লোকালয়ে ঢুকছে পানি।

কুশিয়ারা নদীর ডাইকের বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে ভাঙন। ভাঙন ও ডাইক উপচে পানি ঢুকে জেলার ছয়টি উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে।

সোমবার (২০ জুন) পর্যন্ত জেলার ছয়টি উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। এর মধ্যে সিলেটের জকিগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ, বালাগঞ্জ, ওসমানীনগর।

জানা গেছে, গত রোববার থেকে কুশিয়ারা নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে ইতোপূর্বে যেসব এলাকা আংশিক বন্যা কবলিত ছিল, সেগুলো এখন দুর্গত এলাকায় পরিণত হচ্ছে। শহর থেকে গ্রাম-সব জায়গাতেই উঠছে পানি।
 
ফলে কুশিয়ারা তীরবর্তী উপজেলাগুলোর বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। উপজেলাগুলোতে লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। কুশিয়ারার পানিতে সরাসরি সয়লাব হচ্ছে জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগর।
 
আর সোনাই নদীর পানি প্রবেশ করছে হাকালুকি হাওরে। এছাড়া মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত ভারত থেকে আসা আরও ৪টি পাহাড়ি নদী ফানাই-আনফানাই, কন্টিনালা, জুড়ি দিয়ে উজানের ঢল নামছে উপ মহাদেশের বৃহত্তম হাওর হাকালুকিতে। ফলে হাওরের পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলো পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। অনেক উঁচু বসতিতেও ওঠেছে বন্যার পানি। এরই মধ্যে হাটবাজার, রাস্তাঘাট ডুবে গিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

 হাকালুকি হাওরের তীরবর্তী সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ ঘিলাছড়া জিরো পয়েন্ট পর্যটন কেন্দ্রও পানিতে তলিয়ে গেছে।

স্থানীয়রা বলছেন, ১৯৮৮ সালের বন্যার পর এটাই সর্বোচ্চ বন্যা। এমন ভয়াবহ বন্যা কেউ দেখেননি বলেও জানান স্থানীয়রা।  
 
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে- সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত জকিগঞ্জ উপজেলার ৩৯টি স্থান দিয়ে পানি প্রবেশ করছিল। বর্তমানে উপজেলার লাখো মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন।
 
ফেঞ্চুগঞ্জে কুশিয়ারা নদী ও তীরবর্তী এলাকা পানিতে একাকার হয়ে গেছে। বানের পানিতে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা সদরসহ ৬০ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। আর হাকালুকি হাওরের চার পাশের অন্তত শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
 
সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার বাসিন্দা কমর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, কুশিয়ারা নদীর পানি ডাইকে আঘাত করছে। আর সোনাই নদীর পানি সরাসরি হাওরে প্রবেশ করে বসতি ডুবাচ্ছে।
 
বালাগঞ্জ উপজেলার অবস্থাও একই। কুশিয়ারা নদীর ডাইক ভেঙে ও ওপর দিয়ে পানি প্রবেশ করে প্লাবিত হয়েছে বাড়িঘর, হাটবাজার ও রাস্তাঘাট। বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বালাগঞ্জ-খছরুপুর ও ফেঞ্চুগঞ্জ-বালাগঞ্জ সড়ক দিয়ে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
 
সোমবার সারাদিন উপজেলার পানি বেড়ে উপজেলার চারখাই, আলীনগর, শেওলা, দুবাগ, কুড়ারবাজার ও থানাবাজারসহ বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। উপেজেলার লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

কুশিয়ারার পানি বৃদ্ধিতে ওসমানীনগর উপজেলার গোয়ালাবাজার, তাজপুর, দয়ামীর, বুরঙ্গা, সাদিপুর, পশ্চিম পৈলনপুর, উসমানপুর ও উমরপুর ইউনিয়নের পুরোটাই পানিতে তলিয়েছে।

সিলেটের গোলাপগঞ্জে উপজেলার কুশিয়ারা তীরবর্তী শরীফগঞ্জ, বাদেপাশা, ঢাকাদক্ষিণ, আমুড়া ও ভাদেশ্বরে বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হয়েছে। পানি বৃদ্ধি পেয়ে কুশিয়ারা তীরবর্তী ইউনিয়নগুলোর নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
 
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী- সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় কুশিয়ারা নদীর পানি আমলসীদ পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৮৬ সেন্টিমিটার, শেওলায় ৬৭ সেন্টিমিটার, ফেঞ্চুগঞ্জে ৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। সুরমা নদীর পানি সব পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর মধ্যে কানাইঘাটে সুরমার পানি ১১৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহমান ছিল। সিলেটে সুরমার পানি ৫২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
 
এদিকে, সুরমা তীরবর্তী সিলেট নগর, সদর, দক্ষিণ সুরমা, বিশ্বনাথ ও কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট কোম্পানীগঞ্জ এলাকার বন্যা পরিস্থিতি খানিকটা উন্নতির দিকে রয়েছে। এখনো ৯০ ভাগ এলাকা প্লাবিত রয়েছে এবং পানিবন্দি রয়েছেন লাখ লাখ মানুষ।