বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তরিকুল ইসলামের উপর দফায় দফায় হামলার ঘটনা ঘটেছে। রাস্তায় ফেলে মারধরে গুরুতর আহত হয়েছেন এই শিক্ষক, তাকে উদ্ধার করে বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
রোববার বিকালে এই ঘটনায় বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানায় শাহিন হোসেন মল্লিক মামুনকে প্রধান আসামী ও ৪/৫ জনকে অজ্ঞাত করে মামলাটি দায়ের করেন হামলার শিকার শিক্ষক।
সহযোগী অধ্যাপক তরিকুল ইসলাম বলেন, বরিশাল নগরীর শীতলা খোলা এলাকায় একটি ১০ তলা ভবনে ফ্লাট ক্রয় করি আমি। তবে আমরা যারা ফ্লাট মালিক ছিলাম সবাই জিম্মি ছিলাম জমির মালিক শাহিন হোসেন মল্লিক মামুনের কাছে। প্লান অনুযায়ী আমরা মূল সিড়ি দিয়ে ভবনে প্রবেশের কথা থাকলেও মামুনের কারণে আমাদের ইমার্জেন্সী সিড়ি দিয়ে চলাফেরা করতে হতো। আর মামুন মূল সিড়ির জায়গায় দেয়াল তুলে নিচ তলা ও দ্বিতীয় তলায় মুমীতু কমিউনিটি সেন্টার গড়ে তুলেছিলেন অবৈধভাবে। ইমার্জেন্সী সিড়ি দিয়ে আমাদের চলাচল করার কারণে বিষয়টি ডেভলপার নজরুল ইসলামকে জানালে সে আমাদের নিয়ে সিটি করপোরেশনে অভিযোগ দেয়। তিনবার নোটিশ দেয়ার পর মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর নির্দেশে ৩০ মে আমাদের মূল পথে গড়ে তোলা দেয়াল ভেঙে ফেলে করপোরেশন। এই কারণে মামুন ক্ষিপ্ত ছিলো আমার উপর। শনিবার সন্ধ্যার দিকে মোবাইলে রিচার্জ করার জন্য লিফট থেকে নিচ তলায় নামার সাথে সাথেই হঠাৎ করে মামুন আমাকে গালাগাল শুরু করে এবং বলতে থাকে আমার জন্য দেয়াল ভাঙা হইছে। এরপর মামুন একটা ইট নিয়ে আমার মাথায় আঘাত করার চেষ্টা করলে সেটি আমার হাতে লাগে এবং ভীষণ ব্যথা পাই। পরে আমাকে লাথি, কিল ঘুষি মারা হয় পেটে। এরপর দৌড়ে ভবন থেকে বের হয়ে দ্রুত একটা রিক্সায় উঠি। তারপর মামুনের ৪/৫জন সহযোগি আমাকে ধাওয়া করে মুন্সী গ্যারেজ এলাকায় বসে রাস্তায় ফেলে মারধর করে। পরে স্থানীয়রা আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে।
তিনি আরও বলেন, মুমীতু কমিউনিটি সেন্টারে বরিশালের চিহ্নিত ক্রিমিনালরা কন্টিনিউ আড্ডা দিয়ে থাকে। মাদক ও জুয়া সহ নারীদের নিয়ে নানা অবৈধ কর্মকান্ড চলে এই কমিউনিটি সেন্টারে। বিষয়টি গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন অবগতও রয়েছেন। ২৯ মে এই কমিউনিটি সেন্টারে বসে মাদক সেবন করা চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা মামুনের সহযোগিতায় সাংবাদিক অপূর্ব অপুর উপর হামলা ও তাকে প্রাইভেটকারে করে অপহরণ চেষ্টা করে। এই ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া চার আসামীই বলেছেন মামুন মল্লিকের নির্দেশে সাংবাদিক অপুর উপর হামলা করেছে, তবুও পুলিশ মামুনকে গ্রেপ্তার করেনি। মামুন নিজেকে বড় বড় আওয়ামী লীগ নেতার স্বজন পরিচয় দিয়ে থাকে। আমার উপর হামলার ঘটনায় আমি রোববার বিকালে মামলা করেছি থানায়।
সরকারি ব্রজমোহন কলেজ শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক আলামিন সরোয়ার বলেন, কলেজের শিক্ষক তরিকুল ইসলামের উপর দফায় দফায় হামলার ঘটনায় রোববার দুপুরে আমরা জরুরী বৈঠকে বসেছি। আমরা বিভাগীয় কমিশনার, পুলিশ কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করবো। তাছাড়া বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির পক্ষ থেকেও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে হামলাকারির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত। শিক্ষার্থীরাও আমাদের সাথে থাকার জন্য সহমত পোষণ করেছেন।
বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশের ওসি আজিমুল করিম বলেন, শিক্ষক তরিকুল ইসলামের উপর হামলার ঘটনায় মামলা রুজু হয়েছে। অভিযুক্তদের দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।