উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারী বৃষ্টিপাতে নেত্রকোণায় বন্যা পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতির দিকে যাচ্ছে। রোববার (১৯ জুন) থেকে খালিয়াজুরিতে আটকেপড়া মানুষদের উদ্ধারে কাজ করবে সেনাবাহিনীর ১০৪ সদস্যের একটি দল। এ ছাড়া জেলার ১৮৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ২০ হাজার মানুষ ঠাঁই নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ।
এদিকে কলমাকান্দা ও দুর্গাপুরের পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। উপজেলা দুটির শহর থেকে শুরু করে সবগুলো গ্রামের বাড়িঘরে ঢুকে পড়েছে বন্যার পানি। এ ছাড়া খালিয়াজুরি, সদর, আটপাড়া ও বারহাট্টা উপজেলা মিলে প্রায় সাত লাখ মানুষ পানিবন্দি। জেলার সঙ্গে কলমাকান্দা ও দুর্গাপুরের সড়ক পথ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। ছয়টি উপজেলায় ২০ হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন।
রোববার সকাল ৯টার দিকে জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, খালিয়াজুরিতে আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধারে সেনাবাহিনীর ১০৪ সদস্যের একটি দল আজ রোববার থেকে কাজ করবে। জেলার দশ উপজেলায় ১৮৮টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে প্রায় ২০ হাজার মানুষ ঠাঁই নিয়েছে। বন্যাকবলিত প্রতিটি উপজেলায় কন্ট্রোল রুম খোলাসহ মেডিকেল টিম নিয়োজিত হয়েছে। জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন এনজিও, স্বেচ্ছাসেবীসহ প্রশাসনের লোকজন মানুষসহ গোবাদি পশুকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, বন্যাদুর্গত এলাকায় এরইমধ্যে ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাদ্য বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া ৬০ মেট্রিক টন জিআর চাল ও নগদ আড়াই লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, কলমাকান্দা ও দুর্গাপুরে ক্রমশ পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাচ্ছে। অসংখ্য মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, উপাসনালয় ডুবে যাচ্ছে। জেলার সঙ্গে কলমাকান্দার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় যথেষ্ট প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
দুর্গাপুর, কলমাকান্দা শহরের সব এলাকায় পানি থৈই থৈই করছে। শুকনো ধান, চালসহ ঘরের আসবাপত্র সব কিছু পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। অনেকেই বাসাবাড়ি ছেড়ে আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি ও আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিচ্ছেন।
প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে কলমাকান্দ-ঠাকুরাকোনা নবনির্মিত সড়কের স্থানে স্থানে মানুষ তাবু টাঙিয়ে গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগিসহ গৃহপালিত প্রাণি নিয়ে আশ্রয় নিচ্ছেন। ওই সড়কটির হিরাকান্দা, আশারানী, পাবই, বাহাদুরকান্দাসহ বেশ কিছু স্থান নিচু থাকায় বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। সড়কের কোথাও কোথাও কোমর পানি। এতে করে জেলার সঙ্গে উপজেলার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
নেত্রকোণা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মোহন লাল সৈকত জানান, ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোনার কংস, মোমেশ্বরী, ধনু, উব্দাখালিসহ কয়েকটি নদ নদীর পানি এখন বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রোববার পানি আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান তিনি। উব্দাখালি কলমাকান্দা পয়েন্টে বিপৎসীমার ১১২ সেন্টিমিটার, ধনু ও কংশ নদে ৬০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।