সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। ভারতের মেঘালয় থেকে আসা পাহাড়ি ঢল সীমান্ত নদী জাদুকাটা দিয়ে বিপদসীমার ওপর প্রবাহিত হচ্ছে।
এতে তাহিরপুর উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের ২৪৯টি গ্রামের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন উপজেলা প্রশাসন। বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন টাঙ্গুয়ার হাওর তীরবর্তী বসবাসকারী হাওর পাড়ের মানুষজন। গত দু,দিন ধরে অনেক পরিবার নৌকা ও বাঁশের মাচানে আশ্রয় নিয়ে দিন পার করছেন।
বসতবাড়ি পানিতে তলিয়ে থাকায় দেখা দিয়েছে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট। নিজেদের পাশাপাশি গবাদি পশুর খাদ্যের সংকট দেখা দেওয়ায় বিপাকে পড়েছেন কৃষক পরিবারগুলো। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় হাওরাঞ্চলের অনেকেই তাদের গবাদি পশুর আশা ছেড়ে দিয়েছেন।
শনিবার (১৮ জুন) সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিস সূত্রে জানা গেছে, জাদুকাটা নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
তাহিরপুর সদর ইউনিয়নের গোবিন্দ শ্রী গ্রামের কৃষক সেলিম আখঞ্জী জানান, ঘরের ভেতরে বুক পর্যন্ত পানি উঠেছে। পার্শ্ববর্তী উঁচু জায়গা না থাকায় ঘরে থাকা ১শত ৮০ মন ধান পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। অনেকেই চুলা জ্বালাতে পারছেন না। খুব কষ্টে পরিবার-পরিজন নিয়ে দিন পার করছেন কৃষক পরিবারগুলো ।
উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের রিপছান হাবিব জানান, কোনো রকমে ঘরের মাচান উঁচু করে বউ-বাচ্চা নিয়ে আছি। যেভাবে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে আর ঘরে থাকারও উপায় থাকবে না। আমাদের ইউনিয়নের প্রতিটি ঘরেই পানি প্রবেশ করেছে। ফলে পানি বন্দি অবস্থায় আমরা দিন পার করছি।
টাঙ্গুয়ার হাওর ব্যাবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আহমেদ কবির বলেন, গত তিন ধরে টাঙ্গুয়ার হাওরের তীরবর্তী গ্রামগুলোতে শিশু ও বয়োবৃদ্ধদের কান্নাকাটি চলছে। অনেকেই নাওয়াখাওয়া করতে না পেরে উপোস দিন কাটাচ্ছে।
উপজেলা কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বে থাকা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের রফিকুল ইসলাম বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার বন্যার্তদের কাছে পৌছে দেওয়া হচ্ছে। তবে সারা উপজেলার মানুষ বন্যা আক্রান্ত হওয়ায় অনেক পরিবারে ত্রাণ পৌছানো সম্ভব হচ্ছে না।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো: রায়হান কবির জানান, তাহিরপুর উপজেলার বন্যা দুর্গতদের উদ্ধারে প্রয়োজনীয় সংখ্যক স্পিড বোট, নৌকা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। অনেক বন্যার্তদের উদ্ধার করে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে। এবং পানি বন্দি পরিবারগুলোতে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানি পৌঁছে দেওয়ার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।