ভারতের মেঘালয় থেকে আসা পাহাড়ি ঢল আর প্রবল বৃষ্টিতে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় দুই জেলা সিলেট ও সুনামগঞ্জে হঠাৎ বড় বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। সিলেট বিভাগের অধিকাংশ স্থান ইতিমধ্যেই বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। নদ-নদী ও হাওরের পানি উপচে এই দুই জেলার অধিকাংশ একতলা বাড়িঘর ডুবে গেছে।
পানির উচ্চতা বাড়ায় বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দুই জেলাই পুরোপুরি বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। শুকনো খাবার, সুপেয় পানি আর একটু আশ্রয়ের অভাবে সেখানকার মানুষ চরম বিপর্যয়ে পড়েছে। দুই জেলার আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে গিয়েছে হাজার হাজার মানুষ। তবে মানুষের তুলনায় আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা কম হওয়ায় সেখানেও থাকতে হচ্ছে মানবেতরভাবে।
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক জফির সেতুর বাড়ি কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায়। গতকাল শুক্রবার দিনভর তিনি বন্যাদুর্গত মানুষের সহযোগিতা করতে এলাকায় গিয়েছিলেন। এ সময় তিনি বেশ কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্র ঘুরে দেখেন। এ অভিজ্ঞতার কথা তিনি বলেছেন। অধ্যাপক জফির বলেন, ‘বেলা ১১টা থেকে আমি বন্যাকবলিত সালুটিকর, খাগাইল, ছগাম, হুড়ারপাড়, ছামারাকান্দি, ফেদারগাঁও, বেতমুড়া, দীঘলবাঁকসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরেছি। পুরো উপজেলায় অমানবিক এক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। এক শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা।’
জফির সেতু আরও বলেন, ‘বিভিন্ন এলাকা ঘুরে একসময় দীঘলবাঁকেরপাড়-ফেদারগাঁও উচ্চবিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে যাই। কেন্দ্রে মানুষের শ্বাস ফেলার জায়গা নেই। মানুষে-পশুতে একাকার। খাওয়ার পানি নেই, খাবার নেই। বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত এই আশ্রয়কেন্দ্রে কাউকে এক প্যাকেট ত্রাণ নিয়ে আসতে দেখলাম না। চারতলা ভবনের এই আশ্রয়কেন্দ্রে তখন অন্তত এক হাজার মানুষ ছিলেন। আরও মানুষ আসছেন। তবে এখানে কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই। অসুস্থ মানুষ শুয়ে আছেন, বাচ্চারা কাঁদছে। চিকিৎসাসেবা পাওয়া তো দূরের কথা, খাবারই পাচ্ছেন না আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নেওয়া ব্যক্তিরা।’
সুত্র: প্রথম আলো