ফ্রিডম বাংলা নিউজ

শনিবার, নভেম্বর ২৩, ২০২৪ |

EN

নেত্রকোনায় লাখ মানুষ পানিবন্দি

নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: শুক্রবার, জুন ১৭, ২০২২

নেত্রকোনায় লাখ মানুষ পানিবন্দি
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারি বৃষ্টিপাতে নেত্রকোনার কলমাকান্দা, দুর্গাপুর ও বারহাট্টা উপজেলায় বন্যা হচ্ছে। বিশেষ করে কলমাকান্দার পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। উপজেলার আটটি ইউনিয়নের ৩৪৩ গ্রামের মধ্যে বেশিরভাগ গ্রাম বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে।  এতে প্রায় তিন লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

অসংখ্য রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়েছে। তিন সহস্রাধিক পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। জেলা ও উপজেলার সঙ্গে ইউনিয়নের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন তিন লক্ষাধিক মানুষ।

প্রশাসন ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কলমাকান্দা উপজেলার পরিস্থিতি সবচেয়ে বেশি খারাপ। উপজেলা শহরের চানপুর, নদীপাড়, পশ্চিমবাজার, পূর্ববাজার, কলেজ রোডসহ বেশ কিছু এলাকায় এখন হাঁটুপানি থেকে কোমরপানি। মানুষের বাড়িঘর, দোকান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরে এখন বন্যার পানিতে প্লাবিত। 

উপজেলার সঙ্গে সব ইউনিয়নের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। কলমাকান্দা সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, চান্দুয়াই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, উদয়পুর উচ্চ বিদ্যালয়সহ বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। 

ইতোমধ্যে তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শতাধিক বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। বন্যার পানিতে তিন সহস্রাধিক পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। গোবাদি পশুর খাদ্যসংকট দেখা দিচ্ছে।

কলমাকান্দা সরকারি কলেজের প্রভাষক রোপণ সাহা বলেন, ‘কলমাকান্দার আটটি ইউনিয়নের প্রায় সব গ্রামই প্লাবিত হচ্ছে। উপজেলার দুই লাখ ৪৫ হাজার মানুষের মধ্যে ৮৫ শতাংশ মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। পানি বাড়ছে, মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছেন।

নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মোহন লাল সৈকত জানান, ভারি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোনার কংস, মোমেশ্বরী, ধনু, উব্দাখালীসহ ছোট-বড় সব নদনদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে উব্দাখালী নদীর কলমাকান্দা পয়েন্টে বিপদসীমার ৮৫ সেন্টিমিটার ওপরে আছে। ওই পয়েন্টে বিপদসীমা ৬ দশমিক ৫৫ সেন্টিমিটার। বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টা থেকে শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে ৯৫ মিলিমিটার।

কলমাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবুল হাসেম বলেন, ‘কলমাকান্দার সব এলাকাই এখন বন্যার পানি। অবস্থা তেমন ভালো নয়, ইউএনও কার্যালয়, উপজেলা পরিষদসহ শহরে হাঁটুপানি থেকে কোমরপানি। মানুষ আশ্রয় নিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনীয় ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৪০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।’

জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ শুক্রবার সকালে বলেন, ‘কলমাকান্দা, দুর্গাপুর ও বারহাট্টা,মদন উপজেলার মধ্যে কলমাকান্দায় বেশি বন্যা হচ্ছে। ক্রমশ পরিস্থিতি অবনতি হচ্ছে। তিনটি উপজেলায় প্রচুর মানুষ পানিবন্দি। রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঢুবে যাচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে বন্যাকবলিত প্রতিটি উপজেলায় ২০ টন করে চাল ও   দুই লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে শুকনো খাবারসহ ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত আছে।’