প্রভাত চন্দ্র সরকার বয়স আশি ছুই ছুই,ফুলবাড়ী পৌর কালীবাড়ী বাজারে গুড়ের ব্যবসা করতেন। গত ৩ বছর পূর্বে হার্ট স্টক করেন তিনি। স্টকের কারণে তার বাম পাশ অচল হয়ে যায়। এতে তিনি শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন। কথাবার্তাও বলতে পারেন না। শুধু ইশারা করেন। দিনরাত বিছানাতেই শুয়ে থাকতেন,বিছানাতেই মলমূত্র ত্যাগ করেন। তা দিনরাত পরিষ্কার করেন তার সহধর্মিণী ও তার মেয়ে।
দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার শিবনগর ইউনিয়নের দক্ষিণ বাসুদেবপুর গ্রামে পরিবারের সাথে বসবাস করেন প্রভাত চন্দ্র ও শংকরি রানী দম্পতি। তাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। প্রভাত চন্দ্র উঠে বসতে চান। কিন্তু অভাবের সংসারে খরচ মিটিয়ে হুইলচেয়ার নেয়া ছিল তার দুঃস্বপ্ন।
বিষয়টি জানতে পেয়ে ছুটে যান ফুলবাড়ীর বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক আনন্দ কুমার গুপ্ত। তার অবস্থা দেখে বেশ মায়া হয় তার,দীর্ঘ ৩ বছর ধরে বিছানায় পড়ে থাকা সত্তরোর্ধ্ব প্রভাত চন্দ্র সরকারকে কিনে দিয়েছেন একটি হুইলচেয়ার। চেয়ার পেয়ে এখন উঠে বসেছেন প্রভাত চন্দ্র।
গতকাল শনিবার দুপুর ১টায় উপজেলার শিবনগর ইউনিয়নের দক্ষিণ বাসুদেবপুর গ্রামে সামাজিক সংগঠন আমরা করব জয়,সমাজকল্যাণ সংস্থার ব্যবস্থাপনায় নিজস্ব অর্থায়নে প্রভাত চন্দ্র সরকারকে একটি হুইলচেয়ার প্রদান করা হয়।
এসময় সামাজিক ও মানবিক সংগঠন আমরা করব জয় সমাজকল্যাণ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সাংবাদিক প্লাবন শুভ, সম্পাদক সোহেল রানা, সদস্য হায়দার আলী, মিঠুন দত্ত, জাকিরুল ইসলাম, আমিনুল ইসলাম, শাহরিয়ার আসিফ দিনার, এলাকাবাসী সাইফুল আলম শেখ, প্রভাত চন্দ্রের স্ত্রী শংকরি রানীসহ এলাকাবাসী উপস্থিত ছিলেন।
প্রভাত চন্দ্র সরকারের সহধর্মিণী শংকরি রানী সরকার বলেন, অভাবের সংসারে দীর্ঘ তিন বছর ধরে বিছানায় পড়ে আছে আমার স্বামী। একটি হুইলচেয়ারের জন্য তিনবছর ধরে এলাকার মেম্বার চেয়ারম্যানসহ উপজেলার বিভিন্ন দফতরে দফতরে ঘুরেছি। কেউ সহযোগিতা করেনি। ভোটের সময় আমার স্বামীকে বাড়ী থেকে ভ্যানে করে ভোট কেন্দ্রে নিয়ে যায় এলাকার চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। কিন্তু ভোট শেষে তাকে আর বাড়ী পৌঁছে দেননি। এটাই সমাজের চিত্র। যিনি আমার স্বামীর পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। আমি তার জন্য মন থেকে আশির্বাদ করি।
বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক আনন্দ কুমার গুপ্ত বলেন,সামাজিক ও মানবিক সংগঠন আমরা করব জয় সমাজকল্যাণ সংস্থার মাধ্যমে জানতে পারি দীর্ঘদিন থেকে বিছানায় পড়ে আছেন বৃদ্ধ প্রভাত চন্দ্র। তার পরিবারের পক্ষ থেকে একটি হুইলচেয়ারের আবেদন জানানো হয়েছে। পরে প্রভাত চন্দ্রের বাড়ীতে গিয়ে তার অবস্থা দেখে তাৎক্ষণিকভাবে হুইলচেয়ার দেয়ার সিদ্ধান্ত নেই। তিনি এখন হুইলচেয়ার বসছেন। আমরা সামাজিক ও মানবিক কাজে সবসময় এগিয়ে যাই। আগামীতেও এধরণের সেবামূলক কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।