কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে ‘নকল’ ব্যান্ডরোল ব্যবহার ও বিড়ি শ্রমিকদের নির্যাতনের প্রতিবাদে শ্রমিকেরা সড়ক অবরোধ করলে থানা পুলিশের সঙ্গে হোসেনাবাদ আকিজ বিড়ি কারখানার বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এঘটনায় বুধবার (৮ জুন) রাতে দৌলতপুর থানায় ২৯ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরো ১৫০-২০০ জনের নামে মামলা করা হয়েছে।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (৯ জুন) দুপুরে বুধবারে আটক রুবেল (৩২), সামসুল (৩৪), ওয়াসিম (৩৫) সহ চারজন শ্রমিককে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করেছে দৌলতপুর থানা পুলিশ। শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম জাবীদ হাসান।
এর আগে বুধবার সকালে আকিজ বিড়ি কারখানা বন্ধ ঘোষণার প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করলে পুলিশ শ্রমিকদের উপর লাঠিচার্জ করে। এসময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের সাথে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পুলিশ এক রাউন্ড ফাঁকা রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে সড়ক অবরোধকারী বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ওই দিন পুলিশ-শ্রমিক সংঘর্ষে এক পুলিশসহ অন্তত ৫ জন আহত হন। এরপর ফ্যাক্টরি বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
এদিকে বন্ধ ঘোষণার একদিন পর বৃহস্পতিবার হোসেনাবাদ আকিজ বিড়ি কারখানা খুলে দেয়া হয়। এদিন উদ্বেগ-উৎকন্ঠ নিয়ে শ্রমিকরা কাজে যোগ দেন। তবে মামলা ও গ্রেফতারের ভয়ে অনেকেই কাজে যোগ দেননি বলে জানিয়েছে শ্রমিকরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কারখানা এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
বিড়ি শ্রমিকরা জানান, সারা বছর ধরে দৌলতপুরের হোসেনাবাদে আকিজ বিড়ি ফ্যাক্টরির কর্মকর্তারা শ্রমিকদের ‘নকল’ ব্যান্ডরোল ব্যবহার করতে বাধ্য করে। কয়েক সপ্তাহ আগে থেকে এসব অভিযোগ তুলেছিলেন বিড়ি শ্রমিকেরা। ম্যানেজার পলাশ ও আমিলুনের নেতৃত্বে চলা জালিয়াতির প্রতিবাদ করায় হলো শ্রমিকদের অপরাধ। নকল ব্যান্ডরোল ব্যবহারে রাজি না হওয়ায় শ্রমিক নির্যতন চালায় মালিক পক্ষ। এ ঘটনার প্রতিবাদে ২০০ সাধারণ শ্রমিকের নামে মামলা করা হয়েছে। তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
বিড়ি শ্রমিকরা আরও বলেন, কেউ কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মতো অসম্পূর্ণ ব্যান্ডরোল ব্যবহারে আপত্তি জানালেই তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। কখনো কখনো শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন শ্রমিকরা। বিড়ি ফ্যাক্টরির এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে গত বুধবার কারখানার সামনের সড়ক অবরোধ করেন শ্রমিকরা। সে সময় পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় আমাদের ধাওয়া করে, লাঠিপেটা করে এবং ফাঁকা গুলি ছোড়ে আমাদের উদ্দ্যেশ্যে। এতে বেশ কয়েকজন শ্রমিক আহত হয়েছেন। অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় উল্টো আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। বিড়ি ফ্যাক্টরী পক্ষ নিয়ে পুলিশ আমাদের হয়রানি করছে। এদিকে চাকরি চলে যাওয়ার ভয়ে রয়েছে আমাদের। পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়ার ভয়ে আমরা পালিয়ে বেড়াচ্ছি।
শ্রমিক নেতা আবুল কালাম বলেন, আকিজ বিড়ি ফ্যাক্টরির ম্যানেজার রাসুল উদ্দিন পলাশ দীর্ঘদিন ধরে রাজস্ব ফাঁকি দিতে অসম্পূর্ণ ব্যান্ডরোল ব্যবহার করতে শ্রমিকদের বাধ্য করে আসছেন। যেসব শ্রমিক ম্যানেজারের কথামতো অর্ধেক ব্যান্ডরোল ব্যবহারে রাজি হননি তাদেরই কাজ থেকে বহিষ্কার করেছেন। এ ছাড়া তাদের কথামতো কাজ না করায় কয়েকজনকে নির্যাতনও করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে।
তবে এ বিষয়ে কথা বলতে ম্যানেজার রাসুল উদ্দিন পলাশের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেন নি।
এ বিষয়ে মথুরাপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ময়েন উদ্দিন বলেন, পুলিশ সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধেও মামলা করেছেন। এ মামলায় গ্রেফতারের ভয়ে বহু পুরুষ গ্রাম ছেড়েছেন। যাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে তাদের অনেকে কৃষক এবং দেশের বিভিন্ন জায়গায় চাকরি করেন। এ মামলা থেকে সাধারণ মানুষের নাম প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।
আকিজ বিড়ি ফ্যাক্টরিতে ব্যান্ডরোল জালিয়াতির অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগ কুষ্টিয়ার সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা সার্কেল-২-এর বি এম সাজ্জাদুল হক বলেন, আকিজ বিড়ি ফ্যাক্টরিতে ব্যান্ডরোল জালিয়াতির অভিযোগ আমরাও পেয়েছি। নমুনাও সংগ্রহ করেছি। সেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম জাবীদ হাসান বলেন, এ ঘটনায় ২৯ জনের নাম উল্লেখসহ আরও অজ্ঞাত ১৫০ থেকে ২০০ জনের নামে মামলা হয়েছে। মামলার এজাহারে থাকা চার আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। মামলার আসামিদের ধরতে কাজ করছে পুলিশ।