চর দখলকে কেন্দ্র করে বরিশাল ও ভোলার দুই গ্রামবাসীর সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে পুলিশ ২৮ রাউন্ড গুলি চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে ১২ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। অন্যদিকে গ্রামবাসীর ছোড়া ইটের আঘাতে ২/৩ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়ন এবং ভোলার সদর উপজেলার ভেদুুরিয়া ইউনিয়নের মধ্যবর্তী মহিষাদী গ্রামে এই ঘটনা ঘটে।
ভোলা সদর ও মেহেন্দীগঞ্জ থানার ইনচার্জ এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে পুলিশের ছোঁড়া শর্টগানের ফাঁকা গুলিতে আহতদের মধ্যে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
তারা হলেন- মো. নান্নু হাওলাদার (৪০), মো. রিপন হাওলাদার (২৫), মো. রিয়াজ (৩৫), মো. হানিফ (৩৪), মো. আলী হোসেন মোল্লা (১৮), মো. সাইফুল ইসলাম (১৮), মো. জামাল রাঢ়ি (৪০), মো. শাহজাহান (৭০) ফিরোজা বেগম (৫০), সাথী বেগম (৩০), আমেনা বেগম (৩০) ও আসমা বেগম (৩০)। আহত সকলেই মেহেন্দিগঞ্জের মহিষমারি গ্রামের বাসিন্দা।
প্রত্যক্ষদর্শী মেহেন্দিগঞ্জের শ্রীপুর ইউনিয়নের চৌকিদার মাহেব হোসেন জানান, শ্রীপুর ইউনিয়নের রুবেল কাজী লোকজন নিয়ে ভোলার ভেদুরিয়ায় জমি দখল করতে যাচ্ছিলেন। এই খবরে সেখানকার লোক জড়ো হলে উভয় গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। খবর পেয়ে দুই জেলার সীমান্তে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে শর্টগানের ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আনে।
শ্রীপুর ইউপি চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ বলেন, বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ এবং ভোলা সদরের ভেদুরিয়া এলাকার সীমানা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিরোধ চলছে। স্থানীয় রুবেল কাজী দীর্ঘদিন ধরে বরিশাল এবং ভোলার অংশের জমি দখলের চেষ্টা করে আসছে। এ নিয়ে প্রায়শই দুই জেলার বাসিন্দাদের মধ্যে হামলা এবং সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তারই ধারাবাহিকতায় বৃহম্পতিবার দুপুরে পুনরায় হামলা এবং গুলি বর্ষণের ঘটনা ঘটে।
অভিযুক্ত মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা কৃষকলীগের সহ-সভাপতি রুবেল কাজী বলেন, ঘটনার সময় আমি বরিশাল শহরে ছিলাম। জেনেছি ভোলার পুলিশ বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জে মহিষমারী গ্রামের মধ্যে ঢুকে নারী-পুরুষের ওপর অতর্কিত হামলা ও গুলিবর্ষণ করেছে। এতে মোট ১২ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। তাদেরকে শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
শ্রীপুর ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের (মহিষমারী) ইউপি সদস্য মনিরুল ইসলাম বলেন, তাদের মধ্যে নদীভাঙ্গনের শিকার ৩শ’ পরিবার মহিষমারী চরে বসতি স্থাপন করে থাকছে দশকের পর দশক। সেখানে সীমান্তবর্তী ভোলার চটকিমারী চরের লোকজন এই এলাকা তাদের দাবি করে প্রায়ই হামলা করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহম্পতিবার ভোলার লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আমাদের এলাকার লোকজনের বসত বাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় তারা বাধা দিতে গেলে পুলিশ শর্টগানের গুলি ছুঁড়ে। এতে ১২/১৩ জন নারী-পুরুষ আহত হয়।
মেহেন্দিগঞ্জ থানার ওসি মো. সফিকুল ইসলাম বলেন, মেহেন্দিগঞ্জ ও ভোলার সীমানা বিরোধ নিয়ে দুই এলাকার সীমান্তবর্তী খালের দুই পাশে লোকজন জড়ো হওয়ার খবর পেয়ে ভোলা সদর থানার এসআই ইনজামুল তার সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। এ সময় দুই পাড়ের লোকজন সীমানা বিরোধ নিয়ে ইট-পাথর নিক্ষেপ শুরু করে। উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ২৮ রাউন্ড শর্টগানের ফাঁকা গুলি ছোড়ে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।
ভোলা সদর থানার ওসি এনায়েত হোসেন বলেন, শ্রীপুর এবং ভেদুরিয়ার মধ্যবর্তী জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই দুই জেলার বাসিন্দাদের মধ্যে বিরোধ চলছে। এ নিয়ে আদালতে মামলাও চলছে। কিন্তু বিরোধপূর্ণ জমিতে বালু ভরাট করে ঘর নির্মাণ করছিলেন রুবেল কাজী। বৃহম্পতিবার অসংখ্য নারী-পুরুষ নিয়ে রুবেল কাজীর নেতৃত্বে বিরোধপূর্ণ জমি দখল করতে যায়।
খবর পেয়ে বরিশাল এবং ভোলা জেলা পুলিশের সদস্যরা তাদের বাধা দেয়। পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে তারা জমি দখলের জন্য অগ্রসর হয় এবং পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে দুইজন পুলিশ সদস্য আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ শর্টগান থেকে ২৮ রাউন্ড ফাঁকা গুলি চালায় বলে জানান ওসি।