সিলেটে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর এবার ভাঙন শুরু হয়েছে। দুর্গত গোয়াইনঘাটের ঐতিহ্যবাহী জাফলং চা বাগান রয়েছে হুমকির মুখে। ডাউকি নদীর ভাঙন থেকে বাগান রক্ষার দাবিতে চলছে মিছিল-মিটিং। বাগান কর্তৃপক্ষের দাবি, এ ভাঙন প্রাকৃতিক নয়, অবৈধ বালি উত্তোলনের ফলে দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে জৈন্তাপুরে বন্যার পানি নামার পর ভাঙন প্রকট আকার ধারণ করেছে। উপজেলার নয়াগাং ও সবুড়ী নদীর অব্যাহত ভাঙনে রাস্তাঘাট, বাড়িঘরসহ ফসলি জমি এরই মধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
সিলেটের সীমান্তবর্তী উপজেলাগুলোর মধ্যে জৈন্তাপুর অন্যতম। প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এ উপজেলার অন্যতম সৌন্দর্য নদ-নদী। বরাবরই এ নদীতীরবর্তী গ্রামগুলো ভাঙনের কবলে পড়েছে। এবারের বন্যার পর উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম নতুন করে হুমকিতে পড়েছে। নদীভাঙনে বাউরভাগ মল্লিফৌদ, কাটাখাল ও লামনীগ্রামের গ্রামীণ রাস্তাসহ শতাধিক বাড়িসহ কয়েক হাজার একর ফসলি জমি হুমকির মুখে। এরই মধ্যে ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে কাটাখাল রাস্তার দেড় কিলোমিটার। এলাকাবাসী জানান, ওয়াপদা বেড়িবাঁধের কারণে নয়াগাং নদীর পানি স্বাভাবিক গতির চেয়ে বেশি গতিতে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে নদীর প্রবল স্রোত এবং দীর্ঘ সময়ে নদীতে পানি থাকায় নদীতীরবর্তী মানুষের বসতভিটা ও চলাচলের রাস্তাঘাট ভাঙনের মুখে পড়েছে।
নদী ভাঙনকবলিত এলাকার লোকজনের ভাষ্যমতে, নদীতীরবর্তী মোয়াখাই, লামনীগ্রাম, কাটাখাল মল্লিফৌদ গ্রামগুলো রক্ষা করতে ব্লক স্থাপন জরুরি হয়ে পড়েছে। পুনরায় বন্যা দেখা দিলে এসব এলাকার মানুষ সীমাহীন ক্ষতির মুখে পড়বে।
স্থানীয় বাসিন্দা সোহেল আহমদ বলেন, নদীর উভয় অংশে অন্তত দুই হাজার মানুষের বসতবাড়ি ও ফসলি জমি রয়েছে। নদীভাঙনের শিকার হয়ে অনেকেই বসতভিটা ছেড়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। সোহেল আহমদ নদীভাঙনের হাত থেকে গ্রামের মানুষকে রক্ষা করতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে স্থায়ীভাবে নদীতীরবর্তী ব্লক স্থাপনে উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানান।
সাবেক ইউপি সদস্য ইসমাইল আলী বলেন, নয়াগাং ও সবুড়ী নদীর ভাঙনে কাটাখাল গ্রামের প্রায় দেড় কিলোমিটার রাস্তা নদীতে চলে গেছে। এখনো বসতবাড়ী, ফসলি জমি ভাঙছে। যে হারে নদীভাঙন দেখা দিয়েছে তাতে বর্ষা মৌসুমে রাস্তার আরো অনেক অংশ নদীর পেটে চলে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
নদীভাঙন অব্যাহত থাকলে নদীতীরবর্তী গ্রামগুলোর বাসিন্দাকে নিজের বসতভিটা ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে হবে বলে জানান জৈন্তাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ভাঙন থেকে এ জনপদ রক্ষায় প্রশাসন এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের এগিয়ে আসা প্রয়োজন।
জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামাল আহমদ বলেন, নদীভাঙনের ফলে বাউরভাগ কান্দি, মল্লিফৌদ, কাটাখাল, মোয়খাই ও লামনীগ্রামের বাসিন্দাদের রক্ষা কঠিন হয়ে পড়েছে। তিনি বিষয়টি স্থানীয় সংসদ সদস্য প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রীকে জানানো হবে বলেও উল্লেখ করেন।
অন্যদিকে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙন দেখা দিয়েছে ডাউকি নদীতীরবর্তী জাফলং চা বাগানে। এ ভাঙন প্রাকৃতিক নয় বলে দাবি এলাকাবাসীর। তাদের দাবি, একটি প্রভাবশালী চক্র নদী থেকে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করছে। এজন্য ভাঙন দেখা দিয়েছে। এলাকাবাসী সম্মিলিতভাবে বালি উত্তোলন বন্ধের দাবি জানিয়েছেন।
চা বাগানের পঞ্চায়েত প্রধান নিরঞ্জন গোয়ালা বলেন, বিলীন হয়ে যাওয়ার আগে এ চা বাগান রক্ষায় কোনো পদক্ষেপ না নিলে আমরা চা শ্রমিকরা বসে থাকব না। আমাদের অস্তিত্ব রক্ষায় মিছিল, মিটিং ও মানববন্ধনসহ লাগাতর আন্দোলন চালিয়ে যাব।
জাফলং চা বাগানের ব্যবস্থাপক কামাল হোসেন জানান, ভাঙনে এ চা বাগানের প্রায় ৩০০ একর ভূমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এখন অবশিষ্ট যেটুকু রয়েছে সেটুকুও হুমকির মুখে। পাথর-বালিখেকোদের দমন ও দ্রুত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না নিলে একসময় এ চা বাগানের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।
অন্যদিকে নিম্নাঞ্চল থেকে বন্যার পানি নেমে গেছে। সুরমা-কুশিয়ারা এখনো ভরাট রয়েছে। বৃহৎ নদীগুলো পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে সুরমা কুশিয়ারা নদীতেও ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছেন তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ বলেন, বন্যার পানি মাত্র নেমে গেছে। পুরো সিলেটে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোকে চিহ্নিত করার কাজ চলছে। এরপর কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে।