ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার শাহগঞ্জ বাজারে অবস্থিত অচিন্তপুর ইউনিয়ন পরিষদে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দুদল গ্রামবাসীর মধ্যে হামলা, ভাঙচুর, সংঘর্ষে পাঁচজন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে তিনজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
চিকিৎসাধীন অবস্থায় খান্দার গ্রামের মৃত জাফর আলীর পুত্র আবুল কালাম (৬০) মারা যান। নিশ্চিত করেন গৌরীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) মনিরুজ্জামান মজুমদার। সংঘর্ষের সময় ইউপি চেয়ারম্যানকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়।
তুচ্ছ ঘটনা কেন্দ্র করে গাগলা ও খান্দার গ্রামবাসীর মাঝে প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া কেন্দ্র করে শাহগঞ্জ বাজার রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। বাজারে আসা লোকজন দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করে পালায় এবং বন্ধ হয়ে যায় সব দোকানপাট।
হামলাকারীরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কক্ষে প্রবেশ করে চেয়ারম্যানের সহযোগী মমতাজ উদ্দিন হীরাকে (২৭) উপর্যুপরি কুপিয়ে গুরুতর আহত করেন। এ সময় ইউনিয়ন পরিষদের অপর একটি কক্ষে অচিন্তপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জায়েদুর রহমান আশ্রয় নিলে সেখানে প্রায় দুই ঘণ্টা অবরুদ্ধ ছিলেন।
গৌরীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) মনিরুজ্জামান মজুমদারের নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
অচিন্তপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জায়েদুর রহমান জানান, ইউনিয়ন পরিষদের ৪নং ওয়ার্ডের মেম্বার সুবুর মিয়া গাগলা গ্রামের বাসিন্দা কাঠমিস্ত্রি আব্দুর রশিদের নিকট থেকে ‘খাট’ কিনেন। কাঠের দরদামকে কেন্দ্র করে দুজনের মাঝে গত ৩০ মে হাতাহাতি হয়। সুবুর মেম্বারের লোক নয়নের নেতৃত্বে কয়েকজন গিয়ে কাঠমিন্ত্রী আব্দুর রাশিদকে ১ জুন শাসিয়ে আসে। এ নিয়ে মারামারিও হয়। এ ঘটনা কেন্দ্র করে বুধবার রাতে দুপক্ষকে নিয়ে অমীমাংসিতভাবে সালিশ শেষ হয়।
তিনি আরও বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে জোহরের নামাজের পর সালিশ হওয়ার সময় নির্ধারণ ছিল। এ সময় প্রচণ্ড বৃষ্টি হওয়ায় সালিশ বিলম্ব হয়। পরে সিদ্ধান্ত হয় আসরের নামাজের পর সালিশ অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে গাগলা গ্রামের চান মিয়ার পুত্র রাকিবুল ইসলাম (২৮) শাহগঞ্জ বাজারে আসলে খান্দারের লোকজন তাকে ধরে নিয়ে মারধর করে। এর পরেই খান্দার ও গাগলার কতিপয় লোকজন সংঘর্ষ ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ায় লিপ্ত হন। ইউনিয়ন পরিষদে ইটপাথর নিক্ষেপ করে এবং কুপিয়ে দরজা-জানালা ভাঙচুর করে। পরিষদের অফিসকক্ষে ঢুকে গাগলা গ্রামের মমতাজ উদ্দিন হীরাকে কুপিয়ে পুরো অফিস রক্তাক্ত করেছে।
গৌরীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) মনিরুজ্জামান মজুমদার জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় খান্দার গ্রামের মৃত জাফর আলীর ছেলে আবুল কালাম (৬০) নিহত হন। এ ছাড়া গাগলা গ্রামের চান মিয়ার ছেলে রাকিবুল ইসলাম (২৮), মহিউদ্দিন বাদশার পুত্র মমতাজ উদ্দিন হীরা (২৭), আব্দুর রাজ্জাকের পুত্র শেখ হালিম (৩৮) ও শাহজাহান (৩০) আহতাবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এখন পর্যন্ত কোনো পক্ষ অভিযোগ দেয়নি।
অন্যদিকে মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে গেলে খান্দার গ্রামের লোকজন গাগলা গ্রামে এসে বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করেছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত (রাত ১১টা ২০ মিনিটে) গৌরীপুর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।