ফ্রিডম বাংলা নিউজ

বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১, ২০২৪ |

EN

কলেজ শিক্ষকের হাতের কবজি বিচ্ছিন্ন করার ঘটনায় ২৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি | আপডেট: শুক্রবার, জুন ৩, ২০২২

কলেজ শিক্ষকের হাতের কবজি বিচ্ছিন্ন করার ঘটনায় ২৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা
কুষ্টিয়ায় পূর্বশত্রুতার জের ধরে কলেজশিক্ষকের ডান হাতের কবজি বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার ঘটনায় ২৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এঘটনায় পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেন নি। বুধবার (০১ জুন) কুষ্টিয়া মডেল থানা কলেজশিক্ষকের ছেলে বাদী হয়ে ২৬ জনের নাম উল্লেখ সহ অজ্ঞাত আরও ৫-৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাব্বিরুল আলম এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এ ঘটনার প্রায় ৩৬ ঘন্টা পর  হত্যাচেষ্টা, চুরি ছিনতাইসহ কয়েকটি ধারায় ২৬ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৫-৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। 

আসামিরা হলেন- কুমারখালী উপজেলার শালঘর মধুয়া গ্রামের  মৃত আফজাল হোসেনের ছেলে জাফর, মৃত ময়নুদ্দিনের ছেলে লিটন ও সামিউল করিম আন্নু, মৃত মনসুর আলীর ছেলে নিজাম ও রফিকুল, জোয়াদ আলীর ছেলে রতন, গোপাল শেখের ছেলে আমানত ও আরিফুল, সোলেমানের ছেলে মোশারফ হোসেন মশা, মৃত মোকাদ্দেস হোসেনের ছেলে নাজিম উদ্দিন ও আব্দুর রহমান, আব্দুল খালেকের ছেলে সামাদ, আইয়ুব আলীর ছেলে মুহাইমেন, সামেদ আলীর ছেলে হালিম, মৃত আজমত আলীর ছেলে আমজাদ, মৃত আফজাল শেখের ছেলে মিজানুর, মৃত সরোয়ার হোসেনের ছেলে সুজন, মৃত গনির উদ্দিনের ছেলে হাসানুজ্জামান চান্নু, মজিবর রহমানের ছেলে জুলফিকার, আজাহার আলীর ছেলে শাকিল, মৃত ময়েন উদ্দিনের ছেলে আব্দুল লতিফ, আতিয়ারের ছেলে আলমগীর, সানাউল্লাহ ছেলের শরিফুল, মজিবর রহমানের ছেলে জাহাঙ্গীর, আব্দুল খালেকের ছেলে পলাশ এবং গোপাল শেখের ছেলে মুকুল।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে , গত ৩১ মে দুপুরে কুমারখালী উপজেলার বাশগ্রাম আলাউদ্দি আহমেদ ডিগ্রী কলেজ থেকে কুষ্টিয়া শহরে ফিরছিলেন তোফাজ্জেল হোসেন। এসময় সদর উপজেলার বংশীতলা নতুন ব্রিজের উপর রাস্তার কাজে ব্যবহৃত রোলার মেশিন দাঁড়ানো ছিলো এবং সেই রোলার মেশিনের পিছনে পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক আগে থেকেই এজাহার নামীয় আসামীরা লুকিয়ে ছিলো। ঘটনাস্থলে তোফাজ্জেল হোসেন মটরসাইকেল যোগে পৌছা মাত্রই পূর্বশত্রুতার জের ধরে তার পথরোধ করে আসামীরা দেশীয় ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা করে। ধারালো অস্ত্রের উপর্যুপরি আঘাতে তার ডান হাতের কবজি কেটে দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে এবং দেহের বিভিন্ন স্থানে কুপিয়ে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে ওই শিক্ষকের সাথে থাকা দেড় লক্ষ টাকাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে পালিয়ে যায়।

আহত শিক্ষকের ছেলে নাজমুস সাকিব হাসিব বলেন, স্থানীয় রুকি শেখের তিন সন্তান ও তার স্ত্রী দীর্ঘদিন ধরে আমার বাবার আশ্রয়ে থাকেন। কিছুদিন আগে হঠাৎ রুকি এসে তার সন্তানদের তার কাছে ফিরে যাওয়ার কথা বলে। কিন্তু তার স্ত্রী ও সন্তানরা রুকির কাছে না গিয়ে আমার বাবার কাছেই থেকে যায়। এনিয়ে আমার বাবার সাথে রুকির সামাজিক বিরোধ চলছিল। এই বিরোধের জেরেই রুকি শেখ স্থানীয় লিটন জাফর আরিফুল, সামাদ, নাজিম সহ আরও অনেকেই নিয়ে বাবার ওপর হামলা চালিয়ে বাবার হাতের কবজি বিচ্ছিন্ন করে দেয়।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাবাকে নিয়ে গত মঙ্গলবার রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসেছি। শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে কিছুটা উন্নত। আমরা মামলা করেছি। অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

স্থানীয়রা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আধিপত্য নিয়ন্ত্রনকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ চলে আসছিলো। ইতোপূর্বে গত দুই বছরে এই দুই পক্ষের মধ্যে একাধিক হামলা পাল্টা হামলা, ভাংচুর লুটপাটসহ হত্যাকান্ডের ঘটনায় একাধিক মামলাও হয়েছে। প্রায়ই এসব মামলার আসামীরা গ্রেফতার এড়াতে গ্রামছাড়া হওয়ায় গ্রাম হয়ে যায় পুরুষশুন্য। এরা অনেকেই আদালত থেকে জামিন নিয়ে নিজ গ্রাম ও বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র বসবাস করেন। সেই সাথে পক্ষগণ প্রতিপক্ষের লোকজনকে বাগে পেলেই হামলা ও মারধর করে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে পালিয়ে যায়। বলা যায়, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আইন শৃংখলা বাহিনীর কোন তৎপরতাও কাজে আসছে না। আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে চরম উদ্বিগ্নের মধ্যে ভীতসন্ত্রস্ত জীবন যাপন করছি।

আলাউদ্দিন আহম্মেদ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক আলী হোসেন বলেন, মঙ্গলবার দুপুরে কলেজ থেকে শহরে ফেরার পথে পূর্বপরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে প্রতিপক্ষের লোকজন তোফাজ্জেল বিশ্বাসের ওপর হামলা চালায়। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তার ডান হাতের কবজি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এছাড়া শরীরের বিভিন্ন জায়গায় জখম হয়েছে। পূর্ব শত্রুতার জেরে তার ওপর এ হামলা করা হয়েছে।

কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) আশরাফুল আলম বলেন, হাতের কবজি বিচ্ছিন্ন অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল মঙ্গলবার দুপুরে। একইদিন রাতে তাকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে গেছে রোগীর স্বজনরা। 

এ বিষয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাব্বিরুল আলম বলেন, কলেজশিক্ষকের হাতের হাতের কবজি বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। ২৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। দোষীদের আইনের আওতায় আনতে পুলিশ কাজ করছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উল্লেখ্য, আহত কলেজশিক্ষক তোফাজ্জেল বিশ্বাস (৫২) কুমারখালী উপজেলার বাঁশগ্রাম আলাউদ্দিন আহম্মেদ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। তিনি কুমারখালী বাগুলাট ইউনিয়নের শালঘর মধুয়া এলাকার জালা বিশ্বাসের ছেলে।

এরআগে মঙ্গলবার (৩১ মে) বেলা ২টার দিকে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার জিয়ারখী ইউনিয়নের বংশীতলা নতুন সেতুর ওপর প্রতিপক্ষের লোকজনের ধারালো অস্ত্রের  কলেজশিক্ষকের কবজি বিচ্ছিন্ন হয়। এছাড়া এলোপাতাড়িভাবে কোপে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় জখম হয়েছে।