দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলায় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খেলার মাঠে বাড়ি নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মাহবুবার রহমানের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ওই বিদ্যালয়ের সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ (ইউএনও) বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। পরে ইউএনও বাড়ি নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, উপজেলার দিওড় ইউনিয়নের শৈলাহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠের ওপর স্কুলের প্রধান শিক্ষক বাড়ি নির্মাণ কাজ শুরু করেছেন। বাড়িটি নির্মাণ হলে বিদ্যালয়ের কমলমতি শিক্ষার্থীদের খেলার পরিবেশ নষ্ট হবে এবং শিশুদের বিদ্যালয়ে যাতায়াতের কোনো রাস্তা থাকবে না। তাই দ্রুত বাড়িটির নির্মাণ কাজ বন্ধ করে শিশুদের খেলার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি জানানো হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিদ্যালয়টি সীমানাপ্রাচীর দিয়ে ঘেরা। প্রাচীরের পশ্চিম দিকে বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। মাঝখানে শিশুদের জন্য রয়েছে খেলার মাঠ। মাঠের মাঝের অংশে সিসি ঢালাই দিয়ে বাড়ি নির্মাণ শুরু করেন প্রধান শিক্ষক মাহাবুবার রহমান। তবে এখন কাজ বন্ধ রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার দিওড় ইউনিয়নের শৈলাহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার প্রথমের দিকে বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল। বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিবন্ধন শর্ত অনুযায়ী প্রধান শিক্ষক মাহবুবার রহমান ১৯৯৩ সালের নভেম্বর মাসে ২৯ শতাংশ জমি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর দানপত্র দলিলের মাধ্যমে রেজিস্ট্রি করে দেন। এর পরের বছর ১৯৯৪ সালে একই দাগে আরও ৩৩ শতাংশ জমি রেজিস্ট্রি করে দেন প্রধান শিক্ষক।
এরপর ২০১৩ সালে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ হয়। সম্প্রতি ওই ৬২ শতাংশ জমি মধ্যে ৩৩ শতাংশ জমি বিদ্যালয়ের দেখিয়ে ২৯ শতাংশ নিজের বলে প্রধান শিক্ষক দখলে নিয়ে ওই স্থানে বাড়ি নির্মাণ কাজ শুরু করেন।
বিদ্যালয়ের আলমাস নামে এক শিক্ষার্থী বলে, বড় স্যার, যেখানে বাড়ি নির্মাণ করছেন এতে আমাদের খেলার মাঠ থাকবে না। তাছাড়া বিদ্যালয়ের পরিবেশও নষ্ট হয়ে যাবে। এখানে বাড়ি নির্মাণ করলে আমাদের বেশ সমস্যা হবে।
মিনারা নামে আরেক শিক্ষার্থী বলে, আমরা ছোট্ট মানুষ। আমরা খেলার পরিবেশ চাই। বাড়ি নির্মাণের জন্য স্যারের অনেক জায়গা রয়েছে।
মাঠে প্রধান শিক্ষকের বাড়ি নির্মাণের বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ইমরুল কায়েস বলেন, খেলার মাঠ দখল করে প্রধান শিক্ষক মাহবুবার রহমানের বাড়ি নির্মাণ সংক্রান্ত একটি অভিযোগ বিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর দিয়েছি। প্রধান শিক্ষক ইউএনওর শুনানিতে অংশগ্রহণ না করে জোরপূর্বক বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করছেন।
তবে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহবুবার রহমান বলেন, আমার বিষয়ে আনিত অভিযোগ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন। আমি আমার নিজের জায়গাতেই বাড়ি নির্মাণ করছি।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মিনারা পারভীন বলেন, আমি ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এরইমধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে বিদ্যালয়ের মাঠে বাড়ি নির্মাণ কাজ বন্ধ করা হয়েছে।
বিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পরিমল কুমার সরকার বলেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খেলার মাঠে বিল্ডিং নির্মাণ চলছে এমন সংবাদ পেয়ে কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।