ফ্রিডম বাংলা নিউজ

শুক্রবার, নভেম্বর ২২, ২০২৪ |

EN

ফুলবাড়ীতে শ্রমিকসংকটে চাষিদের ভরসা এখন হারভেস্টার ও মাড়াই যন্ত্র

মেহেদী হাসান, ফুলবাড়ী, দিনাজপুর | আপডেট: শনিবার, মে ২৮, ২০২২

ফুলবাড়ীতে শ্রমিকসংকটে চাষিদের ভরসা এখন হারভেস্টার ও মাড়াই যন্ত্র
দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলায় বোরো ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ শুরু হয়েছে পুরোদমে। একসঙ্গে এ কর্মযজ্ঞ শুরু হওয়ায় সব জায়গায় শ্রমিকের সংকট দেখা দিয়েছে। বাড়তি মজুরি দিয়েও শ্রমিক মিলছে না। তাই কৃষকেরা বাধ্য হয়ে হারভেস্টার মেশিনে ধান কাটছেন আর ধান মাড়াই করছেন মাড়াইযন্ত্রে। এই মেশিন গুলোই এখন তাদের ভরসা।

ফুলবাড়ী পৌর এলাকাসহ উপজেলার এলুয়ারি, আলাদিপুর, কাজিহাল, বেতদীঘি, খয়েরবাড়ী, দৌলতপুর ও শিবনগর ইউনিয়নে পুরোদমে বোরো কাটা-মাড়াই শুরু হয়েছে। বৈরী আবহাওয়া ও ঝড়বৃষ্টির শঙ্কায় কৃষকেরা ধান কাটায় তোড়জোড় করছেন। ৮০০-৯০০ টাকা মজুরি দিয়েও শ্রমিক মিলছে না। ছোট ছোট কৃষক ও বর্গাচাষি নিজেরাই খেতের ধান কাটছেন। আর এক হাজার টাকার বিনিময়ে ধান মাড়াই করছেন। এতে করে ধান কাটা হারভেস্টার ও ধান মাড়াইযন্ত্রের চাহিদা বেড়েছে কয়েক গুণ।

ফুলবাড়ী পৌর এলাকার কাঁটাবাড়ী গ্রামের কৃষক তমাল হোসেন বলেন, দু’দফার ঝড়ো বৃষ্টিতে ধানের গাছ মাটিতে পানির মধ্যে নুয়ে পড়ে। কৃষিশ্রমিকের সংকটের কারণে ধান কাটতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাই তিনি হারভেস্টার মেশিনে ধান কাটছেন। এতে সময় এবং টাকা দুটোই সাশ্রয় হচ্ছে বলে তিি মনে করেন।
উপজেলার চকমথুরা গ্রামের কৃষক ধর্মচন্দ্র বর্মন বলেন, বিঘাপ্রতি জমির ধান কাটা-মাড়াইয়ের জন্য সাড়ে তিন মণ ধানের মজুরিতে শ্রমিকদের সঙ্গে চুক্তি হয় তার। তার তিন বিঘা ধানিজমি আছে। তবে শ্রমিকেরা কিছু ধান কাটার পর আর আসছেন না। এদিকে দফায় দফায় বৃষ্টিতে জমিতে থাকা ধান নষ্ট হওয়ার উপক্রম। আশপাশের এলাকায় শ্রমিকদের মজুরি বাড়িয়ে দিয়েছেন কৃষকেরা। এতে চুক্তিবদ্ধ অনেক কৃষক চরম বেকায়দায় পড়েছেন। চুক্তিবদ্ধ কৃষকের কাজ না করে অন্যত্র বেশি মজুরিতে কাজ করছেন শ্রমিকেরা।

রিকশাভ্যান চালক মোরশেদ আলী জানান, সারাদিন রিকশাভ্যান চালিয়ে যে আয় হতো, ধান কেটে তার দ্বিগুণ আয় করছেন তিনি। 
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় কৃষকের সংখ্যা ২০১৪ সালের কৃষক কার্ড অনুযায়ী ৩২ হাজার ৫৫৫ জন। চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১৪ হাজার ১২০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে। ব্রি-ধান ৮১, ব্রি-ধান ৮৪, ব্রি-ধান ৮৮, ব্রি-ধান ৮৯, ব্রি-ধান ২৮, জিরাশাইলসহ হাইব্রিড জাতের বেশ কিছু ধানের আবাদ করেছেন কৃষকেরা। এ ছাড়া ১ বিঘা জমিতে প্রথমবারের মতো চাষ করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু ধান-১০০।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রুম্মান আক্তার বলেন, বেশ কিছুদিন থেকে এলাকায় ধান কাটা-মাড়াইয়ের কাজ শুরু হয়েছে যা প্রায় শেষের পথে।

কৃষিশ্রমিকের সংকটের কারণে কৃষকরা ধান কাটাই মাড়াই কাজে হারবেস্টার মেশিনকেই বেছে নিচ্ছেন। তবে চাহিদার তুলনায় মেশিন কম হওয়ায় এ নিয়ে সমস্যায় পড়ছেন কৃষকরা। উপজেলায় সরকারি ভুর্তকি মূল্যে ৯ জন কৃষককের কাছে ৯টি হারবেস্টার মেশিন প্রদান করা হয়েছে। মেশিনগুলো মাঠে কাজ করছে। একই সাথে স্থানীয়ভাবে নির্মিত পল্লী চিকিৎসক আনোয়ার হোসেনের দুইটি মেশিনও ধান কাটাই মাড়াইয়ের কাজে নিয়োজিত রয়েছে। তিনি বলেন, যে কেউ চাইলেই এই মেশিন গুলো আবেদনের প্রেক্ষিতে  ভুর্তকি মূল্যে নিতে পারবেন।
এই সময় জমিতে পানি জমে থাকলেও ধানের তেমন কোনো ক্ষতি হবে না।