কুষ্টিয়া শহরের অলিগলিতে গড়ে উঠেছে নাম সর্বস্ব ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টার। অনুমোদনবিহীন এসব ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারে প্রায়ই রোগীর মৃত্যু হচ্ছে।
নেই নিজস্ব ডাক্তার, নাই প্রশিক্ষিত নার্স, দক্ষ টেকনিশিয়ানও নেই, ভালোমানের কোন ইকুইপমেন্টও নেই। মন চাইলেই সহজেই ক্লিনিক- ডায়াগনস্টিক করছেন। শহরে ক্লিনিকের জন্য রেডি বিল্ডিং, মেশিনপত্র অপেক্ষা করছে। এই শহরে রাতে চিন্তা করে সকালেই ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক হওয়া যায়। এভাবেই চলছে এ জেলায় ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যবসা।
এছাড়া টাকার জন্য রোগীকে নির্যাতন এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার মান নিয়েও অভিযোগ উঠছে হরহামেশায়। এ যেন চিকিৎসার নামে চলছে বানিজ্য। এতে সংশ্লিষ্ট বিভাগের নজরদারির অভাবকে দুষছেন ভুক্তভোগীরা।
জেলা সিভিল সার্জন অফিসের দেয়া তথ্য মতে, জেলায় অনুমোদনপ্রাপ্ত ১৪০টি প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। এদের মধ্যেও কারো কারো মেয়াদউত্তীর্ণ হয়ে গেছে। কারো কারো পরিবেশসহ অন্য সহযোগী অনুমোদনও নেই। তবে অবাক করা তথ্য হলো এর বাইরেও অনুমোদনহীন ৬০থেকে ৭০টি বেসরকারি ক্লিনিক হাসপাতাল অবাদে চলছে। সুষ্ঠু তদারকির অভাবে এসব হাসপাতাল ক্লিনিকের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বেঁড়েই চলেছে। পাল্লা দিয়ে চিকিৎসার নামে রোগীদের সঙ্গে প্রতারণাও বাড়ছে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ মানুষ ও জেলার সচেতন মহলও।
অন্যদিকে অভিযোগ রয়েছে অনুমোদন থাকলেও, অধিকাংশ ক্লিনিকে প্রয়োজনীয় ডাক্তার, নার্স, অপারেশন থিয়েটার ছাড়াই চলে। অনৈতিক সুবিধার বিনিময়ে অনেক ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
তবে এ ব্যাপারে কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন ডাঃ এইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম বলছেন, আমরা উপজেলা পযার্য়ে বিষয়টি জানিয়েছি। আসলে এই সময় অনেক প্রোগ্রাম তো যদিও সরকার ৭২ঘণ্টার মধ্যে অনিবন্ধিত ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন। তবে এই সময়ে ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করা সম্ভব হবে না। কেনো না এমন জায়গায় ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক চলছে তা আমাদেরই জানা নেই। তবে সরকারের সিদ্ধান্ত অবশ্যই মানবো। আমরা তো সরকারের বাইরে না এমনটাই বলেন এই কর্মকর্তা।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বৃহস্পতিবার (২৬ মে) থেকে ৭২ঘণ্টার মধ্যে অনিবন্ধিত ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক বন্ধের নির্দেশ দিলেও সেই সময় সীমা শেষ হলেও এ জেলায় এখন পর্যন্ত অনিবন্ধিত ক্লিনিক অথবা ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধের অভিযানের খবর পাওয়া যায়নি।
কুষ্টিয়া সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি রফিকুল আলম টুকু বলেন, এ জেলায় চিকিৎসার নামে নৈরাজ্য চলছে। মন চাইলেই প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক হয়ে যাচ্ছেন। কিছু টাকা থাকলে রাতে চিন্তা করে সকালেই ক্লিনিক করা যায়, ব্যাপারটা এমনই হয়ে দাড়িয়েছে। কিছু অসহায় সাধারণ মানুষের অসুখকে পুঁজি করে তারা ব্যবসা করে নিচ্ছেন। চিকিৎসার নামে নানাভাবে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষও।
৭২ঘণ্টার মধ্যে অনিবন্ধিত ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তাদের এমন সিদ্ধান্তকে সাদুবাদ জানিয়ে এদের বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে এ জেলায় চিকিৎসার ভয়াবহ চিত্র ধারণ করবে।