কক্সবাজারে মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণে বিজিবির জব্দ করা বিপুল পরিমাণ বিভিন্ন প্রকার মাদক ধ্বংস করা হয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য দেখানো হয়েছে ৩শত ৯৫ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। বিজিবি কক্সবাজার রিজিয়ন সদর দফতর প্রশিক্ষণ মাঠে শুক্রবার 'মাদকদ্রব্য ধ্বংসকরণ' অনুষ্ঠানে এসব মাদক ধ্বংস করা হয়।
এ সময় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, মাদকরোধে কঠোর হতে কঠোরত হতে হবে, অপরাধীদের কোন দলীয় পরিচয় নেই।সীমান্ত হচ্ছে চ্যালেঞ্জিং। মিয়ানমার সীমান্ত রয়েছে ২৭৪ কিলোমিটার। তাই, সীমান্তে কাজ করা অনেক দূরহ ব্যাপার। তাই, বিজিবিকে হেলিকপ্টার থেকে শুরু অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে।
বিজিবির মহা পরিচালক মেজর জেনারেল সাকিল আহমেদের সভাপতিত্বে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন। সে নীতিতে কাজ করছে সরকার। মাদক সমাজকে ধ্বংস করছে। এতে পরিবার ও একটি দেশ ধ্বংস স্তূপে পরিণত হয়। তাই মাদকের সঙ্গে জড়িত সকলকে আইনের আওতায় আনতে হবে। সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে। তাদের বিচারকার্য সম্পন্ন করা হলে বাকিরাও সতর্ক হবে।
মন্ত্রী বলেন, পুলিশ-বিজিবি-কোস্টগার্ড-মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করছে। মাদক নির্মূলে কঠোর হয়ে কাজ করতে হবে। মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে জনপ্রতিনিধি, সমাজপতি সকলকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে শপথ নিতে হবে। সিদ্ধান্ত নিতে হবে সমাজে যেন মাদক ও মাদক ব্যবসায়ী স্থান না পায়। এ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করা সম্ভব হলে মাদক নিয়ন্ত্রণে আসবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের মতে, মাদক নির্মূলেও সফল হতে হবে। সরকারের সদিচ্ছা রয়েছে, আমরা সফল হব। আমরা এ যুদ্ধে জয়ী হবো। এজন্য একযোগে কাজ করতে হবে। অন্যথায় নতুন প্রজন্ম পথ হারিয়ে ফেলবে।
বিজিবি কক্সবাজার রিজিয়নের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার নাজম - উস সাকিব জানান, অনুষ্ঠানে ৯০ লাখ ৮০ হাজার ৫৭৭পিস ইয়াবা,
২৩.৭৫১৮কেজি ক্রিস্টাল মেথ আইস,১হাজার ৩৪৩বোতল বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মদ, ৬ হাজার ৭৬৭ক্যান বিয়ার, ২০৬ লিটার বাংলা মদ, ৬ কেজি গাঁজা, জুলিয়াম ট্যাবলেট ধ্বংস করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে ২০২১ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বিজিবি কক্সবাজারের রিজয়নের আওয়াতায় বিভিন্ন ব্যাটালিয়ন কর্তৃক জব্দ করা মাদকের হিসাবও দেয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, কক্সবাজার সদর-রামু আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য কানিজ ফাতেমা মোস্তাক, বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাকিল আহমেদ এসপিপি, রামু ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মো: ফখরুল আহসান, কক্সবাজার ত্রাণ ও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কমিশনার রেজোয়ান হায়াত, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো: মামুনুর রশীদ সহ উচ্চপদস্থ সরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
ইটিসহ সামরিক-বেসামরিক, বিচার বিভাগ ও শৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
অনুষ্ঠানের শুরুতে চেকপোস্টের কার্যক্রমের ওপর ডেমো ও রিজিয়নের বিভিন্ন কার্যক্রমের উপর ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করা হয়।
বিজিবি জানিয়েছে, গত ৩ বছরে ইয়াবা উদ্ধারের ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা রেখেছে বিজিবির কক্সবাজার রিজিয়নের রামু সেক্টর। তারা ৩ বছরে মোট ৩ কোটি ১৬ লাখ ৭২ হাজার ৭৪৩ পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে।
এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে আটককৃত ১হাজার ৯৭৯ জন আসামীসহ ১ কোটি ২৪ লাখ ৪৩০ পিস ইয়াবা, ২৭ হাজার ৪৪৮ কেজি ক্রিস্টাল মেথ আইস, ১ হাজার ৩০৫ ক্যান বিভিন্ন প্রকার বিয়ার, ৯৮ বোতল বিভিন্ন প্রকার মদ, ১৩৭ বোতল ফেন্সিডিল, ৫৮ লাখ ৬ হাজার ৮০০ লিটার বাংলা মদ, ২২ হাজার ৯৯৫ কেজি গাঁজ, ৩ হাজার ১৫০ কেজি আফিম মামলার মাধ্যমে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।