ফ্রিডমবাংলানিউজ ডেস্ক | আপডেট: রবিবার, সেপ্টেম্বর ৫, ২০২১
গত
বুধবার রাতে মা আমেনা
খাতুনকে নিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল
কলেজ (চমেক) হাসপাতালে এসেছিলেন গার্মেন্ট কর্মচারী রিয়াজুল। এ সময় তার
মায়ের ডায়রিয়াজনিত সমস্যা দেখা দিলে ১৩
নম্বর মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি দেন জরুরি বিভাগের
চিকিৎসক। স্বাভাবিক সময়ে এমনিতেই রোগীর
চাপে নাকাল থাকে এই ওয়ার্ড।
সেদিনও ছিল। তাই আমেনা
খাতুনের ঠাঁই হয়নি সাধারণ
বেডে। শয্যা হয় বারান্দার মেঝেতে।
তিন দিন সেভাবেই কেটে
যায়। মায়ের নানা টেস্ট করাতে
রিয়াজুলকে দৌড়াতে হয় হাসপাতালের এক
প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে।
ওষুধ কিনতে গিয়ে সিঁড়ি ভাঙতে
হয় দিনে তিন–চারবার।
চিকিৎসকের দেখা পেতেও পোহাতে
হয় দুর্ভোগ।
সব
মিলিয়ে নানা ঝক্কি আর
ভোগান্তির পর সুস্থ মাকে
নিয়ে ঘরে ফিরছিলেন। গত
শনিবার হাসপাতালে আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘আমার
মায়ের অসুখ খুব একটা
জটিল ছিল না। অথচ
তার রোগ বের করতেই
দুদিন চলে গেছে। প্রথম
দিনই তাকে যদি চিকিৎসক
দেখে ওষুধ আর পরীক্ষা
দিয়ে দিতেন পরদিনই চলে যেতে পারতাম।
এভাবে ওয়ার্ডে ভর্তি দিয়ে বারান্দায় রেখে
বরং আমাদের আরও কষ্ট হয়েছে,
সময় লেগেছে।’
রিয়াজুলের
মায়ের মতো চমেক হাসপাতালে
আসা অনেক রোগী প্রাথমিক
জরুরি সেবা পেয়েই সেরে
ওঠবার কথা। অথচ এত
দিন তাদের পাঠানো হতো বিভিন্ন ওয়ার্ডে।
বাড়ত রোগীর চাপ, ভোগান্তি। এসবের
কথা মাথায় রেখেই ২০১৮ সাল থেকে
হাসপাতালে একটি ওয়ান স্টপ
ইমারজেন্সি কেয়ার চালুর চিন্তাভাবনা করছিল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের পূর্ব অংশে পুরোনো জরুরি
বিভাগ ও ক্যাজুয়ালটি বিভাগকে
নিয়ে করা এই প্রকল্পের
অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুমোদন পেয়েছিল ২০১৯ সালে। ২০২০
সাল থেকে এটিকে আধুনিকায়নে
শুরু হয়েছিল কর্মযজ্ঞ।
অবশেষে
গতকাল শনিবার ৩১ হাজার বর্গফুটের
এই বিশেষ জরুরি সেবার যাত্রা শুরু হয়েছে চমেকে।
শিক্ষা উপমন্ত্রী ও হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা
কমিটির সভাপতি মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এ বিভাগের উদ্বোধন
করেন।
হাসপাতালের
পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন
কবীরের আশা এর মাধ্যমে
রোগী ভর্তির সংখ্যা আড়াই হাজার থেকে
৮–৯ শতে নেমে
আসবে। তিনি বলেন, ‘রোগ
নিরূপণের জন্যই অনেক রোগীকে এখানে
চার দিন, পাঁচ দিন
সাত দিন ধরে থাকতে
হয়। এখন থেকে তাদের
আর সে সময় লাগবে
না। আমাদের অনুমান, এই ওয়ান স্টপ
কেয়ারের কারণে রোগীর সংখ্যা এক–তৃতীয়াংশে নেমে
আসবে।’
পরিচালক
আরও বলেন, এখানকার চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণ হলো সব রোগীকে
ভর্তির প্রয়োজন পড়ে না। নতুন
এ সেবার মাধ্যমে এখানেই রোগীরা মেডিসিন, সার্জারি, অর্থোপেডিকস, কার্ডিওলজি, পেডিয়াট্রিক্সসহ ৬টি বিভাগের বিশেষজ্ঞ
চিকিৎসকের সেবা পাবেন। ৮০
শয্যার এই ওয়ান স্টপে
থাকবে পাবেন
এক্স-রে, ইসিজি, আলট্রাসনোসহ
বিভিন্ন পরীক্ষার সুযোগ। তাই এখানে বসেই
সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলা যাবে
যে এই রোগী ভেতরে
যাবেন কি যাবেন না।
এতে রোগী অনুপাতে চিকিৎসক
ও নার্সদের সংকট কমবে। কমে
আসবে পানি, বিদ্যুৎ এসবের অপচয়। এতে রোগীদের সেবার
মান যেমন উন্নত হবে
তেমনি কমবে দালালদের দৌরাত্ম্য।
উদ্বোধনী
অনুষ্ঠানে মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, ‘চট্টগ্রামে এটি একটি যুগান্তকারী
মডেল। বাংলাদেশের আর কোনো সরকারি
মেডিকেল কলেজে এমন ওয়ান স্টপ
সেবা নেই। এখানেই যদি
রোগীদের প্রাথমিক স্ক্রিনিংটা সেরে ফেলা যায়
তবে মূল হাসপাতালে ভর্তির
ওপর চাপ অনেকাংশে কমে
যাবে। এখানে জনবলের বরাদ্দ নিয়ে আপাতত একটি
সংকট আছে, সেটি শিগগিরই
সমাধানে আমরা ব্যবস্থা নেব।’