চাকুরীচ্যুত করতে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর দুর্গাপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নৈশ্য প্রহরী কাজল মুন্সীকে নিয়ে নানান ষড়যন্ত্রের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইতিমধ্যে তাঁর উপর চালানো হয়েছে সন্ত্রাসী কায়দায় হামলা। দেওয়া হচ্ছে প্রাণনাশের হুমকি। চুরির অপবাদে নেওয়া হয়েছে জরিমানা।
সোমবার সকালে কুমারখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পুরুষ ওয়ার্ডের ১০ নং বেডে শুয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাংবাদিকদের কাছে এমন অভিযোগ করেন এই নৈশ্য প্রহরী। তিনি বলেন, ' চাকুরির শুরু থেকে বিদ্যালয়ের সভাপতি ও সহকারি শিক্ষক বসির উদ্দিন নানান প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে আসছে। আমাকে ফাঁসাতে তাঁরা বিদ্যালয়ের ফ্যান চুরি, তালা ভাঙা সহ নানান ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকান্ড করছে। কিছুদিন আগে চুরির দায়ে ১০ হাজার টাকা জরিমানাও দিয়েছি। '
তিনি অভিযোগ করে আরো বলেন, ' গত শনিবার সন্ধায় আমি বিদ্যালয়ের তালা চেক করছিলাম। এসময় স্থানীয় তানিম, যামিমসহ অজ্ঞাত অনেকেই লোহার রড, কাঠ ও বাঁশের লাঠি নিয়ে কপাল, পিঠসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত করে। এসময় আত্মরক্ষায় দৌড়ে বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের দোতালার একটি কক্ষে অবস্থান নিই এবং ৯৯৯, ভাই সুজন ও প্রধান শিক্ষককে কল করি। এসময় সন্ত্রাসীরা ওই কক্ষের সামনে এসে বলতে থাকে এই কাজল, শেষ গোস্ত খেয়ে নে। আজ তোকে আমরা খুন করব। পরে পুলিশ এসে আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে।'
এসময় হাসপাতালে কাজলের পাশে ছিলেন তাঁর নানি আমেনা খাতুন। তিনি বলেন, ' কাজলের নিয়োগের সময় সভাপতি অন্যকাউকে চাকুরি দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু হেডস্যার কাজলকে নেই। এরপর থেকেই সভাপতির লোকজন বিদ্যালয়ের ফ্যান চুরি, তালাভাঙাসহ নানান ষড়যন্ত্র করছে। এবার আবার হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালিয়েছিল। আমরা এঘটনার বিচার চাই।'
কাজলের ভাই সুজন মুঠোফোনে বলেন, ' নৈশ্য প্রহরীর চাকুরীচ্যুত করতে সভাপতির লোকজন নানান ষড়যন্ত্র করছে। গত শনিবার সন্ধায় সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে হামলা চালায়। জানতে পেরে পুলিশকে ফোন দেওয়া হয়েছিল। পরে পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়।'
বিদ্যালয় সুত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালে নৈশ্য প্রহরী পদে দুর্গাপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেন কাজল মুন্সী। গত ২ মে দাঁয়িত্বে অবহেলার কারনে বিদ্যালয়ের একটি কক্ষের ১১ টি বৈদ্যুতিক পাখা (ফ্যান) চুরি হয়। কাজল মুন্সী দাঁয়িত্ব অবহেলার কথা স্বীকার করায় কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এরপর থেকে বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরদের দ্বারা ২৪ ঘণ্টা পাহাড়ার ব্যবস্থা করা হয়। পরে গত ২০ মে ফ্যান চুরি যাওয়া কক্ষের তালাভাঙা পাওয়া যায়।
বিদ্যালয় সুত্রে আরো জানা গেছে, গত শনিবার সন্ধায় বিদ্যালয়ে চোর ঢুকেছে এমন সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। খবরে স্থানীয়া বিদ্যালয় ঘিরে রাখে। অনেকেই গাছ বেয়ে ও বিদ্যালয়ের প্রাচীর টপকে বিদ্যালয়ের ভিতরে প্রবেশ করে এবং চোর সন্দেহে কাজলকে মারপিট করেছে। তবে কাজল চোর কি না, বা কোনো ষড়যন্ত্র চলছে কি না তা ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এবিষয়ে বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক বসির উদ্দিন বলেন, কাজলের আনিত অভিযোগ মিথ্যা। বরং আমি তাঁকে সেভ (রক্ষা) করেছি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মখলেসুর রহমান বলেন, বিদ্যালয়ের মাঝেমাঝেই চুরি ও তালা ভাঙার ঘটনা ঘটছে। সেজন্য ২৪ ঘণ্টা পাহাড়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। অতীতে ফ্যান চুরিতে নৈশ্য প্রহরীর দাঁয়িত্বে অবহেলায় ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। গত শনিবারে কি ঘটেছিল তা ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে।
বিদ্যালয়ের সভাপতি পিয়ার মহম্মদ বিশ্বাস ঠান্টু বলেন, নিয়োগ সংক্রান্ত কোনো প্রতিপক্ষ বা ষড়যন্ত্র নেই। কাজলের ঘটনাটি গভীর তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। পরে বিস্তারিত জানানো যাবে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আব্দুর রশিদ বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তবে বিষয়টি ফৌজদারি। পুলিশ কাজ করবে।
কুমারখালী থানার ওসি কামরুজ্জামান তালুকদার বলেন, কাজল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এখনও লিখিত কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।