ফ্রিডম বাংলা নিউজ

শুক্রবার, নভেম্বর ২২, ২০২৪ |

EN

জেলখানা সদৃশ টিনের ঘরে ৭ বছর শিকলবন্দী জামাল

ফ্রিডমবাংলানিউজ ডেস্ক | আপডেট: শনিবার, সেপ্টেম্বর ৪, ২০২১

জেলখানা সদৃশ টিনের ঘরে ৭ বছর শিকলবন্দী জামাল

নিজের রক্তের সম্পর্কের মানুষগুলোর এমন পশুসুলভ আচরণে নিষ্ঠুরতা কেও হার মানিয়েছে। মানবিকতা যেন আজ শিকলে বন্দী। সস্তা টিনের বেষ্টনে জেলখানা সদৃশ একটি ঘরে বর্তমানে তাঁর বসবাস। তাঁর পরিবারের এমন কর্মকাণ্ডে এলাকার সমাজ ব্যবস্থা, সচেতন মহল, জনপ্রতিনিধিরা কেউ এর দায় এড়াতে পারে না।

 

সাত বছর ধরে নিজের বীভৎস সাজা ভোগ করছেন জামাল। তবে কাউকে খুন করেনি সে। যেভাবে দু'পায়ে শেকল পেঁচিয়ে তালা দিয়ে তাঁকে বেঁধে রাখা হয়েছে কারা অভ্যন্তরে কোনো দুর্ধর্ষ কিংবা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকেও এভাবে রাখা হয় না। দুপায়ের মধ্যে দুই ইঞ্চিও ফাঁকা নেই। এভাবেই তাঁকে নাওয়া-খাওয়া, আহার নিদ্রা এবং মলমূত্র ত্যাগ করতে হয়। এখানে কেবল মানবিকতাই হেরে যায়নি, এই বাস্তবতা অমানবিকতাকেও ছাপিয়ে গেছে।

 

জানা যায়, জামাল হোসেন মাটিরাঙ্গার কুমিল্লাটিলার প্রাক্তন মেম্বার মো. জালাল হোসেনের ছেলে। ভাই বোনের মধ্যে জামাল হোসেন চতুর্থ। জামালের দুবছর বয়সে তাঁর মায়ের মৃত্যু হয়। জামাল ৩২ বছরের এক টগবগে যুবক। তবে এখন সে পাগল যুবক। মেধাবী জামালের পাগল হয়ে ওঠার পেছনের রহস্যটা ঠিকঠাক জানা যায়নি। কারণ হিসেবে পরিবারের সদস্যরা বলেন ছেড়ে দিলেই পাগলামি করে জামাল। মানুষের ঘরবাড়িতে গিয়ে উৎপাত করে, জামা-কাপড় ছিঁড়ে নিয়ে আসে।

 

জামালের বাবা জালাল হোসেন বলেন, জামাল খুব মেধাবী ছিলেন। শিশু বয়সে মায়ের শূন্যতা প্রভাব ফেলে তাঁর জীবনে। ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে অধ্যয়নরত অবস্থায় একদিন বাড়িতে কিছু না বলে চট্টগ্রামের হাটহাজারি চলে যায় সে। সেখানে গিয়ে একটা রেস্তোরাঁয় বয়ের কাজ করে। সঙ্গ দোষে নেশায় আসক্ত হয়ে যায় সে। এক তরুণীর সঙ্গে জড়িয়ে উভয় পরিবারের সম্মতিতে ২০১০ সালে হাটহাজারীতেই বিয়ে করে জামাল। একটি ভাড়া বাসায় শুরু হয় তাঁদের সংসার। এরই মধ্যে কন্যা সন্তানের জনক হয় সে।

 

নেশার কারণে সংসার জীবনের সুখ টেকসই হয়নি। ২০১৪ সাল থেকে সে ধীরে ধীরে মানসিক ভারসাম্য হারাতে থাকে। এরপর জামালকে নিয়ে আসা হয় তবলছড়ির কুমিল্লাটিলায় পৈতৃক বাড়িতে। স্ত্রীর সঙ্গেও এরই মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায়। কিছুদিন পরপর শিকল ছিঁড়ে পালিয়ে যায় সে। আবার তাঁকে ধরে এনে এভাবেই বেঁধে রাখা হয়। ২০১৪ থেকে ২০২১ পর্যন্ত দীর্ঘ বছর এভাবেই চলছে তাঁর জীবন। তাঁকে সারা দিনে দুবেলা ভাত আর একবেলা নাশতা দেওয়া হয়। তাও জামালের ভাগের জমি বিক্রির টাকায় দেওয়া হয়।

 

বিষয়ে জামাল বলেন, আমাকে সবাই পাগল মনে করে পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছে। আমি পাগল না। আমার ভাইয়েরা আমাকে বেঁধে রেখেছে। আমি খুব কষ্টে আছি। আমাকে ছেড়ে দিলে আমি নামাজ পড়ব, আমি সুস্থভাবে বাঁচতে চাই। এমন জীবন থেকে মুক্তি চাই।

 

প্রতিবেশীরা বলেন, উন্নত চিকিৎসা সেবা না দিয়ে তাকে এভাবে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা অন্যায়, এর পেছনে সম্পত্তি সম্পর্কিত কোন রহস্য থাকতে পারে। তাকে নামমাত্র চিকিৎসা সেবা দেওয়া হলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা অপ্রতুল। তবে ভালো চিকিৎসা দিলে সে ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে অনেকে মন্তব্য করেন।

 

স্থানীয় মেম্বার আবুল হাসেম বলেন, জামাল দীর্ঘ বছর ধরে মানসিক প্রতিবন্ধী। সে ছাড়া পেলে প্রতিবেশীর বাড়িতে গিয়ে নারীদের উত্ত্যক্ত করে। ছাড়া রোদের শুকানো কাপড় নিয়ে এসে আগুন লাগিয়ে দেয়। তাঁর এমন আচরণে পাড়ার সকলে অতিষ্ঠ। এসবের কারণে তাঁকে বেঁধে রাখে তাঁর স্বজনরা। তবে সে উন্নত চিকিৎসা পেলে ভালো হয়ে যাবে বলে আশা করছি।

সুত্র: আজকের পত্রিকা