Can't found in the image content. পরীক্ষামূলক আপেল চাষে সফল পিরোজপুরের প্রণব হালদার | ফ্রিডম বাংলা নিউজ
ফ্রিডম বাংলা নিউজ

বৃহস্পতিবার, ফেব্রুয়ারী ১৩, ২০২৫ |

EN

পরীক্ষামূলক আপেল চাষে সফল পিরোজপুরের প্রণব হালদার

শাফিউল মিল্লাত, পিরোজপুর প্রতিনিধি | আপডেট: বৃহস্পতিবার, মে ১৯, ২০২২

পরীক্ষামূলক আপেল চাষে সফল পিরোজপুরের প্রণব হালদার
পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার মধুভাঙ্গা গ্রামের প্রণব হালদার জেলায় প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে আপেল চাষ করে সফল হয়েছেন। তিনটি জাতের ৬০টি চারা দিয়ে আপেলের চাষ পরীক্ষামূলক শুরু করে সফলতা ধরা দিয়েছে তার হাতে। মেডিকেল টেকনোলজিতে পড়াশোনা শেষ করে বাড়িতেই শুরু করেন আপেলের চাষ। দুই বছর আগে বাগানে রোপণ করা গাছে ফুল ও ফল ধরেছে। কোন কোন গাছে পাকতে শুরু করছে আপেল। ভবিষ্যতে বাগান বড় করে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে আপেল চাষের স্বপ্ন দেখছেন প্রণব। কৃষি বিভাগের তথ্য মতে জেলায় এটিই প্রথম আপেলের বাগান।

সম্প্রতি সরেজমিনে আপেল বাগানে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির সামনে ৫৫ শতাংশ জমিতে তিনটি জাতের আপেলসহ মিশ্র ফলের বাগান করেছেন প্রণব হালদার। তাঁর বাগানে ৬০টি আপেল গাছ রয়েছে এছাড়াও রয়েছে অসংখ্য ছোট ছোট আপেলের চাড়া। এসব গাছে ফুল ধরেছে। অনেক গাছে ফুল থেকে ফলও এসেছে। আপেলের পাশাপাশি বাগানে বেদানা, আলুবোখারা ও আমের চাষ করা হয়েছে। বাগানে ফুলের পরাগায়নের জন্য বাড়িতে মৌমাছির চাষও করা হচ্ছে।

আপেল চাষী প্রবণ হালদার জানান, আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা ইন মেডিকেল টেকনোলজিতে পড়াশোনা শেষ করেছেন তিনি। প্রণব কয়েক বছর আগে সবুজ বাগান সোসাইটি নামে একটি বাগান সম্পর্কিত ফেসবুক গ্রুপ থেকে প্রথম জানতে পারেন বাংলাদেশেও আপেল চাষ করা সম্ভব। আমাদের দেশে ফলবে এমন কিছু আপেলের জাত ইতিমধ্যে উদ্ভাবিত হয়েছে। তার মধ্যে প্রতিবেশী দেশ ভারতের একটি জাত রয়েছে। যা আমাদের দেশে hrmn99 (হরিমন ৯৯) আপেল নামে পরিচিত। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে হরিমন ৯৯ আপেল জাতের ৫০ টি চারা সংগ্রহ করেন প্রণব। উদ্দেশ্য ছিলো পরীক্ষামূলক আপেল চাষ করা। আপেলের চাষ সম্পর্কে কোনো জ্ঞান না থাকায় গরম এলাকার আপেল চাষে গবেষক ভারতের পারভেজ নওশাদ ও হরিমন শর্মার সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁদের পরামর্শ নিয়ে চারা গুলোকে নার্সিং করে বড় করেন। ২০১৯ এর ডিসেম্বরে প্রণব ভারতের হিমাচল প্রদেশের বিলাসপুরে হরিমন শর্মার আপেল বাগানে প্রশিক্ষণের জন্য যান। প্রশিক্ষণ শেষে বাংলাদেশে ফলবে আরো দুইটি জাতের চারা Anna ( Israel ) ও Dorsett Golden ( Bahamas ) সংগ্রহ করেন। ২০২০ সালের এপ্রিলে তিনটি জাতের ৬০টি চারা বাড়ির পাশের জমিতে রোপণ করেন।২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে গাছে ফুল আসা শুরু করে। বর্তমানে গাছে ছোট আপেল ও ফুল আছে। ফল সংগ্রহ করা যাবে মে থেকে জুলাই পর্যন্ত।

প্রণব হালদার আরও বলেন, যেহেতু আমার বাগানটি পরীক্ষামূলক ভাবে শুরু করা তাই আরো কয়েক বছর পর্যবেক্ষণ করব। এরপর যদি লাভজনক ভাবে আপেল ফলাতে সক্ষম হই তাহলে বাগান সম্প্রসারণ করতে চাই। তবে শুরুওতে বড় পরিসরে বাগান করা উচিৎ নয়। কয়েকটি চারা রোপণ করে সফল হলে বড় বাগান করা উচিৎ।

আপেল চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রনব বলেন, জমিতে আপেলের চারা রোপণের জন্য ২×২×২ ফুট গর্ত তৈরি করে জৈব সার মাটির সাথে মিশিয়ে গর্তে ১৫ দিন রেখে দিয়ে চারা গুলো রোপণ করা হয়। সঙ্গে অন্য কোনো রাসায়নিক সার প্রয়োগ করা হয় না। আপেল গাছ আলো, বাতাস পূর্ন এবং উচু জমিতে ভালো হয়। বেলেদোয়াশ মাটি আদর্শ হলেও অন্য মাটিতে ও রোপণ করা যায়। তবে আপেল গাছ কোনো ভাবেই জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দ্বিগবিজয় হাজরা বলেন, সাধারণত আপেল শীত প্রধান দেশে চাষ করা হয়। তবে আমাদের দেশে এখন আপেল চাষ করা সম্ভব। প্রণবের আবাদ করা জাতের চারাগুলো বাংলাদেশের আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। পিরোজপুর জেলায় এটিই প্রথম আপেলের বাগান। এখানে দুই বছর বয়সে গাছে ফুল ও ফল এসেছে। আশাকরা যায় গাছগুলোর পরিণত বয়সে ফলন আরও বৃদ্ধি পাবে।