‘সয়াল্যান্ডের’ রাজধানী হিসেবে খ্যাত লক্ষীপুরের কমলনগর-রামগতি। দেশে উৎপাদনের ৮০ভাগই এজেলায় বলা যেতে পারে। আকস্মিক ঘূর্ণিঝড় ‘অশনির’ প্রভাবে উৎপাদিত ‘সোনা’ ফসল ঘরে তোলতে পারেনি চাষীরা। এতে দু’উপজেলার সাড়ে ৪শ কৃষক তাদের উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা হারিয়েছে। ফলে ৮০ কোটি টাকার সয়াবিন নষ্টের উপক্রমে কৃষকদের গলার কাটা হয়ে দাড়িয়েছে। কৃষকদের হাসির মুখে বোবা কান্নার শব্দ।
সূত্রে জানা গেছে, কমলনগরে প্রাথমিকভাবে ক্ষতি নিরুপন করেছেন ৬০০ হেক্টর সয়াবিন। এর আওতায় প্রান্তিক, ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বড় আকারের কৃষক। যার ক্ষতির আনুমানিক মূল্য ৬০ কোটি টাকা। রামগতি উপজেলা ২০০ হেক্টর। যার আনুমানিক ক্ষতি মূল্য ২০ কোটি টাকা। তবে আবহাওয়া ভালো হলে কৃষকরা ক্ষতি অনেকটা কেটে উঠতে পারবেন বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
এদিকে কমলনগর-রামগতি উপজেলায় এবছর ৩৬ হাজার ৮শ ১৩ হেক্টর জমিতে সয়াবিন আবাদ হয়েছে।
কমলনগর উপজেলায় ১২ হাজার ২শ ৫০ হেক্টর ( ক্ষুদ্র-প্রান্তিক কৃষকের সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার) এবং রামগতিতে ১৬ হাজার ৫শ ৬৩ হেক্টর আবাদ হয়। (ক্ষুদ্র-প্রান্তি কৃষকের সংখ্যা ২০ হাজার )।
প্রতি হেক্টরে ২ মে.টন হওয়ার কথা থাকলেও প্রাকৃতিক দুর্যোগে কারণে বেশির ভাগ খেতে পানি জমে ফসল কালো ও নষ্ট হয়ে গেছে।
রামগতি উপজেলার চরপোড়াগাছা ইউনিয়ন, চরআলগী, চরআবদুল্লাহ, আলেকজান্ডার ও চররমিজ ইউনিয়নসহ ৮টি ইউনিয়ন এবং কমলনগরে ৯ টি ইউনিয়ন চরকালকিনি, চরমার্টিন, সাহেবেরহাট, চরফলকন, হাজিরহাট, পাটারীরহাট, চরকাদিরা ও তোরাবগঞ্জ ইউনিয়নে সয়াবিন চাষ হয়েছে।
চরফলকন এলাকার সাহাব উদ্দিন বলেন, আমি অনেক কষ্ট করে ১৭০ শতাংশ জমিতে সয়াবিন চাষ করেছি। ভালো ফলন হলেও ঘরে তোলার ঠিক মুহূর্তে বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে। সয়াবিন কালো ও নষ্ট হয়ে গেছে। বাজারমূল্য সামান্য পেতে পারি। অনেক বড় ক্ষতি হয়েছে আমার। একইভাবে কথা বলেন জাহাঙ্গীর, শাহে আলম ও লিটনসহ অনেকে।
এদিকে কৃষকরা অল্প দামে বেশি লাভ বলে সয়াবিন চাষে আগ্রহী হয়ে ওঠেছেন। চলতি মৌসুমে সয়াবিন মণ প্রতি ১৮ থেকে ২২শ টাকা। মৌমুমের বাহিরে ২হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা হতে পারে বলে কৃষকদের ধারণা। কিন্তু ঘরে তোলার আগেই সয়াবিন চাষীদের মাথায় হাত। চোখে-মুখে অন্ধকার। চওড়া সুদের উপর ঋণ নিয়ে অনেকে সয়াবিন চাষ করেছেন। শুরুতে ভালো ফসল দেখা গেলেও ফসল তোলার সময় আকাশ ভেঙ্গে মাথায় পড়ারমতো অবস্থা। কৃষকরা সয়াবিন বিক্রি করছেন ন্যায্যমূল্যের অর্ধেকে।
কমলনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আতিক আহমেদ জানান, আমরা সরেজমিনে গিয়ে প্রাথমিকভাবে একটি ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ করেছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট চিঠি দিয়েছি। পুনর্বাসন কিংবা প্রণোদনা পেলে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মাঝে যথাযথভাবে বিতরণ করবো।