শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার নাকুগাঁও ইমিগ্রেশন বন্ধ থাকায় তিনটি স্থলবন্দর ও একটি শুল্ক স্টেশনের প্রায় দুই হাজার আমদানি-রপ্তানিকারক ব্যবসায়ী বিপাকে পড়েছেন। ব্যবসায়িক সুবিধার্থে এবং ভারত ও ভুটানের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ব্যবসায়ীরা দ্রুত ইমিগ্রেশনটি খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
নাকুগাঁও ইমিগ্রেশন কার্যালয় ও স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, নালিতাবাড়ীতে নাকুগাঁও স্থলবন্দর ও নাকুগাঁও ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট রয়েছে। এ ছাড়া ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে কড়ইতলী ও গোবরাকুড়া স্থলবন্দর আছে। জামালপুরের বকশীগঞ্জে আছে ধানুয়া-কামালপুর শুল্ক স্টেশন। এসব বন্দর দিয়ে ভারত ও ভুটান থেকে প্রচুর পরিমাণে কয়লা ও পাথর আমদানি করা হয়। চারটি বন্দর ঘিরে চারটি আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতিও রয়েছে। এসব সমিতির প্রায় দুই হাজার আমদানি-রপ্তানিকারক ব্যবসায়ী সদস্য রয়েছেন। নালিতাবাড়ীর চারটি বন্দরের ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন নাকুগাঁও ইমিগ্রেশনের মাধ্যমে ভারত ও বাংলাদেশে যাতায়াত করতেন। ব্যাংকের মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা নিজস্ব প্রতিষ্ঠান থেকে ভারত থেকে পণ্য আমদানি করতে এলসি করেন। এ ছাড়া পণ্যের গুণগত মান যাচাই-বাছাইয়ের জন্য ব্যবসায়ীরা মাল্টিফুল ভিসার মাধ্যমে ভারতে যাতায়াত করতেন।
করোনা মহামারির কারণে ২০২০ সালের ১৮ মার্চ নাকুগাঁও ইমিগ্রেশনটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়। করোনায় আমদানি-রপ্তানিও স্থবির হয়ে পড়ে। তবে কিছুদিন স্থবির থাকার পর আমদানি-রপ্তানি ব্যবসা-বাণিজ্য আবার স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। প্রতিদিন ভারত ও ভুটান থেকে শত শত টন পাথর ও কয়লা নাকুগাঁও, গোবরাকুড়া, কড়ইতলী ও ধানুয়া-কামালপুর বন্দর আসছে। ভারত থেকে কয়লা-পাথর আমদানি হলেও নাকুগাঁও ইমিগ্রেশন বন্ধ থাকায় চার বন্দরের ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েছেন। প্রায় দুই বছর ধরে ইমিগ্রেশন বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ীরা ভারতে যাতায়াত করতে পারছেন না। যথাসময়ে এলসি করলেও ঠিকমতো পণ্য সরবরাহ করা হচ্ছে না। পাথর ও কয়লার কোনো প্রকার গুণগত মান রক্ষা করা হচ্ছে না। এতে চারটি বন্দরের আমদানিকারকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
ধানুয়া-কামালপুর বন্দরের আমদানিকারক মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘ভারত ও ভুটান থেকে মুঠোফোনের মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দরদাম নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। তাঁরা সময়মতো পণ্য দেন না। যদি ইমিগ্রেশন খোলা থাকত, তাহলে সকালে গিয়ে বিকেলেই পণ্য পাওয়া যেত।’
হালুয়াঘাটের কড়ইতলী স্থলবন্দরের আমদানিকারক মো. হাসনাত বলেন, নাকুগাঁও ইমিগ্রেশন দিয়ে এলাকার চারটি বন্দরের ব্যবসায়ীরা ভারতে গিয়ে পণ্যের গুণগত মান যাচাই-বাছাই করে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে চুক্তি করতেন। কিন্তু ইমিগ্রেশন বন্ধ থাকায় সবকিছু মুঠোফোনে করতে হচ্ছে। আজকের পণ্য এক সপ্তাহ পরে দিচ্ছে। এতে ব্যবসায়ীদের ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে।
নাকুগাঁও স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ইমিগ্রেশনের মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা ভারতে যাতায়াত করতে পারলে পণ্যের গুণগত মান যাচাই করতে পারতেন এবং ঠিক সময়ে দেশে পণ্য আনতে পারতেন। আমরা আশা করছি, সংশ্লিষ্ট দপ্তর ইমিগ্রেশনটি খুলে দিতে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।’
নাকুগাঁও ইমিগ্রেশনের দায়িত্বে থাকা এসবির পরিদর্শক ফেরদৌস বলেন, করোনার পর এ পর্যন্ত ১৬টি ইমিগ্রেশনের মধ্যে ৪টি খোলা হয়েছে। এটা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশের মাধ্যমে খোলা হয়ে থাকে। সরকারিভাবে অনুমোদন পাওয়া গেলে নাকুগাঁও ইমিগ্রেশন খোলে দেওয়া হবে।