দেশের একমাত্র উৎপাদনশীল দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির চীনা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সিএমসি-এক্সএমসি কনসোর্টিয়ামের অধিনে কর্মরত দেশি শ্রমিকদের স্ব-স্ব কর্মস্থলে যোগদানসহ করোনা কালীন বকেয়া বেতন ভাতার দাবিতে টানা এক মাস ব্যাপী পরিবার পরিজন নিয়ে অবস্থান কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে।
পূর্বঘোষিত কর্মসূচীর অংশ হিসেবে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি গেট থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি কয়লা খনি বাজার প্রদক্ষিণ করে খনি গেটে এসে শেষ হয়। পরে সেখানে অবস্থান কর্মসূচী পালন করা হয়। এসময় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি রবিউল ইসলাম রবি, সাধারণ সম্পাদক আবু সুফিয়ান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক নূর ইসলাম, শ্রমিকের স্ত্রী খুকু মনি, শ্রমিক নেতা জাকির হোসেন, এরশাদ আলী ও এহছানুল হক সোহাগ প্রমুখ।
এসময় বক্তরা বলেন, করোনা পরবর্তী সময়ে সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী সকল সরকারি-বেসরকারি ও স্বায়ত্ব শাসিত প্রতিষ্ঠান পূর্বের মতোই চালু হলেও অজ্ঞাত কারণে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিতে আমাদের স্ব-স্ব কর্মস্থলে খনি কর্তৃপক্ষ যোগদানের কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। একই সাথে খনি কর্তৃপক্ষ ঘোষিত করোনা কালিন বেতন ভাতা না পাওয়ায় আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছি।
তারা আরও বলেন, প্রায় দুই বছর আগে বৈশ্বিক করোনা মহামারির কারণে কর্মরত ১১৪৭ জন বাংলাদেশি শ্রমিককে বাধ্যতামূলক ছুটি দেওয়া হয়। এরপর চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৪০০ জন শ্রমিককে খনির ভেতরে থেকে কাজ করার শর্তে ফেরত নেয়। বাকি ৭৪৭ জনকে কাজে যোগদানের সুযোগ না দিয়ে বেতন বন্ধ রাখা হয়েছে। পবিত্র ঈদুল ফেতরের সময় খনি অভ্যান্তরে যে সকল শ্রমিক অবস্থান করছিলেন তাদেরও ছুটি দেয়া হয়েছে।
বক্তারা আরও বলেন, ছুটি দেওয়ার সময় কথা ছিল শ্রমিকদের প্রতি মাসে ৪৫০০ টাকা করে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গত ৯ মাস ধরে তা আর দেওয়া হচ্ছে না। অবলম্বে এসব শ্রমিকদের কাজে যোগদানসহ বকেয়া পাওনা বেতন-ভাতা প্রদানের দাবী জানান।
এদিকে গত ১০ মে খনির অভ্যান্তরে মনমেলা সভা কক্ষে আন্দোলনকারী শ্রমিকদের ২০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলের সাথে খনি কর্তৃপক্ষ এক বৈঠকে বসেন। সেখানে আন্দলনকালী শ্রমিকদের মধ্য থেকে ৬০০ জনকে কাজে যোগদানের প্রস্তাব দেন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু শ্রমিকরা করোনা কালিন ৯ মাসের বকেয়া ভাতাসহ সকল শ্রমিকদের স্ব স্ব কাজে যোগদানের দাবি জানিয়ে ওই আলোচনা প্রত্যাখ্যান করে চলমান কর্মসূচী অব্যাহত রেখেছেন।
বিষয়টি নিয়ে বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানী লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান খান এর সাথে মুঠো ফোনে জানান, চীনা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সিএমসি-এক্সএমসি কনসোর্টিয়ামের এর সাথে কথা বলে প্রথমে ৪০০ জন শ্রমিককে কাজে যোগদান এবং পরে আরও ২০০ শ্রমিকসহ মোট ৬০০ জন শ্রমিককে কাজে যোগদানের বিষয়ে প্রস্তাব দেয়া হয়। কিন্তু শ্রমিকরা তা প্রত্যাখ্যান করে খনি গেট উন্মুক্ত করে দেয়ার দাবী জানান।
উল্লেখ্য যে, এসব দাবী নিয়ে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন গত ১১ এপ্রিল খনি কর্তৃপক্ষের কাছে একটি স্মারক লিপি প্রদান করেন। ওই ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছেন তারা।