ফ্রিডম বাংলা নিউজ

সোমবার, জুলাই ১, ২০২৪ |

EN

ফুলবাড়ীতে ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরা যাত্রীদের চরম ভোগান্তি

মেহেদী হাসান, ফুলবাড়ী, দিনাজপুর | আপডেট: সোমবার, মে ৯, ২০২২

ফুলবাড়ীতে ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরা যাত্রীদের চরম ভোগান্তি
করোনাকালীন সময়ে দু’বছর ধরে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে না পারায় মানুষ এবার আপনজনদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে এসেছিলেন নিজ বাড়িতে। ঈদ শেষে অবশেষে কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেছেন তারা। দেশের বিভিন্ন স্থানের মতো দিনাজপুরের ফুলবাড়ী থেকেও রাজধানী ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছে কর্মজীবী সাধারণ মানুষ।

শনিবার সকাল থেকে রাত পর্যন্তু রেলওয়ে ষ্টেশনে গিয়ে দেখা যায়,ঢাকা গামী দ্রতযান,একতা ও নীলসাগর ট্রেনে এতটুকু দাঁড়াবার জায়গা পর্যন্ত নেই। তবে রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন,শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় ট্রেনে অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ না থাকলেও শনিবার ঢাকাগামী ট্রেনগুলোর ছাদসহ সবগুলো কামরায় জায়গা ছিলোনা।
টিকিটের অতিরিক্ত মূল্য সহ অনেকে টিকেট না পাওয়ায় অনেকে ঝুকি নিয়ে ট্রেনের ছাদে এবং দরজায় ঝুলে কর্মস্থলে ফিরছেন। এসময় তাদের সাথে কথা বললে তারা বলেন,বাসে অতিরিক্ত ভাড়ার কারণে ট্রেনের ছাদে ঝুকি নিয়েই কর্মস্থলে ফেরার চেষ্টা করছেন তারা। তাদের এই চেষ্টা কতটুকু সফল হবে তা হয়তো বলা মুশকিল । তবে ট্রেনের ছাদে এবং ট্রেনের বগির দরজায় ঝুলে কর্মজীবী এই মানুষগুলো যেভাবে কর্মস্থলে ফেরায় চেষ্টা করছেন তা কোনো ভাবেই যে নিরাপদ নয়,এমন কথা ষ্টেশন এলাকার ক্ষুদে ব্যবসায়ীসহ ট্রেনে তুলে দিতে আসা কর্মজীবী মানুষগুলোর আপনজনরা স্বীকার করলেও তা মানছেনা কেউ। ঈদ উপলক্ষে কেউ কেউ আবার ট্রেনের ছাদে যাত্রী উঠার জন্য ষ্টেশনে বাঁশের তৈরী মই ভাড়া দিচ্ছেন,জন প্রতি ২০-৩০টাকায়।
এদিকে অভিযোগ উঠেছে ফুলবাড়ী থেকে ঢাকাগামী বাস কাউন্টারগুলোতে দ্বিগুণ বা তিনগুণ ভাড়া দিয়েও টিকিট মিলছে না। বেশিরভাগ যাত্রীদের অভিযোগ,কয়েকগুণ বেশি দামে টিকিট কিনতে হচ্ছে। তবে কাউন্টার মাস্টাররা বলছেন, আগে থেকেই সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। বাড়তি ভাড়ায় কোনো টিকিট বিক্রি হচ্ছে না। এই চিত্র যে শুধু বাসের তা নয় ফুলবাড়ী রেলওয়ে ষ্টেশনেও একই চিত্র।

শনিবার সরেজমিনে ফুলবাড়ীর উর্বশী সিনেমা হল এলাকার কাউন্টার ঘুরে দেখা গেছে, যাত্রীরা টিকিট না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন। কেউ কেউ কাউন্টারের বাইরে পরিবহন সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে দ্বিগুণ দামে টিকিট সংগ্রহের চেষ্টা করছেন। ঢাকায় একটি বেসরকারী কোম্পানিতে চাকরি করেন রুবিনা খাতুন,রোববারের মধ্যেই অফিসে যোগদান করতে হবে,তাই টিকেটের জন্য কাউন্টারগুলোতে ধরণা দিচ্ছেন । তিনি বলেন,ঈদের ছুটি পেয়ে পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে এসেছিলেন,তবে ফিরতি টিকিট কিনতে না পেরে এখন অনেক চেষ্টা করেও মিলছেনা টিকেট। এদিকে মনিরা নামের এক গার্মেন্টস্ কর্মী জানালেন, কাউন্টারে এসে দুটি টিকিট পেয়েছেন,কিন্তু বাড়তি দাম দিয়েই কিনতে হয়েছে তাকে। তবে কীভাবে তিনি টিকিট সংগ্রহ করলেন সে বিষয়ে বলতে চাইছেন না তিনি। তিনি হয়তো বাড়তি দামে টিকেট সংগ্রহ করেছেন,কিন্তু শত শত পোশাক শ্রমিক কাঁধে ব্যাগ নিয়ে কাউন্টারে কাউন্টারে ঘুরছেন সাধ্যের মধ্যে কর্মস্থলে ফেরায় আশায়। তাইতো দরদাম করে নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী ঢাকায় যাওয়ার চেষ্টা করছেন তারা। 
রাহার কাউন্টার এর মাসুদ সরকার জানান,এবার তাদের কোম্পানী থেকেই টিকেটের মূল্য ১হাজার টাকা নির্ধারণ করেছে,তারা ২শ টাকা বেশী নিচ্ছেন কাউন্টার খরচের জন্য। তবে কাউন্টারে বা বাইরে কোথাও বেশি দামে টিকিট বিক্রি হচ্ছে না বলে জানান অন্যান্য কাউন্টারে থাকা টিকিট বিক্রেতারা।

ফুলবাড়ী রেলওয়ে স্টেশনের টিকিট কাউন্টারে টিকিটের খোঁজে যাওয়া একাধিক যাত্রী জানান, ঢাকাগামী ট্রেনে শুক্রবার থেকে সোমবার পর্যন্ত কোনো টিকিট নেই,একই অবস্থা বাসের টিকিটের ক্ষেত্রেও। ফলে নির্দিষ্ট সময়ে কর্মস্থলে ফেরার দুশ্চিন্তা নিয়েই বাড়ী ফিরছেন কর্মজীবী খেটে খাওয়া অধিকাংশ মানুষ । কেউ কেউ আবার জীবনের ঝুঁকি নিয়েই ট্রেনের ছাদে কিংবা দরজায় ঝুলে ফিরছেন কর্মস্থলে।

ফুলবাড়ী রেলওয়ে ষ্টেশনের টিকিট বুকিং মাস্টার মোঃ এনায়েত উল্লাহ জানান,ফুলবাড়ী থেকে ঢাকাগামী তিনটি ট্রেনের মোট আসন সংখ্যা ৩৫টি এর মধ্যে ৩০টি আসনের টিকেট লাইনে দাঁড়ানো যাত্রীদের দেয়া হয় এবং ৫টি টিকেট বিজিবি, মুক্তিযোদ্ধাসহ ভিআইপিদের জন্য রিক্যুজিশনে রাখা হয়। টিকেট কালো বাজারি ক্ষেত্রে তিনি বলেন, লাইনে দাঁড়িয়ে কেউ টিকেট সংগ্রহ করে অতিরিক্ত মূল্যে বিক্রি করলে তার কি করার আছে।