দিনাজপুর ফুলবাড়ী পৌর শহর সহ অন্যান্য হাটবাজারগুলোতে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও ছাড়পত্র ছাড়াই অবাধে গবাদিপশু জবাই করে মাংস বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের নেই কোনো তদারকি।
এতে জবাই করা পশুর শরীরে কোনো রোগ-বালাই রয়েছে কিনা জানতেও পারছেন না ক্রেতারা। একদিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নীরব ভূমিকা, অন্যদিকে জনসচেতনতার অভাবে উপজেলার বিভিন্ন বাজার ও পৌর শহরে চলছে যত্রতত্র পশু জবাইসহ মাংস ক্রয়-বিক্রয়।
আইন প্রয়োগের দায়িত্ব কার এনিয়ে প্রাণী সম্পদ ও পৌরসভা একে অপরের দিকে আঙ্গুল তুলছেন,এতে প্রতারিত হচ্ছেন সাধারণ ক্রেতারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পৌরসভা এলাকায় প্রতিদিন অন্তত ১০-১৫টি গরু এবং অন্তত ২৫-৩০টি ছাগল ও ভেড়া জবাই করা হয়। পৌর শহরে শুক্রবার ও সোমবার সাপ্তাহিক হাট বার। হাটের দিনে বেশি গরু, ছাগল ও ভেড়া জবাই করা হয়। জবাইকৃত গবাদিপশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার দায়িত্বে একজন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও এই নিয়ম মানা হচ্ছে না।
সরেজমিনে রোববার ফুলবাড়ী পৌর বাজারের মাংস সেডসহ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে ব্যবসায়ীরা গরু, ছাগল ও ভেড়া জবাই করে মাংস বিক্রি করছেন যে যার ইচ্ছে মতো। লোকচক্ষুর অন্তরালে নিজ খেয়ালখুশি মতো জবাই করা গবাদিপশু বাজারে উচ্চমূল্যে বিক্রি করছেন তারা।
পৌর শহরের আব্দুল কাদের,রাসেলসহ অনেকে জানান,আমরা বাজার থেকে যে পশু গুলোর মাংস কিনে খাচ্ছি সেটি অসুস্থ নাকি সুস্থ ছিল তা না জেনেই প্রয়োজনের তাগিদে খাচ্ছি। নিয়ম অনুযায়ী পশু জবাই করার আগে চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ছাড়পত্র এবং পশুর শরীরে সিল দেবেন। কিন্তু সে রকম কোনো পদক্ষেপ দেখা যায় না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো ধরনের তদারকি না থাকায় লোকজন মারা যাওয়া গবাদিপশুর মাংস এবং রোগাক্রান্ত গরু-ছাগল-ভেড়ার মাংস খাচ্ছে,তা বোঝার কোনো উপায় নেই। সে কারনে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।গবাদিপশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার কোনো ছাড়পত্র আছে কি নেই-এমন প্রশ্নের জবাবে বাজারের মাংস ব্যবসায়ী মো. আজগর আলী বলেন, পৌর সভার লোকজন মাঝে মধ্যে এসে ঘুরে দেখেন তবে,পরীক্ষা নিরীক্ষা বা ছাড় পত্রের ব্যাবপারে কিছুই করেন না। আমরাও যতটুকু পারি সুস্থ পশু কিনে জবাই করার চেষ্টা করি।
গত এক মাসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ কিংবা কোনো পশু প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তার কাছ থেকে পরীক্ষা করিয়ে ছাড়পত্র নিয়েছেন কি না-এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন এ বিষয়ে কেউ কিছু বলেনি তাদের। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর জগদীশ চন্দ্র রায় কে বারবার মুঠো ফোনে যোগাযোগ করে না পেয়ে তার ফোনে ম্যাসেজ পাঠালেও তিনি ফোন রিসিভ করেনি।
এদিকে ফুলবাড়ী পৌর সভার স্বাস্থ্য সহকারী (সেনেটারী ইন্সেপেক্টর) মো. মুরাদ সরকার এর সাথে মুঠো ফোনে কথা বললে, তিনি বলেন এটি আমার দায়িত্ব নয়,এ বিষয়টি দেখবেন উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা।
অপরদিকে উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. রবিউল ইসলাম এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান,পশু জবাইয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা ও ছাড়পত্রের বিষয়টি নিয়ে আমি উর্ধতন কতৃপক্ষের সাথে কথা বলেছি, এ বিষয়টি পৌর সভার স্বাস্থ্য সহকারী (সেনেটারী ইন্সেপেক্টর) দেখভাল করবেন এটি তার দায়িত্ব,পাশাপাশি পৌর কতৃপক্ষ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য একজন চিকিৎসক নিয়োগ দেবেন ।
তবে বিশেষ ক্ষেত্রে পৌর কতৃপক্ষ যদি কোনো সহযোগিতা চায় তাহলে রেগুলার কাজের পাশাপাশি তা আমরা করতে পারি।অন্যদিকে বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে ফুলবাড়ী পৌর সভার মেয়র আলহাজ্ব মো.মাহামুদ আলম লিটন বলেন, নিয়ম অনুযায়ী পৌর সভার স্বাস্থ্য সহকারী (সেনেটারী ইন্সেপেক্টর) এই বিষয়টি দেখবেন। যদি তিনি না দেখে থাকেন তবে তিনি দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন,বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সহ সকল মাংস ব্যবসায়ীদের ডেকে খুব শীঘ্রই একটি ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।