ফ্রিডম বাংলা নিউজ

বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১, ২০২৪ |

EN

লোহার তৈরী বরশির কল শরিরে ফুটিয়ে ঝুলন্ত রশিতে ঘোরে মানুষ

ফুলবাড়ীতে ঐতিহ্যবাহী চড়ক মেলা অনুষ্ঠিত

মেহেদী হাসান, ফুলবাড়ী, দিনাজপুর | আপডেট: বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২১, ২০২২

ফুলবাড়ীতে ঐতিহ্যবাহী চড়ক মেলা অনুষ্ঠিত
দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব ঐতিহ্যবাহী চড়ক পুঁজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ উপলক্ষে গত বুধবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উপজেলার আলাদীপুর ইউনিয়নের আলাদীপুর চড়ক কালী মন্দির চত্বরে এক চড়ক মেলা অনুষ্ঠিত হয়। দুইদিনব্যাপী এই গ্রামীণ মেলা অনুষ্ঠিত হবে। করোনার প্রকোপে গত দুইবছর অনুষ্ঠিত হয়নি এই উৎসবটি। এই উৎসবটি দেখতে দুর দুরান্তের বিভিন্ন এলাকা থেকে কয়েক হাজার ভক্ত ও দর্শনার্থী সমবেত হন এ মেলায় ।

আয়োজক সূত্রে জানা যায়, চরক ঘুরানোর আগে ছেলে মেয়েরা বিভিন্ন দেবদেবীর ছব্দবেশে ঘুরে ঘুরে ঢোলের তালে তালে নাচ প্রদর্শন করেন। পরে সেখানে প্রায় ৩০ ফুট উঁচু একটি গাছের মাথায় কয়েকটি বাঁশ বিশেষ কায়দায় আটকিয়ে রাখা হয় এবং বাঁশের মাথায় আগেই রশি ঝুলিয়ে রাখা হয়। চড়ক পূঁজার আনুষ্টানিকতা শেষে অরবিন্দ একজন মানুষ তার পিঠে লোহার তৈরী এক প্রকার বরশির কল পিঠের চামড়ায় ফুটিয়ে কলের সঙ্গে ঝুলন্ত রশি বেঁধে দেয়া হয়। এরপর নীচে থাকা আয়োজকরা অপর একটি বাঁশ কয়েকজন মিলে দীর্ঘ প্রায় ২০ মিনিট যাবত ঘুরায়। লোহার তৈরী এক প্রকার বরশির কল শরীরে ফুটিয়ে চরকির মতো ঘোরানোর কারনে এ পূঁজাটিকে চড়ক পূঁজা বলেন সনাতন ধর্মালম্বিরা।

চড়ক পূঁজার উৎসবে আসা নমিতা রানী ও শঙ্কর সাহা বলেন, প্রায় এক সপ্তাহ আগে থেকেই চড়ক উৎসবের আয়োজন শুরু হয়। এখানে প্রায় এক যুগের বেশি সময় থেকে এই চরক উৎসবের আয়োজন করা হয়। গত দুইবছর করোনার কারণে চড়ক ঘুরেনি। তাই এবার পরিবার পরিজন নিয়ে উৎসবটি উপভোগসহ মায়ের আরাধনা করতে এসেছি।

উৎসব আয়োজক কমিটির সভাপতি পরিতোষ চন্দ্র রায় ও সম্পাদক কান্তি চন্দ্র সরকার বলেন, চৈত্র সংক্রান্তি উপলক্ষে পুরো বৈশাখ মাসজুড়ে চড়ক কালী পূঁজোর আয়োজন করা হয়। তবে আমাদের এই শ্মশানে বৈশাখের ৬ তারিখে এই উৎসবটির আয়েজন করা হয়। গত মঙ্গলবার রাত তিনটায় চড়ক কালীর পূঁজো অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই পূঁজোকে কেন্দ্র করে দুইদিনব্যাপী এই মেলা বসেছে।

আলাদীপুর গ্রামের বাসিন্দা লক্ষ্মী রানী ও জয়া রায় বলেন, এই চড়ক মেলা উপলক্ষে প্রতি বছর আমাদের পুরো গ্রাম উৎসবে মেতে ওঠে। সবাই মেয়ে-জামাইসহ আত্মীয় স্বজনদের আমন্ত্রণ জানায়। তারা আসেন। রাতে কালী পূঁজো হয়। দিনে মেলা হয়। মেলাসহ বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। মেলায় নানা রকমের খাবারের দোকান বসে । এ মেলা শেষ পর্যন্ত আর হিন্দু সম্প্রদায়ের মেলা থাকে না। এটা এ অঞ্চলের সকল ধর্মের মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়।

বড়শিতে ঝুলে থাকা অরবিন্দ চন্দ্র রায় বলেন, দীর্ঘ ১০ বছর থেকে দেশের বিভিন্নস্থানে এই কাজ করছেন তিনি। তার পিঠে অগণিত ছিদ্র রয়েছে। প্রত্যেকবার পিঠের ভিন্ন ভিন্নস্থানে ছিদ্র করে বর্শির কল লাগানো হয়। এটি করতে বেশ সাধনার প্রয়োজন।