ফ্রিডম বাংলা নিউজ

বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১, ২০২৪ |

EN

ঈদকে সামনে রেখে দর্জি পাড়ায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কারীগররা

করোনার ক্ষতি পুষিয়ে ঘুরে দাড়ানোর চেষ্টা

মেহেদী হাসান, ফুলবাড়ী, দিনাজপুর | আপডেট: বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২১, ২০২২

করোনার ক্ষতি পুষিয়ে ঘুরে দাড়ানোর চেষ্টা
দু’বছর অতিমারী করোনা প্রকোপের পর অনেকটা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে সবকিছু,ব্যবসায়ীরাও এর বাইরে নয়,ক্ষতি পুষিয়ে ঘুড়ে দাড়াতে ঈদুল ফেতর কে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন দিনাজপুরের ফুলবাড়ী পৌর শহরের দর্জি পাড়ার কারিগররা। 

দিন-রাত সেলাই মেশিনের শব্দে চারিদিক মুখরিত হয়ে উঠেছে দর্জি বাড়ী গুলো। ঈদে ধনী-গরিব, নারী-পুরুষ ছোট বড় সকলে নতুন জামা কাপড় পরিধান করে থাকে,সেই পছন্দের বাহারী ডিজাইনের নতুন পোশাক বানাতে দর্জির দোকানগুলোতে ভিড় শুরু করছেন তারা। 

বুধবার সরেজমিনে পৌর বাজারের বস টেইলার্স, ডন টেইলার্স, সোসাইটি টেইলার্স, ভিআইপি টেইলার্স, মা টেইলার্সসহ বিভিন্ন টেইলার্সের দোকান ঘুরে দেখা গেছে,প্রায় সব টেইলার্সেই নতুন জামা কাপড় তৈরী করতে সিরিয়াল দিয়ে ভিড় জমাচ্ছেন নারী,পুরুষ,শিশু সহ নানা বয়সের গ্রাহকরা। উৎসব আসলেই দর্জির দোকানগুলোতে যেমন নারী-পুরুষের পদচারণা বাড়তে থাকে তেমনি বিপণী বিতানগুলোতেও তরুন-তরুণী ও বিভিন্ন বয়সের নারীদের উপস্থিতি বেশ লক্ষ্যনীয়। তৈরিকৃত পোশাক অনেক সময় শরীরের সাথে পুরোপুরি মানানসই হয় না বিধায়, অনেকে পিস কাপড়ের দর্জি দোকানে সেলাই করা পোশাকের প্রতি আগ্রহ থাকে বেশি। এদিকে কাপড় সেলাই করতে নাওয়া ভুলে শুধুমাত্র গ্রাহকদের সময়মতো অর্ডার দেয়া কাপড় তৈরী করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা।

ক্রেতারা জানান, ছেলেমেয়েদের চাহিদা অনুযায়ী ভাল কাপড় কিনে পছন্দের পোশাক তৈরির জন্য দর্জির দোকানে এসেছেন। কেউ পছন্দ করেন তৈরিকৃত পোশাক, আবার নিজ পছন্দের ডিজাইনে তৈরি করা পোশাকে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। এক্ষেত্রে তরুণ তরুণী আর বিভিন্ন বয়সের নারীর সংখ্যাই বেশী।

দর্জি কারিগর নূর আলম,উষা রানী ও পিংকি রায় জানান, বিভিন্ন কাজের ওপর ভিত্তি করে কাজের মজুরি পান তারা। তবে এবার কাজের মজুরি বাড়িয়ে দিয়েছেন টেইলার্স মাস্টাররা। এ কারণে কারিগররাও এবার মজুরি বেশি পাচ্ছেন। 

বস টেইলার্সের সত্বাধীকারী মো মাজেদুর রহমান সহ অন্যন্য টেইলার মাষ্টাররা জানান, সারা বছর উৎসব বাদেও স্কুল ড্রেস তৈরীর অর্ডার হয়ে থাকে,তবে করোনার কারনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অনেকটাই ক্ষতির সম্মুখ্যিন হতে হয়েছে তাদের। এবছর ঈদ কে সামনে রেখে ক্রেতারা কাপড় কিনে বিভিন্ন দর্জির দোকানে তাদের পছন্দের পোশাক বানাচ্ছেন। এতে করে কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে ঘুরে দাড়াবেন তারা। একই কথা বলেন কাপড় ব্যবসায়ী শুওকত আলী সহ বিভিন্ন বিপনি বিতানের ব্যবসায়ীরাও। এবছর কাপড়ের দাম একটু চড়া,পাইকাড়ী বাজারে সিন্ডিকেটের কারনেই অন্যন্য বছরের তুলনায় এবছর মুল্য বেশি দিয়ে কিতে হচ্ছে দাবী কাপড় ব্যবসীদের।

এদিকে, কয়েকটি দর্জি কারখানাগুলোতে অতিরিক্ত কারিগর নিয়োগ করে গভির রাত পর্যন্ত ক্রেতাদের চাহিদা মোতাবেক পোশাক তৈরির কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন কারিগরা। যাতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পোশাক সরবরাহ করা যায়। কারিগরদের নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় মান সম্পন্ন বিভিন্ন ডিজাইনের পোশাক তৈরির জন্য গ্রাহকরাও ছুঁটছেন শহরের পছন্দ মত মানসম্পন্ন টেইলার্সে।

বিভিন্ন দর্জির দোকান ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতাদের অর্ডার নিতে ব্যস্ত। কেউ কেউ অর্ডার নিচ্ছেন, আবার অনেক দোকানে অর্ডার নেয়া বন্ধ করে দিয়েছে।

আনন্দ টেইলার্সের স্বত্বাধিকারী আনন্দ চন্দ্র সরকার জানান, এবার সাধারণত রমজানের আগেই থেকে কাজের চাপ বেড়ে গেছে। ফলে অর্ডার কম নেয়া হয়েছে। ডিজাইনের ওপর নির্ভর করে মজুরি নেয়া হচ্ছে। 

প্রিন্স টেইলার্সের স্বত্বাধিকারী ধীরেন্দ্র নাথ ও লক্ষণ টেইলার্সের স্বত্বাধিকারী লক্ষণ চন্দ্র রায় জানান, যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আধুনিক ফ্যাশন ডিজাইনের পোশাক বানানোর কারণে ক্রেতারা এখানে আসেন। ঈদে বাড়তি চাপ থাকে। তবে পর্যপ্ত কাজ পাওয়ায় বর্তমানে অর্ডার নেয়া বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

দর্জির দোকানে আসা কয়েকজন জানান, এবছর কাপড়ের দাম বেশি পাশাপাশি তৈরি মজুরিও বেড়ে গেছে,সেকারনে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
ফুলবাড়ী ব্যবসায়ী সমিতি নেতা সহকারী অধ্যাপক মো. শেখ সাবির আলী জানান, করোনার কারনে দুবছর ধরে ব্যবসায় চরম সংকটে পড়তে হয়েছে। তবে সবকিছু স্বাভাবীক হওয়ায়, এবছর কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে নিয়ে ঘুরে দাড়ানোর চেষ্টা করছে ব্যবসায়ীরা।