বিভিন্ন সমস্যার পাশাপাশি মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে এবারও পহেলা বৈশাখে পঞ্চগড়ের চারটি সীমান্তে হচ্ছে না ভারত-বাংলাদেশের নাগরিকদের মিলন মেলা। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) যৌথভাবে সীমান্তে মিলন মেলা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেন। এই নিয়ে চারবার একই কারণে বন্ধ থাকছে মিলন মেলা।
বৃহস্পতিবার (১৪ এপ্রিল) মিলন মেলা না হলেও জেলা ও পাশ্ববর্তী জেলার বাসিন্দারা বিভিন্ন যানবাহনে করে এসেছিলেন সীমান্ত এলাকায়।
বিজিবি ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবছর পহেলা বৈশাখে পঞ্চগড়ের অমরখানা, শুকানি, মাগুরমারি ও ভূতিপুকুর সীমান্তে দুই বাংলার নাগরিকদের মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হয়। এরই মধ্যে অমরখানা সীমান্তের মেইন পিলার ৭৪৩ এর ৩ সাব পিলার থেকে মেইন পিলার ৭৪৪ এর ২ সাব পিলার, মাগুরমারী সীমান্তের মেইন পিলার ৭৪২ এর ১১ সাব পিলার থেকে মেইন পিলার ৭৪২ এর ১২ সাব পিলার, সুকানি সীমান্তের মেইন পিলার ৭৪১ এর ৬ সাব পিলার থেকে মেইন পিলার ৭৪১ এর ৭ সাব পিলার এবং ভুতিপুকুর সীমান্তের মেইন পিলার ৭৩৭ এর ২ সাব পিলার থেকে ৬ সাব পিলার এলাকা পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে এই মিলনমেলা জমে উঠে।
কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে ২০১৯ সাল থেকে এসব সীমান্তে মিলন মেলা হচ্ছে না। মিলন মেলায় আসা অধিকাংশ মানুষের পাসপোর্ট ভিসা করা সম্ভব হয় না। দুরদুরান্ত থেকে আসা মানুষেরা অনেকেই আত্নীয় স্বজনের সঙ্গে কয়েক মূহুর্ত দেখা করতে এই দিনটির জন্য অপেক্ষায় থাকেন।
কাটাতারের বেড়ার ফাঁক গলিয়ে একে অন্যের সাথে কথা বলতেন ভাব বিনিময় করতেন। মানুষ আত্নীয় স্বজনের সঙ্গে দেখা করতে এলেও মন খারাপ করে ফিরে যেতে হয়েছে তাদের।
নীলফামারী জেলার জলঢাকা উপজেলার কৈমারী থেকে মাইক্রোবাসে করে এসেছিলেন একদল মানুষ। তাদের মধ্যে দীপঙ্কর রায় আরটিভি নিউজকে জানিয়েছেন, তিন বছর পর ভারতের জলপাইগুড়ি ও শিলিগুড়িতে অবস্থানরত আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে মিলন হবে এই আশায় অমরখানা সীমান্তে এসেছিলাম। অনেকদিন দেখা না হওয়া স্বজনদের জন্য উপহার সামগ্রী নিয়ে এসেছিলাম। দেখা না হওয়ায় এসব ফেরত নিয়ে যেতে হচ্ছে। সীমান্তে এসে মিলন মেলা হবে না জানতে পেরে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে বাড়ি ফিরে যাচ্ছি।
পঞ্চগড় সদর উপজেলার অমরখানা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নুরুজ্জামান বিজিবি ও প্রশাসন মিলন মেলা না হওয়ার বিষয়টি আমাদের আগেই জানিয়েছেন। এ কারণে আমরা স্থানীয়ভাবে মাইকিং করেছি। তারপরও চার বছর পর মিলনের আশায় বিভিন্ন এলাকার সাধারণ মানুষ যানবাহন নিয়ে সীমান্তে এসে ভিড় করছে।
পঞ্চগড় ১৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্ণেল গোলাম ফজলে রাব্বী আরটিভি নিউজকে বলেন, করোনার কারণে বিএসএফ এবারও মিলন মেলা হবে না মর্মে সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে।মিলন মেলা হচ্ছে না এ বিষয়টি আগেই স্থানীয় প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, ১৯৪৭ সালে দেশ বিভক্তির পর অনেকের আত্মীয়-স্বজন উভয় দেশে থেকে যায়। ভারত-বাংলাদেশের সীমান্তে কাটাতারের বেড়া নির্মাণ করায় অনেকেরই যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়। পাসপোর্ট করে নিয়মতান্ত্রিকভাবে ভারত বা বাংলাদেশে যাতায়াত করে আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে স্বাক্ষাৎ করা ব্যয়বহুল এবং সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তাই দুই বাংলার মানুষ এই বিশেষ দিনটিতে আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার সুযোগ পান।