ফ্রিডম বাংলা নিউজ

শুক্রবার, নভেম্বর ২২, ২০২৪ |

EN

প্রশংসায় ভাসছেন পুলিশ

অবশেষে মাথা গোজার ঠাঁই পেলেন সোনাবী বেগম প্রশংসায় ভাসছেন পুলিশ

মেহেদী হাসান, ফুলবাড়ী, দিনাজপুর | আপডেট: বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ১৪, ২০২২

অবশেষে মাথা গোজার ঠাঁই পেলেন সোনাবী বেগম প্রশংসায় ভাসছেন পুলিশ

বাংলাদেশ পুলিশ বিভাগের দেয়া উপহারের বাড়ী

দির্ঘ ৩০ বছর পুর্বে তাকে ফেলে রেখে চলে যান তার স্বামী,এর পর আর ফিরে আসেনি,সে এখন অন্যত্র থাকেন। এর পর থেকে কষ্টের জীবন শুরু হয় গ্রামের হত দরিদ্র ভুমিহীন স্বামী পরিত্যাক্তা নারী সোনাবী বেগমের।

বিয়ের কিছুদিন পরে তার এক ছেলে ও এক মেয়ের জন্ম হয়। এর কিছুদিন পরেই নিরুদ্দেশ হন তার স্বামী। সে সময় চরম কষ্টে দিনপার করেন সোনাবী বেগম,তার এই দুর্দশা দেখে তাকে থাকার জন্য গ্রামের এক ব্যাক্তি তার নিজের এক খন্ড জমি ছেড়েদেন। সেখানেই চালদিয়ে একটি ঝুপড়ি বানিয়ে থাকতেন সোনাবী বেগম। কখোনো অন্যের বাড়ীতে কাজ করে, আবার কখোনো ধান চালের মিলে দিনমজুরের কাজ করে ছেলে মেয়ে কে বুকে আগলে রেখে অনেক কষ্টে লালন পালন করে বড় করেন তিনি। 

বর্তমানে তার ছেলে বিয়ে সাদি করে বৌ-বাচ্চা নিয়ে আলাদা একটি আশ্রয়নে থাকেন,সে তার বৃদ্ধ মায়ের খোঁজ খবর রাখেন না। মেয়েটিও ঢাকায় গার্মেন্টসে কাজ করেন,তবে সে তার মায়ের জন্য প্রতি মাসে কিছু টাকা পাঠায়, সোনাবী বেগম নিজেও কাজ করেন একা মানুষ এই দিয়ে কোনো রকমে চলে আসছিল তার সংসার। কিন্তু এর মাঝে জায়গা কিনে বাড়ী করার মতো সামর্থ ছিল না তার।

এদিকে এমন একজন গৃহহীনকে বাড়ী দেয়ার জন্য খুজছিলেন স্থানীয় থানা পুলিশ। পরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি খয়েরবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান মো. এনামুল হক সোনাবী বেগম এর  দুর্দশার কথা ভেবে থানা পুলিশের সাথে যোগাযোগ করলে, সোনাবী বেগমের খোঁজ পায় পুলিশ। দেয়া হয় জমি ও বাড়ী। ফুলবাড়ী থানা পুলিশের তত্বাবধায়নে এই বাড়ী নির্মান কাজ শেষ করা হয়। হস্তান্তর করা হয় সোনাবী বেগমের কাছে। বাড়ী পেয়ে  খুশি হয়েছেন তিনি।

কথা গুলো বলছিলেন,দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার খয়েরবাড়ী ইউনিয়নের পুর্ব নারায়নপুর গ্রামের মো. আবুল কাশেম এর স্ত্রী সোনাবী বেগম (৫০)। তিনি বাংলাদেশ পুলিশ বিভাগের দেয়া উপহারের একটি বাড়ী পেয়েছেন । এই স্বপ্নের বাড়ী পেয়ে আনন্দে ভাসছেন সোনাবী বেগম,খুশি হয়েছেন এলাকাবাসীও।

প্রধান মন্ত্রীর নির্দেশে বাংলাদেশ পুলিশের অর্থায়নে গত ১০ এপ্রিল সারাদেশে একযোগে দেশের প্রতিটি থানা এলাকায় একটি করে দরিদ্র ভূমিহীনদের জন্য নির্মিত এই বাড়ীগুলি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধান অতিথি হিসেবে উদ্বোধন করেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের পরে সোনাবী বেগমের হাতে তুলে দেয়া হয় তার স্বপ্নের বাড়ীর চাবী।

সোনাবি বেগম বলেন,নিজের একটি বাড়ী হবে কখনও ভাবিনি,শেষ বয়সে এসে মাথা গোজার একটা ঠাঁই পেয়েছি, এই ভেবে আনন্দ লাগছে। 
দুই শতাংশ জমির উপর সোনাবী বেগম এর  স্বপ্নে বাড়ীতে রয়েছে ২টি থাকার ঘর, একটি বাথরুম, রয়েছে বিদ্যুৎ সংওযাগ,দুটি ফ্যান ও টিউবলে পানির ব্যবস্থা সহ পুর্নাঙ্গ একটি বাড়ী। সোনাবী বেগমের স্বপ্ন পুরনে পুলিশের এমন উদ্যোগে খুশি হয়েছেন এলাকাবাসীও।

ফুলবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো.আশ্রাফুল ইসলাম বলেন,মুজিব শতবর্ষ স্মরনীয় করে রাখতে পুলিশ বিভাগের উদ্যোগে প্রতিটি থানা এলাকায় একজন করে গৃহহীনকে জমি সহ গৃহ প্রদানের কার্যক্রম হাতে নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় এ উপজেলাতেও বাড়ী দেয়া হয় গৃহহীন সোনাবী বেগম কে।

খয়েরবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. এনামুল হক জানান, এলাকার জনগন আমাকে বিশ^াস করে এই গুরুত্বপুর্ণ দায়ীত্ব দিয়েছেন তাদের পাশে থাকা আমার দায়ীত্ব ও কর্তব্য। সোনাবী বেগম এর দুর্দশার কথা ভেবে থানা পুলিশের সাথে যোগাযোগ করলে পুলিশ বিভাগের পক্ষ থেকে তাকে বাড়ীটি বানিয়ে দিয়েছেন। এজন্য আমি আনেক খুশি হয়েছি,বাংলাদেশ পুলিশ বিভাগের কাছে আমি কৃতঙ্গতা প্রকাশ করছি এবং ধন্যবাদ জানাচ্ছী।