তেঁতুলিয়ায় গভীর রাতে ভাড়াটে সন্ত্রাসী নিয়ে টিনের চালা ঘর তুলে অবৈধ ভাবে জমি দখলের অভিযোগে সাবেক ইউপি সদস্য ও শালবাহান ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম লালুকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
সোমবার বিকেলে মন্ডলপাড়া নিজ বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
জানাযায়, গত শনিবার গভীর রাতে শালবাহান ইউনিয়নের কালান্দিগঞ্জ গ্রামের জাহেরুল ইসলামের ভোগদখলীয় জমিতে ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের নিয়ে অবৈধভাবে লালু ও তার সহোদর তিন ভাই জমি দখল করতে যায়। জমি দখলে বাঁধা দিতে গেলে মারধরের শিকার হন ভুক্তভোগীরা। পরে গুরুতর আহত আহত অবস্থায় ভুক্তভোগী জাহেরুল ইসলামকে উদ্ধার করে উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এ ঘটনায় জাহেরুল ইসলামের ছেলে নাজমুল ইসলাম বাদী হয়ে শালবাহান ইউনিয়নের পত্মীপাড়া গ্রামের সোহরাব আলীর পুত্র নুরুল ইসলাম লালু (৫০), তারা মিয়া (৪০), বাবুল আক্তার (৩৫) সহ ১৮ জনকে অভিযুক্ত করে থানায় এজাহার করেন।
অভিযোগে জানা যায়, বোয়ালমারী মৌজার ১৮ খতিয়ানের ২০০৫, ২০০৬ ও ২০০৭ এই তিনটি দাগে ১ একর ৭৩ শতক জমির মধ্যে ৬৩ শতক জমি দীর্ঘ দিন ধরে ভোগ দখল করে আসছেন জাহেরুল ইসলাম ও তার পুত্র নাজমুল ইসলাম। কিন্তু বর্ণিত জমি অভিযুক্তর আওয়ামীলীগ নেতা সাবেক ইউপি সদস্য লালু দাবি করছেন তাদের জমি।
দীর্ঘ সময় ধরে জমি জবর দখলে গভীর ষড়যন্ত্র করে আসছিলেন। এ নিয়ে আদালতে দ্বারস্থ হলে উভয় পক্ষকে স্ব-স্ব অবস্থানে থাকার নির্দেশ প্রদান করা হয়।
আরো জানান, বাটোয়ারা মামলা করে রায় পান ভুক্তভোগীরা। অপরদিকে অভিযুক্তরা আদালতে মামলা করলে তা খারিজ হয়ে যায় বলে জানান মামলার বাদী।
ভুক্তভোগী নাজমুল হক জানান, রমজানের সেহরীর সময় ভাড়াতে লোকজনসহ ধারালো অস্ত্র নিয়ে জবর দখল করতে জমিতে অবস্থান নিয়ে নুরুল ইসলাম লালু, তারা মিয়া, বাবুল ও মোস্তফা গংরা। অস্ত্রসস্ত্র দিয়ে ভয়ভীতি দেখাতে থাকে। এতে জাহেরুল ইসলাম ও তার লোকজন বাধা দিতে গেলে মারধরের শিকার হন। পরে তারা জবর দখল করে জমিতে দুটি টিনের চালা তুলে। উপায়ন্তর না পেয়ে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করলে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে জমি দখলে বাধা দেন এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জাহেরুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে রেকর্ডীয় জমি আমরা শান্তিপূর্ণভাবে ভোগ দখল করে আসছি। কিন্তু নুরুল ইসলাম লালু ও তার ভাইরা খতিয়ান বলে জমিটি তাদের দাবি করছে। এ নিয়ে আদালতে বাটোয়ারা মামলা করে রায় পেয়েছি। কিন্তু লালু গংরা শনিবার রাতে ভাড়াতে লোকজন নিয়ে জমিতে টিনের চালা তুলে দখল করে নেয়। বাধা দিতে গেলে মারধর করে। এক পর্যায়ে প্রাণনাশের উদ্দেশে আমার গলা চেপে ধরে জবাই করার চেষ্টা চালায়।
অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে এলাকায় রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। মূর্তমান আতঙ্ক হিসেবে দেখছে এলাকাবাসী। জমি দখল, নিরীহ মানুষের ওপর চলে নির্যাতন, চাঁদাবাজি আর মিথ্যা মামলা দিয়ে এলাকার মানুষকে হয়রানিসহ বহু অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে লালুর বিরুদ্ধে। তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন লালুসহ অভিযুক্তরা। গ্রেফতারের আগে সব অস্বীকার করে নুরুল ইসলাম জানান, জমিটা আমাদের। তারা অবৈধভাবে দখল করে ভোগদখলে ছিল। তাই দখলে নিয়েছি।
এ বিষয়ে তেঁতুলিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ আবু ছায়েম মিয়া জানান, নুরুল ইসলাম লালু এজাহারভুক্ত আসামী। তিনি গত শনিবার গভীর রাতে অবৈধভাবে জমি দখলের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। তার বিরুদ্ধে গভীর রাতে জমি দখলের অভিযোগে লালুসহ ১৮জনকে নামীয় এবং অজ্ঞাতনামা প্রায় একশো জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। সে অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।