রমজান মাস শুরুর সাথে সাথে দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে আরো একধাপ বেড়েছে সবজি,মুরগী ও মাছসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম। এতে করে বিপাকে পড়েছে মধ্যবিত্তসহ নিম্ন আয়ের মানুষ।
সরেজমিনে বাজারে ঘুরে জানাগেছে, রমজান মাস শুরু হওয়ার সাথে সাথে কেজি প্রতি আলু পটল শাকের দাম বেড়েছে ৪ থেকে ৫ টাকা। বেগুন কেজি প্রতি বেড়েছে ১০ থেকে ১৫টাকা, বয়লার মুরগী ২০ টাকা ও কক সোনালী মুরগীতে বেড়েছে ৩০ টাকা। গত কয়েকদিন পূর্বেও প্রতি কেজি আলু ১৮ থেকে ২০ টাকা দরে বিক্রি হলেও, এখন কেজি প্রতি ২২ থেকে ২৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পটল ২৫ থেকে বেড়ে ৫০ টাকা, বেগুন ২০ টাকা থেকে বেড়ে এখন ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, দেশি রুই মাছ ২৫০ টাকা থেকে বেড়ে এখন ৩০০ টাকা, কক মুরগী ১৬০ টাকা থেকে বেড়ে এখন ১৯০ কেজি। এর সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে কাচাঁ মরিচ দেশি পেয়াঁজ, ডিম কলাসহ সকল নিত্য প্রয়োজনীয় পন্যের দাম।
ব্যবসায়ীরা বলছেন পাইকারী বাজারে দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় তাদের বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। এদিকে বাজারদর বৃদ্ধি পেলেও,আয় কমেছে খেটে খাওয়া মানুষগুলোর। দিনাজপুর অঞ্চল কৃষির উপর নির্ভশলী, এই অঞ্চলের প্রধান ফসল ধান,বর্তমানে বোরো ধান চাষ করে কৃষকদের ঘর শূন্য হয়ে পড়েছে। বোরো ধান ঘরে উঠতে এখনো দুইমাস বাকী,বোরো ধান কাটা-মাড়াও শুরু না হওয়া পর্যন্তু কর্মহীন হয়ে পড়েছে কৃষি খাতের দিন মজুররা। ফলে কর্মহীন এই সময়ে পবিত্র রমজানে দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতিতে বিপাকে পড়েছে কৃষক,মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষ।
বারকোনা গ্রামের দিনমজুর খাদেমুল ইসলাম বলেন মাঠে কাজ নেই,একারনে তিনি রিক্সা নিয়ে বের হয়েছেন,কিন্তু রিক্সার যাত্রীও মিলছেনা। দিনমজুর ইউনুস আলী বলেন, মাঠে কাজ না থাকায় তিনি এখন বেকার সময় কাটাচ্ছেন, ঘরে যা মজুদ ছিল তা সবই প্রায় শেষ, এখন পরিবার পরিজন নিয়ে বাকি দিন কিভাবে চলবে, এই নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তিনি।একই কথা বলেন দিন মজুর রোস্তম মিয়া রইচ উদ্দিনসহ অনেকে।
ফুলবাড়ী রিক্সা-ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ফকির আলী বলেন, বর্তমানে মাঠে কাজ না থাকায় কৃষি কাজের দিন মজুরগণ এখন শহরে এসে ভ্যান রিক্সা চালাচ্ছেন,অথচ শহরে তেমন যাত্রীও পাওয়া যাচ্ছেনা, সারা দিনে যে আয় হয় তা দিয়ে পরিবার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। তার উপর দ্রব্য মূল্যের উর্দ্ধগতিতে পরিবার পরিজন নিয়ে বিপাকে পড়েছে তিনিসহ অসংখ্য শ্রমিক,দিন-মজুর,নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার।
স্বজন পুকুর গ্রামের শহিদুল ইসলাম বলেন পূর্বে এক হাজার টাকার বাজার করলেও,৫দিন চলতো, এখন এক হাজার টাকার বাজার কিছুই হয়না। তিনি বলেন দিন দিন বাজার দর হু হু করে বাড়লেও, বাড়েনি আয়।
ফুলবাড়ী খনি আন্দোলনের নেতা ও তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির ফুলবাড়ী শাখার আহবায়ক সৈয়দ সাইফুল ইসলাম জুয়েল বলেন, প্রতি বছর রমজান মাসকে সামনে রেখে, একটি মজুদদার চক্র দ্রব্যমূল্যের মূল্য বৃদ্ধি করে অধিক মুনাফা করে। অথচ তাদের চিহ্নিত করা হয়না, ফলে কষ্টে পড়ে খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। তিনি এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য পারিবারিক রেশন পদ্ধতি চালু করার দাবী জানান তিনি।