Can't found in the image content. ১টা তরমুজের দামে মিলছে ১মণ পেঁয়াজ-রসুন | ফ্রিডম বাংলা নিউজ
ফ্রিডম বাংলা নিউজ

শুক্রবার, ডিসেম্বর ২৭, ২০২৪ |

EN

১টা তরমুজের দামে মিলছে ১মণ পেঁয়াজ-রসুন

নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: মঙ্গলবার, এপ্রিল ৫, ২০২২

১টা তরমুজের দামে মিলছে ১মণ পেঁয়াজ-রসুন
ঝিনাইদহের শৈলকুপায় ধ্বস নেমেছে পেঁয়াজ-রসুনের বাজারে। এখন চলছে মসলা জাতীয় এই ফসল উত্তোলন ও কেনা-বেচার ভরা মৌসুম। তবে চাষী সহ ক্রেতা-বিক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের কপালে ভাজ পড়েছে পেঁয়াজ-রসুনের দাম নিয়ে। বাজারে উঠেছে মৌসুমী ফল তরমুজ, তবে এক একটা বড় সাইজের তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৫’শ টাকা দরে। অন্যদিকে বাজারে ১মণ পেঁয়াজ-রসুনও বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৫’শ টাকা মণ দরে। প্রকারভেদে অবশ্য পেঁয়াজ ৫’শ থেকে ৭’শ টাকা মণ দরেও বিক্রি হচ্ছে তবে রসুন বিক্রি হচ্ছে আরোও কম দামে। ২’শ থেকে ৩’শ টাকা মণ আবার সর্বোচ্চ ৫’শ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে কোন কোন হাটে রসুনের কোন দামই পাচ্ছে না চাষী এবং ব্যবসায়ীরা, সেক্ষেত্রে ফেলে দেয়ার ঘটনাও ঘটছে। দেশের অন্যতম পেঁয়াজ উৎপাদনকারী এলাকা হিসাবে খ্যাত ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলা। শৈলকুপা উপজেলার লাঙ্গলবাধ, হাটফাজিলপুর, শিতালী, নাগিরহাট, রেয়ড়া, গাড়াগঞ্জ, খুলুমবাড়িয়া, কাতলাগাড়ী, কচুয়া, শেখপাড়া, ভাটই,শেখড়া বাজার সহ বিভিন্ন বাজারে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।

গত বছর শৈলকুপায় পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হলেও এবার প্রতিকুল আবহাওয়ার কারণে ফলন এমনিতে কম হয়েছে। প্রতি মণ পেঁয়াজ গত মৌসুমে ১৪শ থেকে ১৫শ টাকা দরে বিক্রি হলেও এবছর বাজারে ৫’শ থেকে ৭’শ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি ১বিঘা জমি থেকে কৃষকেরা গত মৌসুমে কমপক্ষে ১শ মণ করে পেঁয়াজ ঘরে তুললেও এবার বিঘা প্রতি ৪০থেকে ৫০ মণ করে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে। মাঠ থেকে পেঁয়াজ বাড়িতে এনে কাটা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা সহ বাজারজাত ও ঘরে রাখা নিয়ে কৃষকদের দুঃশ্চিন্তার অন্ত নেই।

শৈলকুপা সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ঝিনাইদহের ৬টি উপজেলার ভেতরে শৈলকুপা উপজেলায় সবচেয়ে বেশী পেঁয়াজ চাষ হয়। এই উপজেলার মাঠের পর মাঠ শুধুই পেঁয়াজ। জেলার ১০হাজার হেক্টর জমির পেঁয়াজের মধ্যে এখানেই এবার চাষ হয়েছে ৮হাজার ৪শ ৫হেক্টর জমিতে। দেশের পেঁয়াজের চাহিদার বড় একটি অংশের যোগান হয় শৈলকুপা থেকে।

শৈলকুপাতে সাপ্তাহিক শনি ও মঙ্গলবার দুটি হাট বসে পেঁয়াজের। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকার ও ব্যাপারীরা একদিন আগেই চলে আসে শৈলকুপাতে, তারা ট্রাকে ভর্তি করে পেঁয়াজ নিয়ে যায় ঢাকার কারওয়ান বাজার, ভৈরব, সিলেট, চট্রগাম, খুলনা, বরিশাল সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যায়।

শৈলকুপা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের মাঠ ঘুরে দেখা গেছে পেঁয়াজের ছড়াছড়ি। পাইকপাড় গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে পেঁয়াজ,ক্ষেতেও রয়েছে। কৃষকেরা বাড়িতে এনে স্তুপ করে রাখছেন বিক্রির আশায়। তবে পেঁয়াজ সংরক্ষণের কোন ব্যবস্থা না থাকায় বেশীর ভাগ পেঁয়াজ তুলেই বিক্রি করতে বাধ্য হন উপজেলার কৃষকরা।

এদিকে শৈলকুপা কৃষি অফিস জানিয়েছে, উপজেলায় চাষযোগ্য মোট জমি আছে ২৮ হাজার ৫শ হেক্টর। তারমধ্যে এ বছর পেঁয়াজের চাষ হয়েছে ৮হাজার ৪শ ৫ হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে শুধু পাইকপাড়া গ্রামে চাষ হয়েছে ৩৫০ হেক্টর জমিতে। এবছর বারি-১, লাল তীর, লাল তীর কিংসহ বেশ কয়েকটি জাতের পেঁয়াজ বেশি চাষ হচ্ছে। 

বিজুলিয়া গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমানের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির বাইরে নারীরা পেঁয়াজ থেকে গাছ কেটে আলাদা করছেন। বাড়ির মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে পেঁয়াজ। ঘর-বারান্দা কোথাও একটু খালি জায়গা নেই।  তিনি জানান, এবছর বেশ কয়েক বিঘা জমিতে পেঁয়াজের চাষ করেছেন। এসব জমিতে হাইব্রীড লাল তীর কিং জাত রয়েছে। তবে ফলন ভাল হয়নি আর বিক্রিও করতে হচ্ছে পানির দরে।

মনোহরপুর গ্রামের কৃষক লিটন, তাহের সহ কয়েকজন জানান, প্রতি বিঘা জমিতে পেঁয়াজের বিজ তেকে শুরু করে তোলা পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তবে ফলন কম হওয়ায় এবার একবিঘায় (৪০ শতাংশ) ৪০ থেকে ৫০ মণ করে পেঁয়াজ পাচ্ছেন। যা বর্তমান বাজার প্রতি মণ ৫শ থেকে ৭শত টাকা দরে বিক্রি করছেন। এতে সার-ওষধ আর কৃষি শ্রমিকের বিল পরিশোধ করাই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।

শৈলকুপার চর সোন্দাহ গ্রামের কৃষক আমিরুল ইসলাম জানান, তিনিও তার জমিতে এবার পেঁয়াজ চাষ করেছেন। ক্ষেত থেকে ৫শ মণের বেশী পেঁয়াজ পাবেন বলে আশা করছেন। তিনি বলেন, সরকারিভাবে এ উপজেলায় পেঁয়াজ সংরক্ষণের কোন ব্যবস্থা নেই। যে কারণে কৃষকরা পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে পারেন না। তাই সঠিক মূল্য থেকে বঞ্চিত হন।

শৈলকুপার পেঁয়াজ ব্যাবসায়ী রেজাউল বিশ্বাস জানান, দেশের চাহিদার বড় একটি অংশের যোগান শৈলকুপা থেকে হয়ে থাকে।
লাঙ্গলবাধ বাজারের পেঁয়াজ ব্যাবসায়ী রাম কুন্ডু জানান, রবি ও বৃহস্পতিবার বাজারে ১০ থেকে ১২ হাজার মন পেঁয়াজ বিত্রি হয়ে থাকে। তা কিনে দেশের বিভিন্ন জায়গায় রপ্তানি করে থাকি।

উপজেলার পাইকপাড়া ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা কোরবান আলী জানান, এ ব্লকে ৪’শ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয়েছে। এখানে ১৫৬০টি কৃষি পরিবার রয়েছে। কম-বেশি প্রায় সব পরিবারে জমিতে রয়েছে পেঁয়াজ। চাষটি ক্রমেই বাড়ছে বলে তিনি জানান।

পেঁয়াজের এমন দুরাবস্থার পাশাপাশি আরেক মসলা জাতীয় ফসল রসুন নিয়েও বিপাকে পড়েছে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। বাজারে এখন চায়না থেকে আমদানি করা চায়না রসুনের ছড়াছড়ি। এই রসুন মনপ্রতি ১৫ থেকে ১৬শ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে দেশীয় পুরাতন রসুন যেন গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোন কোন বাজারে পুরাতন রসুন ২’শ থেকে ৩’শ টাকা মন দরে আবার কোথাও ফেলে দেবার ঘটনাও ঘটছে। বাজারে এখন মৌসুমী ফল তরমুজ এক একটি বিক্রি হচ্ছে ৩’শ থেকে ৫’শ টাকা করে। ফল ব্যবসায়ী বাকুল বিশ^াস, বাবলুর রহমান জানান, তরমুজের দাম একটু চড়া। ফল আর ফসলের দাম সমান হওয়ায় তা যেন হাসির খোরাক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

শৈলকুপা বাজারে পেঁয়াজ বিত্রি করতে আসা কুশবাড়িয়া গ্রামের আতিয়ার খাঁন জানান, এক মন পেঁয়াজ বিত্রি করে একটি তরমুজ কেনা যাচ্ছে না। পেঁয়াজের দাম এমন হলে পরের বছর থেকে আর পেঁয়াজ চাষ করবো না।

শৈলকুপা বাজারের পেঁয়াজ-রসুন ব্যবসায়ী মশিউর রহমান, শরিফুল ইসলাম বলেন, রসুন-পেঁয়াজের কোন দাম নেই, অবিক্রিত থেকে যাচ্ছে এসব ফসল।

শৈলকুপা উপজেলা বণিক সমিতির সভাপতি আবদুস সোবহান জানান, ১মণ রসুন বিক্রি করে সেই টাকায় ১টি তরমুজও কেনা যাচ্ছে না। বাজারে অনেক ব্যবসায়ী রসুন ফেলে দিচ্ছে। তিনি দাবি জানান দ্রুত রসুন ও পেঁয়াজের এলসি( আমদানী) বন্ধ করতে হবে।

শৈলকুপা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আকরাম হোসেন জানান, এ উপজেলায় ক্রমেই পেঁয়াজের চাষ বাড়ছে। এবার অবশ্য প্রাকৃতিক কারণে উপজেলায় পেঁয়াজের ফলন ভালো হয়নি। আর পেঁয়াজের দাম নিয়ে কৃষকদের হতাশা প্রসঙ্গে বলেন, চাষীদের উচিত পেঁয়াজ কিছুদিন সংরক্ষণ করা। পেঁয়াজ-রসুনের দাম কমের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে বলে জানান।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ঝিনাইদহ জেলায় প্রতি বছর পেঁয়াজ চাষের লক্ষমাত্রা ধরা হয় প্রায় ১০হাজার হেক্টর জমিতে তবে চাষ হয় লক্ষমাত্রার চেয়েও বেশী।