মাঠের রাজনীতিতে বিরোধী দল হিসেবে যে নামটি আসে সেটি হলো বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। গত প্রায় ১৫ বছর দলটি ক্ষমতার বহিরে রয়েছে। নেতৃত্ব সংকট এবং দলটির নেতাদের বিতর্কিত ইমেজ দলটিকে ভাঙনের দাড়প্রান্তে নিয়ে এসেছে। দলটি চেয়ারপার্সন দুর্নীতির মামলায় একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামী এবং সরকারের অনুকম্পায় তিনি এখন কারাগারের বাহিরে রয়েছেন। এছাড়াও দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক জিয়াও সাজাপ্রাপ্ত আসামী এবং তিনি লন্ডনে পলাতক রয়েছেন। সব মিলিয়ে দলটির অবস্থা একেবারেই ভালো নয়। দলটি বার বার নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্বাবধায়ক সরকারের দাবি তুলে আন্দোলনের কথা বললেও নেতৃত্বের সংকটে তারা তা করতে পারছে না। এমনকি ঐক্য করেও বার বার বিপদে পড়ছে দলটি। ফলে এবার ঐক্য করতেও দ্বিধায় ভুগছে বিএনপি। ফলে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে বিএনপি'র বৃহত্তর ঐক্য গঠন প্রক্রিয়া।
সরকারবিরোধী বৃহত্তর ঐক্য গঠনে বিএনপি অনেক দিন ধরে কাজ করলেও এখন পর্যন্ত তেমন কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। নানা কারণে, নানা সমীকরণে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে তাদের বৃহত্তর ঐক্য গঠন প্রক্রিয়া। জামায়াতের সঙ্গে থাকা এবং ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সঙ্গে বাড়তে থাকা দূরত্ব বিএনপি'র বৃহত্তর ঐক্য গঠনকে সবচেয়ে বেশি বাধাগ্রস্ত করছে। মূলত এ সবই হচ্ছে দলটির নেতৃত্ব সংকটের কারণে। সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত না নেওয়ার ফলে এই বাধার সম্মুখীন হচ্ছে দলটি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, আগের দুই জোট ২০ দল ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মিত্রদের পাশাপাশি সমমনা বামদল ও ইসলামী দলগুলোকে নিয়ে সরকারবিরোধী বৃহত্তর ঐক্য গঠনের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে বিএনপি। কিন্তু জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ না করার কারণে বামদলগুলো বিএনপির এই ঐক্য প্রক্রিয়ায় আগ্রহ দেখাচ্ছে না। এর মধ্যে আবার ঐক্যফ্রন্টের সংগঠক ডা. জাফরুল্লাহর সঙ্গে দলটির নেতাদের দূরত্ব তৈরি হয়েছে, যা বৃহত্তর ঐক্য গঠন প্রক্রিয়াকে আটকে রেখেছে পরিকল্পনাতেই। অন্যদিকে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ শীর্ষ নেতৃত্বের ক্রমাগত সমালোচনা করতে থাকায় তার প্রতি রুষ্ট হয়েছেন বিএনপি নেতারা।
এরই ধারাবাহিকতায় জাফরুল্লাহকে বিএনপি বা তাদের সহযোগী সংগঠনের অনুষ্ঠানে তোপের মুখেও পড়তে হয়। সে কারণে সম্প্রতি বিএনপি ও তাদের সমমনা সংগঠনের কোনো কর্মসূচিতে তাকে দেখা যাচ্ছে না। দলীয় সূত্র বলছে, বৃহত্তর ঐক্য গঠনের ক্ষেত্রে এ পর্যন্ত পুরোনো মিত্র ছাড়া কারও সঙ্গেই বিএনপির আলোচনা চূড়ান্ত হয়নি। সূত্র মতে, ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে আপাতত সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করছে না বিএনপি। সম্প্রতি দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বৃহত্তর ঐক্য ইস্যুতে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে মতবিনিময় সভা না করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৃহত্তর ঐক্য ইস্যুতে বামসহ বেশ কয়েকটি দলের সঙ্গে বিএনপি ইতোমধ্যে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা করেছে। তারা জামায়াত থাকলে ঐক্যে আসবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। তবে জোট থেকে জামায়াতকে বাদ দেওয়ার কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি বিএনপি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বৃহত্তর জোট গঠনের জন্য দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চলছিল। তবে তা হচ্ছিল না। এবারও কতটুকু হবে তা নিয়ে সন্দেহ আছে। কারণ বিএনপিকে বৃহত্তর ঐক্য গঠন করতে হলে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সঙ্গে যেমন সম্পর্ক উন্নয়ন করতে হবে, তেমনি জামায়াতে ইসলামীর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিতে হবে। বৃহত্তর ঐক্য গঠন করতে হলে বিএনপিকে পরিষ্কার অবস্থান গ্রহণ করতে হবে। নইলে চ্যালেঞ্জের মুখেই থাকবে বিএনপির বৃহত্তর ঐক্য গঠন প্রক্রিয়া। এটি আর কখনো আলোর মুখ দেখবে না।