ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের (মমেক) এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে নিপীড়নের অপবাদসহ মিথ্যা অভিযোগ দেওয়ায় ১০ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কলেজের একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এদের মধ্যে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল হাসানকে তিন বছর, দুজনকে দুই বছর ও সাতজনকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়।
এ ছাড়া এ ঘটনায় অনিচ্ছাকৃত সম্পৃক্ত থাকায় প্রথম বর্ষের আরও আট শিক্ষার্থীকে সতর্ক করা হয়েছে। এ ছাড়া একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কলেজ ক্যাম্পাসে মিছিল, সভা-সমাবেশসহ সব ধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকবে।
শনিবার বিকালে কলেজের একাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি সভা শেষে সন্ধ্যায় এ তথ্য নিশ্চিত করেন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. চিত্তরঞ্জন দেবনাথ।
এদিকে কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি শাহ কামাল আকন্দ জানান, একাডেমিক কাউন্সিলের সভা ও সভার সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে সকাল থেকে ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দুই বছরের জন্য বহিষ্কৃতরা হলেন— ম-৫৫ ব্যাচের ছাত্র ফায়াদুর রহমান আকাশ ও বিডিএস-৬ ব্যাচের তামান্না তাসকিন এবং ম-৫৪ ব্যাচের সুনীতি কুমার দাস, সানবীম খান, মাহিদুল হক, তানবিন হাসান, ম-৫৫ ব্যাচের কাশফী তাবরীজ, রাপ্পু কর্মকার এবং সাখাওয়াত হোসেন সিফাত এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়।
কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. চিত্তরঞ্জন দেবনাথের সভাপতিত্বে সভাকক্ষে বেলা ১১টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত একাডেমিক কাউন্সিলের এই এক জরুরি সভা থেকে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. চিত্তরঞ্জন দেবনাথ জানান, সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ডা. আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে যতসব অভিযোগ উঠেছিল, তা তদন্তে মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রমাণিত হয়েছে। সম্মানিত একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এবং আবেদনপত্রে আপত্তিকর শব্দ ব্যবহার করায় এম-৫৩ ব্যাচের ছাত্র ও মমেক শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল হাসানকে শৃঙ্খলা কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে আগামী তিন বছরের জন্য সব ধরনের একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বিরত রাখার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পাশাপাশি কলেজ ছাত্রাবাসে অবস্থান করতে পারবেন না।
তিনি জানান, মিথ্যা অভিযোগ এনে মানববন্ধনের মাধ্যমে ভিত্তিহীন ও কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিয়ে এক শিক্ষককে তথা এই পেশার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সম্মানহানি করা হয়েছে, যা খুবই লজ্জাজনক। এতে প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি নষ্ট করা হয়েছে। যে কারণে বিভিন্ন মেয়াদে ১০ জনের দুজনকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের সিদ্ধান্ত হয়। এ ছাড়া অনিচ্ছাকৃত সম্পৃক্ত থাকায় আট শিক্ষার্থীকে সতর্ক করা হয়েছে। ভবিষ্যতে কলেজের শৃঙ্খলাবিরোধী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ না করার শর্তে মুচলেকা নেওয়া হয়েছে।
মমেক শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি অনুপম সাহা জানান, একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় একাডেমিক কাউন্সিল সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিষয়টি মমেক ছাত্রলীগের কোনো বিষয় নয়।
উল্লেখ্য, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে এম-৫৩ ব্যাচের এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ আনা হয়। এ নিয়ে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি কলেজ ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল হাসানের নেতৃত্বে একদল শিক্ষার্থী। এনিয়ে কলেজের শিক্ষক-চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়।
এ ব্যাপারে কলেজ কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। পাঁচ সদস্যের গঠিত তদন্ত কমিটি সিসি ক্যামেরায় গত ২৩ তারিখে শিক্ষকের বিরুদ্ধে মানববন্ধনের ফুটেজ দেখে আন্দোলনকারী ১৮ শিক্ষার্থীর সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে গত বুধবার। এর পর গঠিত তদন্ত কমিটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দেন।