ফ্রিডমবাংলানিউজ ডেস্ক | আপডেট: শুক্রবার, আগস্ট ২৭, ২০২১
গত
একমাস ধরে আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতারা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বিএনপিকে তীব্র ভাষায়
আক্রমণ করছেন। আগস্ট মাস শোকের মাস। শোকের মাস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের অনেক কর্মসূচি
থাকে। তাছাড়া করোনার কারণে যে লকডাউন এবং বিধিনিষেধ ছিলো সেই বিধিনিষেধও শিথিল করা
হয়েছে। এর পরপরই আওয়ামী লীগ বিভিন্ন কর্মসূচীর মধ্যে নিজেদেরকে যুক্ত করেছে। মূলত
শোকের মাস উপলক্ষে এই সমস্ত কর্মসূচিগুলো হচ্ছে। আর এই কর্মসূচিগুলোতে আওয়ামী লীগের
শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে মধ্যস্তরের নতুনদের সকলেই বিএনপিকে তীব্রভাবে আক্রমণ করছেন।
বিএনপি এমনিতেই অস্তিত্ব সংকটে ভোগা একটি রাজনৈতিক দল। দলটির ভেতরে নানারকম বিরোধ।
আন্দোলন তো দূরের কথা, নিজেদের সংগঠিত করার মতো শক্তিও দলটির নেই। এরকম পরিস্থিতিতে
বিএনপি কেন আওয়ামী লীগের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হচ্ছে এ নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা পর্যালোচনা
করেছেন।
অবশ্য
কেউ কেউ বলছেন যে, যেহেতু এটি শোকের মাস এবং ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার স্মরণে বিভিন্ন
অনুষ্ঠান হচ্ছে তাই অনিবার্যভাবে এখানে বিএনপির সমালোচনাটাই মুখ্য হবে। কারণ, ১৫ আগস্টের
যে নারকীয় হত্যাকাণ্ড, ইতিহাসের জঘন্যতম নৃশংসতা -এটির মূল পরিকল্পনাকারীদের একজন
ছিলো জিয়াউর রহমান। জিয়াউর রহমান যে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন এবং এই হত্যাকাণ্ডের
বেনিফিশিয়াল ছিলেন, এটি এখন আদালত কর্তৃক প্রমাণিত। আওয়ামী লীগ ১৫ আগস্ট প্রসঙ্গ আনলেই
জিয়াউর রহমান এবং বিএনপির রাজনীতিকে সমালোচনা করবেই। তাছাড়া ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট যে
গ্রেনেড হামলার ঘটনা সেটি বিএনপি-জামায়াত সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় হয়েছিল, তারেক এই
ঘটনার মাস্টারমাইন্ড ছিলেন, খালেদা জিয়া এই ঘটনা জানার পর তার পুত্রকে বাঁচাতে সবকিছু
ধামাচাপা দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। এগুলো এখন আদালতের মাধ্যমেই স্বীকৃত এবং প্রমাণিত।
কাজেই এসব বিষয়ে আলোচনাতে জিয়াউর রহমান, তারেক জিয়ার নাম আসবে এটি স্বাভাবিক এবং
সেই ভাবেই আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ বিএনপির সমালোচনা করছেন।
কিন্তু
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এর পিছনে আরো কিছু আরো কিছু তাৎপর্য রয়েছে। প্রথমত,
বর্তমান সরকারের তৃতীয় মেয়াদের অর্ধেক সময় পেরিয়ে গেছে। আস্তে আস্তে সকলে নির্বাচনমুখী
হচ্ছে। আর সেই নির্বাচনে বিএনপি যতই দ্বিধাবিভক্ত অবস্থায় থাকুক না কেন আওয়ামী লীগের
পরেই তাদের ভোট ব্যাংক পড়েছে। এজন্য নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ তার প্রধান প্রতিপক্ষকে
আরো কোণঠাসা করতে চাইছে। দ্বিতীয়ত, সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি বেশ সরব হয়েছে, হুমকি-ধামকি
দিচ্ছে, আন্দোলন করার কথাও বলছে। মাঝখানে অনেকটাই গুটিয়ে থাকা বিএনপি নেতারা বিশেষ
করে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এখন প্রচুর কথা বলছেন এবং সরকার উৎখাতের লক্ষ্যে
আন্দোলনেরও ঘোষণা দিচ্ছেন। বিএনপি যেন এইসব ঘোষণাকে আন্দোলনে রূপ দিতে না পারে সেজন্য
আগে থেকেই আক্রমণাত্মক ভূমিকায় আছে আওয়ামী লীগ। তৃতীয়ত, বিএনপি এখন রাজনীতিতে একটা
মেরুকরণের চেষ্টা করছে যেখানে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে একটা আন্দোলনের পরিকল্পনা
করতে চেয়েছে। আর এছাড়াও সুশীল সমাজ বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে একটি মেরুকরণেরও প্রচেষ্টা
আছে বিএনপি`র মধ্যে। আর সেটি যেন বিএনপি না করতে পারে সেজন্য এখন থেকেই বিএনপির ব্যাপারে
সোচ্চার হচ্ছে আওয়ামী লীগ। তবে অনেকে মনে করছেন যে, রাজনীতিতে বিএনপি যতই ম্রিয়মাণ
হোক না কেন আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি। আর সে কারণেই বিএনপিকে আক্রমণই
আওয়ামী লীগের রাজনীতির মূল চালিকাশক্তি। সে কারণেই এখন বিএনপি আওয়ামী লীগের সমালোচনা
এবং আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু।