যে কোনো যুদ্ধে প্রথম মৃত্যুটি যার ঘটে সে কোনো মানুষ নয়, সে হচ্ছে ‘সত্য’— যুদ্ধ নিয়ে কথাটি বহুল ব্যবহৃত, কিন্তু সত্য। যুদ্ধ মানেই দুই পক্ষের চরম প্রোপাগান্ডা। তাই প্রোপাগান্ডার মধ্যে সত্য বের করা ভীষণ কঠিন। আর বর্তমানের তথ্য প্রযুক্তির যুগে তো এটা এখন আগের যেকোনো সময়ের চাইতে আরও অনেক বেশি জটিল। এই সমস্যা মাথায় রেখে, প্রাপ্ত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে দেখা যাচ্ছে, ভ্লাদিমির পুতিন কোণঠাসা হয়ে পড়ছেন ক্রমশ।
ইউক্রেন এখন দুই পক্ষের জিরো সাম গেম
গেম থিওরির খুব আলোচিত একটি অবস্থা হচ্ছে জিরো সাম গেম। এই পরিস্থিতিতে একপক্ষ যা অর্জন করে আরেক পক্ষ ঠিক ততটা হারায়। এতে এক পক্ষের অর্জন এবং আরেক পক্ষের হারানোর পরিমাণ যোগ করলে শূন্য হয় বলে এটাকে জিরো সাম গেম বলে। ইউক্রেন সংকটকে মোটা দাগে একটা জিরো সাম গেমে পরিণত করেছেন পুতিন। অর্থাৎ এই যুদ্ধে পুতিন যতটা জিতবেন ঠিক ততটা হারাবে পশ্চিমা দেশগুলো। বিষয়টি উল্টোদিকেও একই।
দেড় মাস আগের কথা। আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধানের লক্ষ্যে রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সার্গেই রিয়াবকভ জেনেভাতে আলোচনায় বসেছিলেন তাঁর মার্কিন প্রতিপক্ষের সাথে। সেই বৈঠকের পরে রিয়াবকভ যা বলেছিলেন তার হুবহু অনুবাদ এটা—‘আমাদের জন্য এটা একেবারেই অত্যাবশ্যক যে, ইউক্রেন কখনো, কোনো দিনও ন্যাটোর সদস্য হবে না। আমাদের লোহার প্রাচীরের মতো বুলেটরোধী, পানিরোধী আইনগতভাবে নিশ্চিত করা গ্যারান্টি লাগবে; কোনো নিশ্চয়তা কিংবা রক্ষাকবচ হলে চলবে না। সেই গ্যারান্টিতে শ্যাল, মাস্ট এর মতো সব শব্দ ব্যবহার করে নিশ্চিত করতে হবে ইউক্রেন কখনো, কোনো দিন, কোনোভাবেই ন্যাটো সদস্য হবে না।’
আপনি যখন এ রকম ভাষায় কোনো একটা কিছু চান তখন আপনার পক্ষে আসলে কোনো আলোচনা সম্ভব হয়ে ওঠে না। জেনেশুনেই তিনি ঠিক এই অবস্থানটিই নিয়েছিলেন। আলোচনা করে কোনো একটা মাঝামাঝি অবস্থানে তিনি পৌঁছতে চাননি। তিনি জুয়া খেলতে নেমে গেছেন এবং আশা করেছিলেন জুয়ায় তিনি জিতবেন। প্রশ্ন হচ্ছে পুতিন এমন ‘জুয়াড়ি’ হয়ে উঠলেন কেন?
- রাশিয়ার মিডিয়া প্রায় পুরোপুরি পুতিনের নিয়ন্ত্রণে। ইউক্রেনে অভিযান শুরুর পর নিজে দেশের মিডিয়াকে তাঁর মতো করে সংবাদ প্রকাশের চাপ দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। রাজনৈতিক তো বটেই জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদকেও কঠোর হাতে দমন করা হয়, যা ইউক্রেনে আগ্রাসন বিরোধী সমাবেশ থেকে গণগ্রেফতারের ঘটনায় আবার দেখা গেল। এক্ষেত্রে আমরা স্মরণ করব ভিয়েতনামে আমেরিকার বর্বর যুদ্ধটি বন্ধ হওয়ার পেছনে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল আমেরিকার জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ।
|
দ্য উইনার এফেক্ট
কোনো একটি প্রাণী যদি আক্রমণাত্মক/তীব্র প্রতিযোগিতামূলক কোনো খেলা/লড়াইয়ে একবার জিতে যায়, তবে সেটা তাকে পরবর্তীতে একই ধরনের বা তার চাইতে বেশি আক্রমণাত্মক লড়াই জেতার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। শুধু সম্ভাবনাই বাড়ে না, সেই প্রাণী আবার একই ধরনের খেলা বা লড়াইয়ে যেতে উদ্বুদ্ধও হয়। এ রকম ক্ষেত্রে হেরে যাওয়ার অভিজ্ঞতা দেয় ঠিক উল্টো ফল। এটাই দ্য উইনার, লুজার এফেক্ট।
বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে এর পেছনে রীতিমতো শারীরবৃত্তীয় কারণ আছে। আক্রমণাত্মক/তীব্র প্রতিযোগিতামূলক বিষয়ে জেতার ফলে অন্যান্য প্রাণী কিংবা মানুষের শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোনের নিঃসরণ বেড়ে যায়। এই হরমোন তাকে আরও বেশি আক্রমণাত্মক এবং ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রলুব্ধ করে।
ভ্লাদিমির পুতিন জর্জিয়াতে আক্রমণ করেছেন এবং কার্যত দখল করেছেন জর্জিয়ার অংশ দক্ষিণ ওসেটিয়া আর আবখাজিয়া। যে জর্জিয়ার ন্যাটো সদস্য হওয়ার ইচ্ছে নিয়ে এই দুর্যোগ, সেই যুদ্ধে জড়ানো দূরে থাকুক ন্যাটো জর্জিয়াকে অস্ত্র সাহায্যেও দেয়নি। এক তরফাভাবে জিতে যান পুতিন। এরপর ইউক্রেনের ক্রিমিয়া দখল করে নিলেন। ডনবাসের রুশ ভাষাভাষীদের উসকে দিয়ে যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়া, এমনকি সেখানে বেসামরিক পোশাকে রাশিয়ান সৈন্য ঢুকিয়ে দেওয়ার পরও তেমন কিছু হয়নি। এরপর তো অবিশ্বাস্যভাবে ইউরোপিয়ানরা (ফ্রান্স, জার্মানি) ইউক্রেনের জন্য চরম অবমাননাকর মিনস্ক চুক্তিতে মধ্যস্থতা করে।
একের পর এক আক্রমণাত্মক পরিস্থিতিতে পুতিনের জয় নিশ্চিতভাবেই তাঁর জন্য একটা উইনার এফেক্ট তৈরি করেছে। পূর্ণাঙ্গভাবে ইউক্রেন আক্রমণ করতে প্রলুব্ধ হয়েছেন তিনি। তিনি মানসিকভাবে বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন তিনি জিতবেন এবারও। উইনার এফেক্ট বলে যদি তিনি এতে জিতে যান, তাহলে তাঁর আরও এগিয়ে যেতে চাওয়াই স্বাভাবিক।
সম্ভবত পুতিনের পরবর্তী লক্ষ্য হবে ন্যাটো এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য বাল্টিক প্রজাতন্ত্রগুলো (লিথুয়ানিয়া, এস্তোনিয়া, লাটভিয়া)। আমাদের দেশের অনেককেই দেখছি ইউক্রেনের ন্যাটোর সদস্য হওয়ার বিরুদ্ধে যুক্তি দিচ্ছেন এটা বলে যে রাশিয়া কেন তার সীমান্তের একটি ন্যাটো সদস্য রাষ্ট্রকে মেনে নেবে। তাঁদের কাছে নিশ্চয়ই এটাও যুক্তি হবে এর মধ্যেই রাশিয়ার সীমান্তের বাল্টিক তিন দেশ যেহেতু ন্যাটোর সদস্য হয়েই আছে তাই সেগুলোতে আক্রমণ করার ‘ন্যায্য’ অধিকার আছে পুতিনের।
ইউক্রেনকে কবজায় আনার কৌশল
প্রচণ্ড পশ্চিমা চাপের মুখেও ইউক্রেনকে আক্রমণ করে ফেলা পুতিনের এক ধরনের প্রাথমিক বিজয় তো বটেই। পুতিন ভেবেছিলেন, ইউক্রেন আক্রমণ করে কয়েক দিনের মধ্যে কিয়েভসহ পুরো দেশে সর্বময় কর্তৃত্ব নিশ্চিত করে একটি পুতুল সরকার বসাবেন। সেই সরকারকে দিয়ে ইউক্রেনকে রাশিয়ার অর্থনৈতিক জোট ইউরেশিয়ান ইকোনমিক ইউনিয়ন (ইএইইউ) এবং সামরিক জোট কালেকটিভ সিকিউরিটি ট্রিটি অর্গানাইজেশনেরও (সিএসটিও) সদস্য বানিয়ে পরিস্থিতি শান্ত হলে রাশিয়ান বাহিনীর মূল অংশ ফিরে যাবে দেশে।
সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ইউক্রেনে সরকার হলেও তার বিরুদ্ধে যদি জনগণ রাস্তায় নামে, যেমন নেমেছিল সাবেক রুশপন্থী প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচের বিরুদ্ধে, তাহলে সৈন্য পাঠিয়ে তাদের দমন করা তো যাবে, এমন পরিকল্পনা থাকার যৌক্তিক কারণ রয়েছে পুতিনের। আগের বার সৈন্য পাঠাতে পারেননি কারণ ইউক্রেন তখন সিএসটিও সদস্য ছিল না। এই তো কিছুদিন আগেই সিএসটিও সদস্য কাজাখস্তানে জনগণ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন নেমেছিল। তখন রাশিয়ার সৈন্য কাজাখস্তান ঢুকে কমপক্ষে ১৬০ জন কাজাখকে হত্যা এবং কয়েক হাজারকে আহত এবং বন্দী করার মাধ্যমে ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট তোকায়েভের ক্ষমতা সুসংহত করে এসেছে।
অঙ্কটা সহজে মিলছে না এটা এখন প্রায় নিশ্চিত
বাস্তবে পুতিন মোটেও স্বস্তিদায়ক অবস্থায় নেই। যুদ্ধের প্রাথমিক ধাক্কা কাটার পর এখন স্পষ্টতই মনে হচ্ছে ইউক্রেনে একটা দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ হবে। আর কে না জানে দীর্ঘস্থায়ী শহুরে যুদ্ধে (আরবান ওয়ারফেয়ার) শক্তির পাল্লাটা দুর্বলের দিকে অনেকটা ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থায় আসে। এর সাথে ভয়ঙ্কর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হয়েছে রাশিয়া যার মধ্যে সুইফট থেকে বেশ কিছু ব্যাংককে বের করার (যা অর্থনৈতিক পারমাণবিক বোমা বলে পরিচিত) পদক্ষেপও আছে। এর ফল ফলতে শুরু করেছে।
রুবলের চরম দরপতন হয়েছে; আতঙ্কিত মানুষ ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নেওয়ার জন্য দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াচ্ছে। ভয়ঙ্কর পতনের আশঙ্কায় স্টক মার্কেট বন্ধ রাখা হয়েছে। চরম অর্থনৈতিক চাপের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের ব্যয় যুক্ত হলে সেটা পরিস্থিতিকে বীভৎস করে দেবে। সাথে গেরিলা যুদ্ধে অসংখ্য সৈন্যের মৃত্যু পুতিনকে চরম চাপের সম্মুখীন করবে নিশ্চিত।
ইউক্রেনকে পূর্ণাঙ্গভাবে আক্রমণ করে সেখান থেকে পরাজিত হয়ে ফিরে আসার মতো তৈরি হয়েছে এই মুহূর্তে। প্রচণ্ড চাপে আছেন পুতিন, কিন্তু তাঁর মতো মানুষ পিছিয়ে যেতে পছন্দ করেন না একেবারেই। আমি বিশ্বাস করি এই চাপটিই একটি ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।
পুতিনের ব্যক্তিকেন্দ্রিক একনায়কতন্ত্র
বিশ্বখ্যাত ম্যাগাজিন ফোর্বস ২০০৯ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বিশ্বের ক্ষমতাবান মানুষদের তালিকা করেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বার, পরপর চার বার (২০১৩-২০১৬) এক নম্বর প্রভাবশালী ব্যক্তি ছিলেন পুতিন। অর্থনৈতিক এবং সামরিক সক্ষমতাকে এক সাথে বিবেচনা করলে নিশ্চিতভাবেই রাশিয়া পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ নয়ই, তার অবস্থান হবে বেশ নিচে। কিন্তু ফোর্বস ম্যাগাজিনের বিবেচনায় বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী মানুষ হিসাবে তাঁর এত বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠার কারণ আসলে পুতিন সেই রাষ্ট্রের একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী।
একনায়কতন্ত্রের নানা রূপ আছে। এটা হতে পারে একটি পার্টির, একটি পরিবারের কিংবা একজন ব্যক্তির। পরিবার কিংবা পার্টির একনায়কতন্ত্রের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অন্তত কয়েক জন ব্যক্তির গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব থাকে। ব্যক্তিকেন্দ্রিক একনায়কতন্ত্রে সেটা থাকে না। সেই কারণেই একনায়কতন্ত্রের আলোচনায় ব্যক্তিকেন্দ্রিক একনায়কতন্ত্রকে সবচেয়ে খারাপ এবং ঝুঁকিপূর্ণ বলে মানা হয়।
পুতিন একজন ব্যক্তিকেন্দ্রিক এক নায়ক। তাঁর দেশে দ্বিতীয় কোনো মানুষ নেই যিনি তাঁর সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করার জন্য শক্তিশালী চাপ দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন। দোনেস্ক এবং লুহানস্ককে স্বাধীন হিসাবে ঘোষণা করার আগে পুতিন তাঁর নিরাপত্তা কাউন্সিলের যে সভাটি করেছিলেন, সেটা টিভিতে প্রচারিত হয়েছিল। ভিডিওটি ইউটিউবে পাওয়া যায়; দেখলেই বোঝা যাবে তাঁর সামনে অন্য অতি উচ্চপদস্থরা কেমন কাঁচুমাচু আচরণ করেন।
রাশিয়ার মিডিয়া প্রায় পুরোপুরি পুতিনের নিয়ন্ত্রণে। ইউক্রেনে অভিযান শুরুর পর নিজে দেশের মিডিয়াকে তাঁর মতো করে সংবাদ প্রকাশের চাপ দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। রাজনৈতিক তো বটেই জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদকেও কঠোর হাতে দমন করা হয়, যা ইউক্রেনে আগ্রাসন বিরোধী সমাবেশ থেকে গণগ্রেফতারের ঘটনায় আবার দেখা গেল। এক্ষেত্রে আমরা স্মরণ করব ভিয়েতনামে আমেরিকার বর্বর যুদ্ধটি বন্ধ হওয়ার পেছনে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল আমেরিকার জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ।
রাশিয়ায় এমন পরিস্থিতি নিশ্চিত করার মাধ্যমেই পুতিন হয়ে উঠেন পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাশালী এবং প্রভাবশালী মানুষ। তিনি করতে পারেন যা খুশি তা। ঠিক এখানেই মূল ভীতির জায়গা।
পুতিন তাঁর ‘ঠ্যাক’ চালিয়েই যাবেন সম্ভবত
চীন তাইওয়ান আক্রমণ করলে আমেরিকা যুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করবে, নাকি করবে না— তা নিয়ে আমেরিকার একটা কৌশলগত অস্পষ্টতা (স্ট্র্যাটেজিক অ্যামবিগিউটি) আছে। কিন্তু ইউক্রেন সংকটের ক্ষেত্রে এটা রাখা হয়নি। পুতিনের সঙ্গে পশ্চিমারা সরাসরি কোনো সংঘাতে যাওয়া মানেই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়া, যা আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন স্পষ্টভাবেই বলেছেন। আমি বিশ্বাস করি এটাই হয়ে দাঁড়িয়েছে পুতিনের ‘ঠ্যাক’। এখন তিনি ভাবতেই পারেন, আরও সব চরম পদক্ষেপ নিলেও পশ্চিমা দেশগুলো তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যাবার ভয়ে, পাল্টা সামরিক ব্যবস্থার দিকে যেতে বহুবার ভাববে। পশ্চিমা দেশগুলোতে রাষ্ট্রের নানা শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান আছে, স্বাধীন মিডিয়া আছে, জনগণের চাপ আছে—মুহূর্তে যাচ্ছেতাই করে ফেলা খুব কঠিন।
২০১৮ সালে এক তথ্যচিত্রে ভ্লাদিমির পুতিনকে বলতে শোনা যায়; ‘যদি কেউ রাশিয়াকে ধ্বংস করতে চায়, তাহলে সেটার প্রতিক্রিয়া দেখানোর আইনগত অধিকার আছে আমাদের। সেটা অবশ্যই মানবজাতি এবং পুরো পৃথিবীর জন্য এক চরমতম বিপর্যয় হবে। রাশিয়া থাকবে না, এমন একটা পৃথিবীর কি আদৌ কোনো দরকার আছে?’
আমার আগের লেখাটিতেই বলেছিলাম, রাশিয়ায় আধুনিক রাষ্ট্র বলে কিছু নেই। সেখানকার ভ্লাদিমির পুতিন ফরাসি সম্রাট চতুর্দশ লুইর নামে প্রচলিত বক্তব্যটি বলতে পারেন একেবারেই নির্দ্বিধায় - ‘আমিই রাষ্ট্র’। তাই তাঁর বক্তব্যে তিনি যেখানে রাশিয়া বলেছেন সেখানে আমি আসলে ‘পুতিন/আমি’ পড়ছি।
পতনের পরিস্থিতি তৈরি হলে কোণঠাসা পুতিন যুদ্ধটাকে বিপজ্জনক দিকে নিয়ে যেতে চাইতে পারেন। হোক সেটা অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে দেয়া, কিংবা সম্ভাবনা খুব কম থাকলেও পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করা। পুতিনরা খুবই আত্মপ্রেমিক (নার্সিসিস্ট) হন। তাই রাশিয়া গোল্লায় যাক, পুতিন তাঁর নিজের ধ্বংস/পতনের মুখে দাঁড়িয়ে ভাবতেই পারেন—পুতিন থাকবে না, এমন একটা পৃথিবীর কি আদৌ কোনো প্রয়োজন আছে?
জাহেদ উর রহমান ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের শিক্ষক
সুত্র: প্রথমআলো