ফ্রিডমবাংলানিউজ ডেস্ক | আপডেট: মঙ্গলবার, আগস্ট ২৪, ২০২১
গত
কয়েক দিন ধরে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বেশ জোরেশোরেই সরকারের সমালোচনা
করেছেন। তিনি বলেছেন যে, গণঅভ্যুত্থান ছাড়া সরকারের পতন সম্ভব নয়। গণঅভ্যুত্থানের
মাধ্যমে সরকারকে হটানো হবে।
যদিও
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এই বক্তব্যকে হাস্যকর বলে মন্তব্য করেছেন।
তিনি বলেছেন যে দল তাদের নেত্রীর মুক্তির জন্য একদিন মিছিল করতে পারে না তারা গণঅভ্যুত্থান
করবে, এটি অলীক কল্পনা ছাড়া আর কিছু নয়। কিন্তু ওবায়দুল কাদের যেটি বলুন না কেন
সরকারের কাছে এরকম সুস্পষ্ট কিছু খবর আছে যে, বিএনপি নতুন করে আন্দোলন করার চেষ্টা
করছে এবং আন্দোলনের ছক কষছে। আর এই ছক কষার কারণেই বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম
আলমগীর উত্তপ্ত শব্দবান ছড়াচ্ছেন। সরকারের কাছে এরকম একাধিক তথ্য আছে যে, বিএনপি ঢাকা
মহানগরের কমিটি গঠন এবং বিভিন্ন জেলায় কমিটি গঠন, বিএনপি-জামাতপন্থি সুশীলদেরকে সংঘবদ্ধ
করা ইত্যাদি নানাভাবে সরকারবিরোধী আন্দোলনের একটা পটভূমি তৈরি করতে চাইছে। আর এ কারণেই
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আবার বিএনপির সমালোচনায় মুখর হয়েছে।
পুরো
শোকের মাসে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাদের প্রধান টার্গেট ছিলো বিএনপি। বিএনপির
কিভাবে আন্দোলন করতে পারে এ সম্পর্কে বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। বিএনপির
নেতারা আন্দোলনের ছক সম্পর্কে পাঁচটি তথ্য পাঁচটি তথ্য দিয়েছেন:
১. তারা মনে করছেন আন্দোলনের
পরিবেশ: বিএনপি মনে
করছে যে, আন্দোলন একটি পরিবেশ আছে। নানা কারণেই জনগণ সরকারের উপর সন্তুষ্ট নয়। বিশেষ
করে করোনা মোকাবেলায় গণটিকা কর্মসূচিতে ব্যর্থতা, লকডাউন নিয়ে একের পর এক স্ববিরোধী
অবস্থান ইত্যাদির কারণে জনগণের মধ্যে সরকারের ব্যাপারে একটি নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে।
যে নেতিবাচক ধারণাটি আন্দোলনের পক্ষে কাজে লাগানো সম্ভব হবে।
২. সরকারের ভেতরে অস্বস্তি: সরকারের ভেতরে অস্বস্তি অবস্থা চলছে।
যারা আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ তারা এখন সাইডলাইনে বসে আছেন। তাদের মধ্যে এক
ধরনের হতাশা তৈরি হয়েছে। যারা রাজপথে আন্দোলন করে তারা এখন ক্ষমতায় নেই। আর যারা ক্ষমতায়
আছে তারা মূলত ব্যবসায়ী বা আমলা। কাজেই একটি আন্দোলন করলে আওয়ামী লীগের পাল্টা ব্যবস্থা
নেয়ার সংখ্যা সক্ষমতা অনেক কমে গেছে বলেও তারা মনে করছেন।
৩. বিএনপির দেয়ালে পিঠ
ঠেকে যাওয়া: বিএনপির
মধ্যে একটি বোধধয় ঘটেছে যে তাদের টিকে থাকার একটি উপায়, তাহলো আন্দোলন করা। যদি তারা
ধাপে ধাপে আন্দোলন না করতে পারে তাহলে তাদের অস্তিত্বের সংকট বাড়বে।
৪. নির্বাচন: সরকারের অর্ধেক মেয়াদ পার হয়ে গেছে।
বিএনপি মনে করছে যে, সংগঠন যদি এখন থেকে গোছানো না যায় তাহলে আগামী নির্বাচনেও তাদের
ভয়াবহ ভরাডুবি ঘটবে। আর সে কারণেই বিএনপি এখন থেকেই যদি ধাপে ধাপে আন্দোলন করা যায়
তাহলে নির্বাচনের আগে সরকারের সঙ্গে একটি দরকষাকষির অবস্থানে তারা যেতে পারবে বলে মনে
করছে। আর সেই বাস্তবতা থেকেই তারা এখন থেকে আন্দোলন করার পরিকল্পনা করছে।
৫. সুশীল সমাজের চাপ: আওয়ামী বিরোধী সুশীলরা আবার ঐক্যবদ্ধ
হয়েছে। তারা বিএনপিকে সামনে রেখে একটা পরিস্থিতি তৈরি করতে চাইছে। কারণ রাজনৈতিক সংঘাত,
সহিংসতা না হলে সুশীলরা জায়গা পায়না। যেমন- ওয়ান-ইলেভেনের আগে আওয়ামী লীগ-বিএনপির
তীব্র বিরোধ সুশীলদেরকে পাদপ্রদীপে এনেছিল, সেরকম একটি পরিস্থিতি সুশীলরা সৃষ্টি করতে
চায়। সেইজন্য আওয়ামী লীগকে আন্দোলন করার জন্য উস্কে দিতে চাইছে সুশীল সমাজ।
আর
এ সমস্ত কারণে বিএনপি এখন ধাপে ধাপে আন্দোলনের ছক কষছে। তবে আন্দোলন কিভাবে হবে, কবে
আন্দোলন হবে সে সম্পর্কে বিএনপি এখন পর্যন্ত কোনো সুনির্দিষ্ট রূপরেখা তৈরি করতে পারেননি
বলেই জানা গেছে।