ফ্রিডম বাংলা নিউজ

বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১, ২০২৪ |

EN

আজ ২১ আগস্ট: রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কলঙ্কিত দিন

ফ্রিডমবাংলানিউজ ডেস্ক | আপডেট: শনিবার, আগস্ট ২১, ২০২১

আজ ২১ আগস্ট: রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কলঙ্কিত দিন

আজ কলঙ্কিত-বিভীষিকাময় ২১ আগস্ট। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার হত্যাযজ্ঞের ১৭তম বার্ষিকী। ২০০৪ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ আয়োজিত ‘সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতিবিরোধী’ শান্তির শোভাযাত্রাপূর্ব সমাবেশে দলের সভাপতি শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে নারকীয় গ্রেনেড হামলা এবং গুলিবর্ষণ করে ঘাতকরা। এই নারকীয় গ্রেনেড হামলায় ঝরে যায় ২৪টি তাজা প্রাণ। এই বিভীষিকাময় গ্রেনেড হামলায় আহত হন দলীয় ৫ শতাধিক নেতা-কর্মী। বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের আমলে এ নারকীয় হত্যাকাণ্ড চালানো হয়।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বিকাল পাঁচটার কিছু পর। হঠাৎ দফায় দফায় বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে ওঠে ঢাকার প্রাণকেন্দ্র বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ। হামলার লক্ষ্য ছিল ওই এলাকায় থাকা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের সামনে চলা একটি সমাবেশ। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আয়োজিত সেই সমাবেশ বিকাল ৪টা থেকেই আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী এবং সাধারণ মানুষে কানায় কানায় ভরে ওঠে। স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে বঙ্গবন্ধু এভিনিউসহ আশপাশ এলাকা। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে একটি খোলা ট্রাকে (ঢাকা মেট্টো-ট-১১-৩০৯৮) বানানো উন্মুক্ত মঞ্চে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা। বিকাল ৫টার দিকে বুলেটপ্রুফ গাড়িতে সমাবেশ স্থলে পৌঁছান তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। ট্রাকে তাঁর সঙ্গে প্রয়াত জিল্লুর রহমান, প্রয়াত আবদুর রাজ্জাক, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, প্রয়াত আবদুল জলিল, প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কাজী জাফরউল্লাহ, প্রয়াত মোহাম্মদ হানিফ ও মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াসহ আরও কয়েকজন কেন্দ্রীয় ও মহানগরী নেতা-নেত্রী ছিলেন।

প্রায় ২০ মিনিট বক্তৃতা দেন শেখ হাসিনা। সময় তখন বিকাল ৫টা ২২। ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ বলে বক্তৃতা শেষ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা তাঁর হাতে থাকা একটি কাগজ ভাঁজ করতে করতে এগোতে থাকলেন ট্রাক থেকে নামার সিঁড়ির কাছে। কয়েকজন ফটোসাংবাদিক বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে একটু দাঁড়াতে বললেন ছবি তোলার জন্য। মুহূর্তেই শুরু হলো নারকীয় গ্রেনেড হামলা। ওই ট্রাকে ঘাতকদের নিক্ষিপ্ত গ্রেনেড বিস্ফোরিত হলে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের কোনো সিনিয়র নেতাই প্রাণে রক্ষা পেতেন না সেদিন। আর এটাই ছিলো ঘাতক চক্রের মূল পরিকল্পনা। হঠাৎ সমাবেশ স্থলের দক্ষিণ দিক থেকে মঞ্চ লক্ষ্য করে ছোড়া হয় গ্রেনেড। সেদিন শেখ হাসিনার বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে আকস্মিক এসব গ্রেনেড নিক্ষেপ ও বিস্ফোরণে ঘটনাস্থলে এক হৃদয়বিদারক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। জীবন্ত বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রাঙ্গণ সেদিন মুহূর্তেই পরিণত হয়েছিল এক মৃত্যুপুরীতে। চারিপাশে শুধু আহাজারি আর কেবলই আর্তনাদ। রক্তাক্ত মানুষের আহাজারিতে বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। সে সময় দলীয় নেতারা তাৎক্ষণিকভাবে এক মানববলয় তৈরি করে নিজেরা আঘাত সয়েও শেখ হাসিনাকে গ্রেনেডের হাত থেকে রক্ষা করেন। হামলায় অল্পের জন্য শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও গ্রেনেডের প্রচণ্ড শব্দে তার শ্রবণশক্তির গুরুতর ক্ষতি হয়।

এভাবে প্রকাশ্য দিবালোকে রাজনৈতিক সমাবেশে এ ধরনের নারকীয় হত্যাযজ্ঞ পৃথিবীর ইতিহাসে দ্বিতীয়টি খুঁজে পাওয়া যাবে না। রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় একটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলার ভয়াবহ সেই ঘটনা বাঙালি জাতি কোনোদিন ভুলবে না।