মিছিল যাচ্ছে। মমতাজ আপা সামনের সারিতে, এই কাবেরী আসো,আহা আসো না। রোকেয়া হলের সামনে দাড়িঁয়ে থাকা কাবেরী মমতাজ আপার ডাক এড়াতে পারলো না। মিছিলে ঢুকে পড়লো। ছাত্রীদের মিছিল,জোর পায়ে এগিয়ে চলছে। অনেক শ্লোগান, তবে একটি শ্লোগান কাবেরীর ভেতরটা নাড়া দিলো‘বীর বাঙ্গালী অস্ত্র ধরো,বাংলাদেশ স্বাধীন করো।’গলার সবখানি জোর খাটিয়ে কাবেরী এ শ্লোগানের জবাব দিতে থাকলো। এটাই তার প্রথম মিছিলে যাওয়া। সেই কুমিল্লা থাকতে মমতাজ আপার সঙ্গে পরিচয় হলেও কাবেরী কখনো মিছিলে যায়নি,কোন রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়নি। বাড়ির নিষেধ আছে। বাবা সরকারী চাকুরীজীবি,তাও আবার পুলিশ বিভাগে। মা বলে দিয়েছেন দ্যাখো,আমরা হিন্দু,পদে পদে আমাদের দোষ। তুমি রাজনীতিতে জড়ালে তার খেসারত দিতে হবে তোমার বাবাকে। একদিন খাবার টেবিলে মমতাজ আপার গল্প করেছিলো কাবেরী। সে দিন মা অনুমান করেছিলেন, মেয়ে হয়তো রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়তে পারে,তাও আবার শেখ মুজিবের রাজনীতি। সর্বনাশ। সে রাতেই কাবেরীকে সাবধান করেছিলেন তার মা সুমতি মিত্র। বাবা অবশ্য কিছু বলেননি। বরং বাবা মাঝে মাঝে কাবেরীর কাছ থেকে রাজনীতির কথা শুনতেন, মমতাজ আপার দল কতটা শক্তিশালী হচ্ছে সে খবর নিতেন।
মিছিল যাবে সচিবালয়ে। টিএসসিতে এসে ছাত্রদের বিশাল মিছিলের সাথে মিশে গেল কাবেরীদের মিছিল। তবে বেশীদূর এগুতে পারলো না তারা,কার্জন হলের সামনে থাকা পুলিশ বাধা দিলো মিছিলে। শুরু হলো সংঘর্ষ। ছাত্র-ছাত্রীরা মিলে ঢিল ছুড়ছে পুলিশের দিকে। পুলিশ কাদুনে গ্যাস ছুড়ছে। আবার ঢিলও ছুড়ছে। কেউ পিছু হটছে না,না মিছিলের লোকেরা,না পুলিশ। বেদম লাটিপিটা চলছে। নির্বিচারে ছাত্রদের পেটাচ্ছে পুলিশ। উর্দুতে কি যেন বলছে পুলিশ । কাবেরী তার বিন্দু-বিসর্গ বুঝতে পারলো না। পায়ের কাছে একটা ইটের টুকরা পেয়ে সেটা ছুড়ে মারলো পুলিশের দিকে। ঢিল ছোড়ার কোন অভ্যাস নেই,একেবারে কাছেই পড়লো ঢিলটা। আকেরটি ইটের টুকরা হাতে নিলো। একটু দূরে সারিবদ্ধ পুলিশের হাতে তাক করা রাইফেল। বেশ ভয়ে পেয়ে গেল কাবেরী,তা হলে কি ওরা গুলি করবে? ইটের টুকরাটা হাত থেকে ছেড়ে দিলো। সামনে পুলিশের দিকে তাকিয়ে আছে সে,ঠিক করতে পারছে না,পেছনে চলে যাবে,নাকি থাকবে? মমতাজ আপাকেও খুজেঁ পাচ্ছে না। ভাবলো মমতাজ আপাকে রেখে চলে যাওয়াটা ঠিক হবে না। পরে দেখা হলে কি জবাব দেবেন আপাকে। হঠাৎ কাবেরীর চোখ পড়লো একটি ছেলের দিকে। পুলিশ তাকে বেধড়ক পেটাচ্ছে। মাথা ফেটে রক্ত ঝরছে। ওর ভেতরটা হাহাকার করে উঠলো। এভাবে পেটালো তো ছেলেটা মারা যাবে। সাহস করে এগিয়ে গেল সে,যে ভাবেই হোক ওকে পুলিশের পেটানো থেকে বাচিঁয়ে আনতে হবে। তাতে যদি নিজেরও লাঠিপেটা খেতে হয়,খাবে। জিদ ধরে গেল ওর মনে। কাবেরী নিজেকে প্রশ্ন করলো ,আজ যদি ওর আপন কাউকে পুলিশ পেটাতো? আমি কি দাড়িঁয়ে দাড়িঁয়ে দেখতাম? জবাব পেলো না,আমি এগিয়ে যেতাম। বিপদ জেনেও এগিয়ে যেতাম। সামনে দু’তিন কদম এগুতেই রক্তঝরা কাপালটা চেপে ধরে দৌড়ে আসলো সে যুবক। চিকৎকার করে উঠলো কাবেরী,অরিত্র তুমি? দ্রুত শাড়ির আচঁল ছিড়ে অরিত্রর মাথার ক্ষতস্থান বেধে দিলো। আরো দু’জন ছাত্রের সহাতায় কিছু দূর এসে একটি রিক্সায় অরিত্রকে নিয়ে গেল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। রক্ত বন্ধ হচ্ছে না। কাবেরী ক্ষতস্থান হাত দিয়ে চেপে ধরে রক্ত বন্ধ করার চেষ্টা করছে। পারছে না। ওর শরীরটাও ভিজে যাচ্ছে রক্তে।
রিক্সাওয়ালা এবং কাবেরী মিলে ওকে নিয়ে গেল ইমার্জেন্সীতে। কাবেরাী পার্স থেকে রিক্সাওয়ালাকে ভাড়া দেওয়ার জন্য টাকা বের করছে। রিক্সাওয়ালা হাত জোড় করে বললো,আপা টাকাটা আপনি ভায়ের ওষুধ কেনার জন্য ব্যয় করুন। আপনারা দেশের জন্য কাজ করছেন,আমাদেরকে জালেমদের হাত থেকে বাচাঁনোর জন্য আন্দোলন করছেন। আমি না হয় একটু গায়ে খেটে দিলাম। পুলিশের লাঠি পেটায় অরিত্রর মাথা ফেটে গেছে। ক্ষতটা বেশ। আটটি সেলাই করতে হলো। অনেক রক্তক্ষরন হয়েছে। ইমার্জেন্সী থেকে,তাকে কেবিনে দিলেন ডাক্তার। মিছিল শুরু হওয়ার আগে মধুর কেন্টিনের সামনে একই সঙ্গে ছিলো অরিত্র ও কাবেরী। দু’জন বন্ধু। একই ক্লাসের ছাত্র। অরিত্র মিছিলে যাবে,তা জানে কাবেরী। অরিত্র জামান ছাত্রলীগের কর্মী। শেখ মুজিবের ভক্ত। কাবেরীকে সে বলেছে, আমাদের একটি স্বাধীন দেশ হবে,সে দেশের নাম হবে বাংলাদেশ। একমাত্র মুজিব ভাই পারবেন দেশটা স্বাধীন করতে। গোপনে স্বাধীন দেশ প্রতিষ্ঠার কাজ চলছে। তবে কাবেরীকে সে কখনো ছাত্রলীগের কর্মী হতে বলেনি,মিছিলে যেতেও বলেনি। অরিত্রকে ঘুমের ওষুধ দেওয়া হয়েছে। কেবিনে সে ঘুমিয়ে আছে। কাবেরীর শাড়ীর অনেকটা অংশ রক্তে ভেজা। সে অবস্থায় বসে রইলো অরিত্রর পাশে। কাবেরী যখন অরিত্রকে রিক্সায় করে হাসপাতালে নিয়ে আসে,অরিত্র শুধু জিজ্ঞেস করেছিলো, কাবেরী তুমি এখানে কখন এলে,কি ভাবে এলে। কাবেরী কোন জবাব দেয়নি। তার চোখে তখোন জল,শব্দহীন কান্না তার ভেতরে। তবে অরিত্রর জন্য কাদঁছে, এটা প্রকাশ করতে চায়নি।
পায়ে বেশ চোট পেয়েছেন মমতাজ আপা। স্বাভাবিক হাটতে পারছেন না। মিছিলের সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে চলে আসলেও মমতাজ আপা খুজঁছেন,কাবেরীকে। তার ভেতরে একটা অপরাধেবোধ,মেয়েটাকে মিছিলে ডেকে আনলাম,ও কোথায় গেল। মমতাজ আপা খবর পেলেন, ছাত্রলীগের কর্মী অরিত্র জামান মারÍক আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি। তার অবস্থা ভালো নয়। তবুও মমতাজ আপা রিক্সা নিয়ে আগে রোকেয়া হলে গেলেন। কাবেরীর খবর নিতে। না,কাবেরী হলে ফিরেনি। ভাবলেন তা হলে ঢাকা মেডিকেলে গিয়ে দেখি। রিক্সা নিয়ে যেতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একটু আগে পথে দেখা ছাত্রলীগের কেন্ত্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি নরুল ইসলাম ঠান্ডুর সাথে।ঠান্ডুকে রিক্সায় তুলে নিলেন মমতাজ আপা। হাসপাতালের ইমার্জেন্সীতে তখনো অনেক আহত ছাত্র-ছাত্রী। বেশীর ভাগ আহত হয়েছেন পুলিশের ছোড়া টিয়ার সেলে এবং লাঠিপেটায়। পা টেনে টেনে হেটে মমতাজ আপা সবাইকে শান্তনা দিয়ে,কেবিনে গেলেন। কেবিনে আহত ছাত্রলীগ কর্মী অরিত্র জামানের পাশে বসা কাবেরী।রক্তের দাগ তার কাপড়ে। মমতাজ আপাকে জড়িয়ে ধরে কেদেঁ উঠলো কাবেরী। মমতাজ আপা জানতে চাইলেন তোমার কোথায় আঘাত লেগেছে। কাবেরী জবাব দিলো, না,আপা আমার লাগেনি। ওর অবস্থা ভালো না,অনেক রক্ত ক্ষরন হয়েআঘাতটাও বড়। আটটা সেলাই লেগেছে। ওকে তুমি চিনো কাবেরী? মাথা নীচু করে খানিকটা লজ্জাবনত হয়ে জবাব দিলো ও আমার দীর্ঘদিনের বন্ধু। একজন ছাত্রলীগ কর্মীকে অরিত্রর কাছে রেখে কাবেরীকে নিয়ে হলে ফিরলেন মমতাজ আপা। বললেন, চলো, পোষাক পাল্টে আবার এসো। নুরুল ইসলামও রয়ে গেলেন অরিত্রর কাছে।
হলে ফিরে রক্তমাখা শাড়ি পাল্টে নিলো কাবেরী মিত্র। রুমমেটরা বললো,শাড়িটা ধুয়ে দাও। কিন্ত কেন যেন শাটি ধুয়ে দিতে তার মনে শায় দিলো না। অরিত্র তার বন্ধু,শুধুই বন্ধু। তার প্রতি অন্যকোন টান কখনো সে অনুভব করেনি। সেখানে প্রেমট্রেম জাতীয় কিছু নেই। অরিত্রও কাবেরীকে কখনো তেমন ইশারা-ঈঙ্গিত করেনি,কাবেরীও না। আজ কেনো যেন অরিত্রর প্রতি একটা আলাদা টান অনুভব করছে সে। সে টান অরিত্রর প্রতি না কি অরিত্র দেশপ্রেমের প্রতি সেটা ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না। তবে বিষয়টি তাকে ভাবিয়ে তুলেছে। শেষ পর্যন্ত আচলঁ ছেড়া শাড়িটা না ধুয়েই গুছিয়ে ভাজ করে রেখে দিলো সে। ভাবলো ওই শাড়িটায় অরিত্রর রক্ত। এ রক্ত তো জলদিয়ে ধুয়ে ফেলা যায় না। শাড়িটাকে সে রক্তের বাধনই মনে করে রেখে দিলো।
হলের ক্যান্টিনে খাবার সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। রুম মেটরা বললো,চলো খেতে যাই। পরে যাবো বলে এড়িয়ে গেল সে। খেতে ইচ্ছে করছে না। তার মনে পড়লো, মিছিলে যাবার আগে অরিত্র বলেছিলো,খিদে পেয়েছে রে,সকালে নাস্তা করা হয়নি। কাবেরী বলেছিলো,তা হলে খেয়ে যাও। মিছিল শুরু হয়ে যাওয়ায় দৌড়ে চলে গেল মিছিলে। কাবেরী না খেয়েই বিছানায় গা টা এলিয়ে দিলো। জীবনের প্রথম মিছিলে যাওয়া, নতুন অভিজ্ঞতা। পুরো শরীরটা ব্যাথা হয়ে আছে। স্বাভাবিক সময়ে এটা কাবেরীর ঘুমের সময়। আজ মিছিলে গিয়ে শরীর ব্যাথা,পায়ে ফুসকা পড়ে গেছে। এখন তোর গভীর ঘুম আসার কথা। না,কিছুতেই ঘুম আসলো না। কাবেরীর চোখে ভাসছে অরিত্রর রক্তমাখা কাপাল,এখনো যেন শরীর বেয়ে রক্ত পড়ছে। মৃদু স্বরে অরিত্র বলছে,কাবেরী খুব ব্যাথা,অনেক চোট লেগেছে। কাবেরীর সব রাগ গিয়ে জমা হলো আইয়ুব খানের ওপর। কেন আইয়ুব খান আমাদের ওপর এমন জুলুম করছে। কি অন্যায় করেছে বাঙ্গালীরা। শেখ মুজিব ৬ দফা দিয়েছে,এটা কি অন্যায়? তার জন্য তাকে কারাগারে নেওয়া হয়েছে। ছাত্ররা তার মুক্তির দাবীতে মিছিল করেছে,যে কোন লোককে অন্যায় ভাবে গ্রেপ্তার করা হলে তারঁ ভক্ত অনুসারীরা মিছিল করতেই পারে। তার জন্য এমন নির্দয়ভাবে ছাত্রদের মারধর করতে হবে? এমন বর্বরতা মেনে নেওয়া অন্যায়। অরিত্র অন্যায়ের রিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে আহত হয়েছে। সে তো সাহসী মানুষ। অন্যায়ের প্রতিবাদকারী সাহসী লোকদের খুব পছন্দ কাবেরীর। অরিত্র শরীর থেকে ঝরা রক্ত যেন উতাল করে দিলো কাবেরীর রক্তকে। না,আইয়ূব শাহীর এমন অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাড়াঁতেই হবে। প্রতিবাদ করতেই কবে। বিছানা থেকে দ্রুত উঠে দাড়াঁলো কাবেরী। মাথার এলো-মেলো চলগুলোতে চিরুনীর একটা আচঁড় দিয়ে বেরিয়ে পড়লো,ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উদ্দেশ্যে। হয় তো এত সময়ে অরিত্রর ঘুম ভেঙ্গেছে। হয় তো ঘুম ভাঙ্গার পর,তাকে খুজঁছে। ঢাকা শহরে তো ওর আপন কেউ নেই। বাবা,মা ভাইবোন থাকে গ্রামে। এখানে আমি ছাড়া কে ওরা নেবে? রিক্সায় যেতে যেতে এমন নানা কথা চিন্তা করছে কাবেরী।
শহীদ মিনারের কাছে দেখতে পেলো একটা জটলা। কিছু মানুষ একজনকে কেন্দ্র করে জটলা পাকিয়ে আছে। রিক্সাটা জটলার কাছে পৌছাতে একটি গানের আওয়াজ ভেসে আসলো।‘ জালিম শাহী যাবি কি না যাবি? আইয়ুব শাহী যাবি কি না যাবি ? বাঙ্গালীদের আর রক্ত নিবি?’ লুঙ্গিপরা,গায়ে ময়লা পানজাবি পরা উস্কো-কুস্কো চুলের মাঝ বয়েসী একজন লোক গান করছেন। পথচারীরা দাড়িঁয়ে শুনছেন। ধীরে ধীরে লোক ঝড়ো হতে থাকলো। লোকটি গান করেই চলেছেন। একটি এক তারা হাতে গান করছেন লোকটি। কাবেরী রিক্সাওয়ালাকে বললো,ভাই একটু দাড়াঁনা গান শুনি। এবার লোকটি দ্বিতীয় গান শুরু করলো, ‘ওরে ও বাঙ্গালী- তোদের খুনে ঢাকার শহর রক্তে ভাসাইলি।’ গান শেষে হওয়ার পর রিক্সাওয়ালাকে দিয়ে গায়ককে দশটা টাকা দিলো কাবেরী।
রিক্সায় প্যাডেল মারতে মারতে কাবেরীর দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে রিক্সাচালক রহিম কাবেরীকে প্রশ্ন করলো? আপা আজ কি আপনার আত্মীয়-স্বজন কেউ আহত হয়েছে? তাকে দেখতে যাচ্ছেন। আচ্ছা আপা শেখ সাব কি করেছে? লোকটাকে খানেরা বারবার জেলে নিচ্ছে ক্যান? আমি তো পল্টনে এক দিন তার ভাষন শুনেছি। তিনি তো সে দিন বললেন,পূর্ব বাংলার টাকা নিয়ে পশ্চিম পাকিস্তান তৈরি করা হচ্ছে। আমাদের এক দিস্তা কাগজের দাম বারো আনা পাকিস্তানে তার দাম চার আনা। তিনি তো আমাদের অধিকারের কথাই বললেন,তা হলে লোকটার দোষ কোথায়? আবার ছাত্ররা তার মুক্তির জন্য আন্দোলন করলে পুলিশ তাদের মারে,গুলি করে। জানেন আপা যে দিন পাকিস্তান হলো,আমাদের ময়মনসিং শহরে সে কি আনন্দ হয়েছিলো। মোনায়েম খান ভাষন দিয়েছিলো। বলেছিলো এখন থেকে আমরা মুসলমানরা স্বাধীন। এটা মুসলমানদের দ্যাশ। আমরা সবাই এখন থেকে সুখে-শান্তিতে থাকবো। কই আপা সুখ-শান্তি তো পাইলাম না। এখন দেখি আরো খারাপ,খানদের পুলিশেরা আমাদের পোলাপাইনগো পিডায়,মারে গুলি করে। তাইলে স্বাধীন হইয়া কি হইলো আপা। আমার ছেলেডারে স্কুলে ভর্তি করেছিলাম,এখন আর পড়াইতে পারি না,কাগজ-কলম কিনবার পারি না। ছেলেরে কইছি-বাজান আর পারুমনা না, কাম কইরা খাও। ব্যাটা মোনায়েম খাঁ-রে পাইলে কইতাম। খুব তো ভাষন দিয়াছিলা। মুসলমানগো দ্যাশ হইবো,সুখে-শান্তিকে থাববো। তাইলে এখন পশ্চিমারা আমাগো মারে ক্যান? আমরা ও তো মুসলমান। তয় আপা প্যাটে ভাত না থাকলে মুসলমানের দ্যাশই কি আর হিন্দুর দ্যাশই কি? সবই এক। জানেন আপা ওই যে পাগালা-পাগলা যে লোকটার গান শুনলেন,ওই লোকটা মাঝে মাঝে শহীদ মিনারে আসে,আমাদের গান শোনায়। গানের মাধ্যমে অনেক সত্যি কথা কইয়া দেয়। সে দিন একটা গান গাইছিলো,গানের সব কথা মনে নাই,তয় কয়েকটা কথা দিলে গাইথা আছে- ‘ওরা ধর্মের নামে,ইসলমামের নামে জোচ্চুরি করে পাকিস্তান বানাইয়া এখন মুসলমানদের মারে/ আবার বলে-বাঙ্গালীরা আসল মুসলমান নয়/ওদের মুখে এখন মারতে হবে ঝাটার বাড়ি।’ গানডারে খুব সত্যি মনে হয় রে আপা।’ যাক আপা অনেক কথা কইলাম। কিছু মনে কইরেন না। আমি মুখ্যসুখ্য মানুষ যা ঝুঝি তাই কই।
লেখক: লায়েকুজ্জামান, সিনিয়র সাংবাদিক